পরিষ্কার: দুর্গাপুরে দামোদর নদে মাছ ধরা। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে জেলার নদ-নদীগুলি এমন থাকবে তো, প্রশ্ন জেলাবাসীর একাংশের। ছবি: বিকাশ মশান
‘লকডাউন’-এর জেরে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় বর্জ্য জল দামোদর নদ কিংবা গাড়ুই ও নুনিয়া নদীতে পড়ছে না। ফলে, জেলার এ সব নদ-নদীতে দূষণ কমতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোল শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘লকডাউন’ ঘোষণার মাসকয়েক আগে আসানসোল পুরসভার সঙ্গে যৌথ ভাবে দামোদর নদ-সহ গাড়ুই ও নুনিয়া নদীর দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, বরাকরের একাধিক অঞ্চলে দামোদর নদের দূষণ মাত্রাতিরিক্ত। এ ছাড়া, কল্যাণপুর, রেলপাড়, ধাদকা এলাকায় গাড়ুই নদী ও কাল্লা, ব্লু-ফ্যাক্ট্রি, ঘাগরবুড়ি মন্দির, কালীপাহাড়ি অঞ্চলে নুনিয়া নদীর দূষণও অনেকটাই ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নদ-নদীর দূষণ কিছুটা হলেও কমতে পারে বলে মনে করছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুর-আধিকারিকেরা।
দুর্গাপুরে স্পঞ্জ ও পিগ-আয়রন, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ-সহ ইস্পাত অনুসারী নানা ধরনের শিল্প-কারখানা রয়েছে। এই সব কারখানা থেকে বায়ুদূষণ ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। তেমনই কারখানার বর্জ্য জল কখনও শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক খাত তামলায় মেশে। পরে তা বয়ে গিয়ে পড়ে দামোদরে। আবার কখনও নোংরা জল নালা দিয়ে বয়ে গিয়ে সরাসরি দামোদরের জলে মেশে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তামলা যেখানে দামোদরে মিশছে, সেখানে জলের রং থাকে কালচে।
একই ভাবে গাড়ুই ও নুনিয়া নদীর আশপাশে বহু ছোটখাটো কারখানা আছে। রয়েছে বহু মোটর গ্যারাজ। কারখানাগুলির বর্জ্য মিশ্রিত জল নিয়মিত এই সব নদীতে প্রবাহিত হয়। গ্যারাজে গাড়ি ধোয়ায় ডিজেল, পেট্রল মিশ্রিত জলও এই দুই নদীতে গিয়ে মেশে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় জলের কালচে ভাব বা জলে তেল ভাসতে দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন কারখানার বর্জ্য জল বয়ে যাওয়ার নালাগুলি শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে, দামোদরে কারখানার বর্জ্য জল আর মিশতে পারছে না। বর্তমানে এই নদ-নদীর দূষণের মাত্রা কত? সাধারণ হিসাবে দূষণের মাত্রা কমে যাওয়ার কথা বলে মনে করছেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকদের একাংশ। আসানসোল পুরসভার মেয়র পারিষদ (জল) পূর্ণশশী রায়ও বলেন, ‘‘লকডাউন চলছে বলে দূষণ কিছুটা কমেছে।’’
মঙ্গলবার কল্যাণপুর লাগোয়া গাড়ুই নদীতে স্নান করতে এসেছিলেন জনা কয়েক যুবক। তাঁরা জানান, নদীর জলে তেল ভাসছে না। কাচের মতো স্বচ্ছ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুরনো ছবি ফিরবে কি?
এই ‘লকডাউন’ থেকে শহরবাসীকে শিক্ষা নিতে হবে বলে মনে করেন আসানসোলের পরিবেশবিদ তথা পলিটেকনিক কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমৃতকুমার দাস। এই বিষয়ে পূর্ণশশীবাবু বলেন, ‘‘গাড়ুই ও নুনিয়া নদী সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। সেচ দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে সেই কাজ করবে পুরসভা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই কাজে হাত পড়বে।’’
পরিবেশবিদ জয়া মিত্র অবশ্য জানান, যমুনা নদীর জলের রং নীল হয়ে গিয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘শুধু দূষণ কমে গেলেই জলের রং নীল হতে পারে না। ওই নদীর আশপাশে যাঁরা থাকেন তাঁরা কিন্তু কেউ বলেননি, দূষণ কমে যাওয়ায় নদীর জলের রং নীল হয়ে গিয়েছে।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন-এর জেরে দামোদরে দূষণ হয়তো কমতে পারে। কিন্তু জল কোথায়? উৎসে জল নেই। পথে নানা জায়গায় জল তোলা হচ্ছে। ফলে, দূষণ কমলেও দামোদরে তার প্রভাব বোঝা মুশকিল।’’
যদিও দূষণ কমার চিত্র সাময়িক, বলে মনে করেছেন আসানসোল শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁরা জানান, গাড়ুই ও নুনিয়া নদীর বড় সমস্যা এদের গতি রোধ করে নির্মাণ তোলা ও বেশ কিছু এলাকায় নদীতে আবর্জনা ফেলা। যে কাজটি এখনও হয়েই চলেছে বলে অভিযোগ। ধাদকা, কাল্লা, ধাদকাপুল, ডিপোপাড়া, কশাই মহল্লা, মসজিদ মহল্লা, মুতসুদ্দি মহল্লা, হাজিনগর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ঘুরলেই দেখতে পাওয়া যাবে আশপাশের যাবতীয় আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। গাড়ুইয়ে এখনও নোংরা ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ জয়াদেবীরও।
এ প্রসঙ্গে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র জানান, ‘লকডাউন’-এ কর্মী সঙ্কটে রাজ্যের নদ-নদীগুলির দূষণ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গা নদী নিয়ে একটি সমীক্ষা শেষ হয়েছে সবে। দিন চারেকের মধ্যে রিপোর্ট মিলবে। রাজ্যের ১০৪টি জায়গা থেকে দূষণ নিয়ে সমীক্ষা করা হয়। লকডাউন-এ কাজে সমস্যা হচ্ছে।’’ পর্ষদের আসানসোল শাখার আধিকারিক অঞ্জন ফৌজদার বলেন, ‘‘লকডাউন মেটার পরে, নদ-নদীর দূষণ পরিমাপ করা হবে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy