বোরো ধানের আকাশে চিন্তার মেঘ দেখছেন চাষিরা। মঙ্গলবার সকালে গলসিতে ধানের খেত। ছবি: কাজল মির্জা
‘লকডাউন’ চলার কারণে ভিন্ রাজ্য থেকে আসতে পারবেন না বহু খেতমজুর। এই পরিস্থিতিতে বোরো ধান তোলার কাজ কী ভাবে করা যাবে, তা নিয়ে চিন্তা ছিলই চাষিদের। এর মধ্যে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেই চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়ে দিচ্ছে চাষিদের কপালে। কী ভাবে ধান ঘরে তোলা যাবে, সে নিয়ে ভাবনায় কৃষি দফতরের কর্তারাও।
ভিন্ রাজ্য থেকে খেতমজুরেরা যেহেতু আসতে পারবেন না, তাই যন্ত্রের সাহায্যে যতটা সম্ভব বেশি জমির ধান কেটে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল কৃষি দফতরের তরফে। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যে বার তিনেকের বৃষ্টিতে তেমন করা নিয়েও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। চাষিদের দাবি, বৃষ্টির জেরে জমিতে কাদা তৈরি হলে, যন্ত্র নামানো সম্ভব হবে না। ঝড়ের জেরে নুইয়ে পড়া ধানও যন্ত্র দিয়ে কাটা মুশকিল। জেলার অন্যতম সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘ধান ওঠার সময়ে ঝলমলে আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিছুটা চিন্তা বাড়াচ্ছে।’’
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় শিলাবৃষ্টিতে ভন্ডুল ২, নবস্থা ১ ও ২, কুরমুন ২-এর মতো কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় বহু জমিতে নুইয়ে পড়েছে ধানের গাছ। চাষিদের অভিযোগ, শিষ থেকে বহু ধান ঝরে পড়েছে জমিতে। বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ পরমেশ্বর কোনার এলাকার ন’টি পঞ্চায়েতে ধানে কম-বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি দফতরের কর্তাদের জানিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে থেকে বিভিন্ন এলাকায় ফের বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া। নবস্তার খাঁরগ্রামের অরূপকুমার প্রামাণিক, সোড্ডা এলাকার রাধারমন চন্দ্রেরা অভিযোগ করেন, কিছু জমিতে জলও জমে গিয়েছে। ফলে, বড়সড় ক্ষতি হতে পারে বলে তাঁদের দাবি। মেমারি, বড়শুল, শক্তিগড়ের অনেক চাষিও একই দাবি করেন।
গলসির খেতুড়া, মসজিদপুর, গলিগ্রাম, পুরসা, ধর্মপুর, জাগুলিপাড়া, শিড়রাই, পুরাতনগ্রাম, পোতনা, করকোনা, নবখণ্ড, রামগোপালপুর, লোয়া, সন্তোষপুর, বামুনাড়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় বোরো ধানের ফলন মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান চাষিরা। এ ছাড়া, বাদাম, আনাজ চাষেরও ক্ষতি হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। মন্তেশ্বরের চাষি রমেন ঘোষ দাবি করেন, ‘‘এ বার ধান কাটার জন্য ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকেরা আসেননি। এই পরিস্থিতিতে ভরসা যন্ত্রের মাধ্যমে ধান কাটা ও ঝাড়া। কিন্তু এ ভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলতে থাকলে ধান কাটার যন্ত্র কাদা-জমিতে নামানোই যাবে না। নুইয়ে পড়া ধান জমি থেকে কাটাও যন্ত্রের পক্ষে সহজ হবে না।’’
চাষিদের একাংশের আরও দাবি, এ বার জেলা জুড়ে বোরোর খেতে প্রচুর সাদা শিষ (যাতে শস্য থাকে না) দেখা গিয়েছে। তাই ফলন কমবে বলে তাঁরা মনে করছেন। কৃষিকর্তারা জানান, এ বার দেরিতে চাষ শুরু হওয়া, মাঝে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো নানা কারণে সাদা শিষের পরিমাণ বেশি। মেমারি ২ ব্লকের বাসিন্দা, জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইলের বক্তব্য, ‘‘আমার এলাকাতেও ফসলে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’’
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝড়-বৃষ্টিতে মেমারি ২ ও গলসি ১ ব্লকে ধান ও আনাজের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। বিশদে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কোন জমিতে ধান কী পর্যায়ে ছিল, তার উপরে ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করবে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy