Advertisement
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

রেশন থেকে ব্যাঙ্ক, ছায়ার খোঁজ লাইনে

করোনা-পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ মানুষজনই বাইরে বেরিয়ে অন্যদের থেকে দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছেন।

ব্যাগ, ঝোলা দিয়ে রেশনের লাইন রেখে ছায়ায় দাঁড়িয়ে ক্রেতারা, কাটোয়ায় (বাঁ দিকে)। বর্ধমানের ব্যাঙ্কেও ছায়ায় জিরিয়ে নেওয়া। নিজস্ব চিত্র

ব্যাগ, ঝোলা দিয়ে রেশনের লাইন রেখে ছায়ায় দাঁড়িয়ে ক্রেতারা, কাটোয়ায় (বাঁ দিকে)। বর্ধমানের ব্যাঙ্কেও ছায়ায় জিরিয়ে নেওয়া। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৩
Share: Save:

বেলা একটু গড়াতেই গনগনে রোদ মাথার উপরে। কিন্তু অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। কারণ, বাজার-দোকান, রেশন থেকে ব্যাঙ্ক— করোনা সংক্রমণ এড়াতে দূরত্ব রেখে একে-একে কাজ সারতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ছায়ার খোঁজে হন্যে হচ্ছেন অনেকেই। লাইনে অপেক্ষার সময়ে অদূরে সামান্য ছায়া দেখতে পেলেই তার তলায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। নিমেষে ভেঙে যাচ্ছে দূরত্ব রাখার নিয়ম। আবার ছায়ার ‘সঙ্গী’ হতে নানা জায়গায় নানা রকম আকার নিচ্ছে লাইন।

বর্ধমান শহরের কোর্ট চত্বরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পেনশনের টাকা নিতে এসেছিলেন তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা স্নেহলতা বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। বাঁচার তাগিদেই ছায়ায় এসে দাঁড়িয়েছি। শরীর খারাপ লাগলে কী আর এই সব দূরত্ব রাখার কথা মাথায় থাকে!’’ ব্যাঙ্কের তরফে চক দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ছায়ার খোঁজে অনেকেই সরে যাচ্ছিলেন সেই চকের বৃত্ত থেকে।

করোনা-পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ মানুষজনই বাইরে বেরিয়ে অন্যদের থেকে দূরত্ব রাখার চেষ্টা করছেন। অনেকে ছাতা নিয়ে বেরোচ্ছেন। কিন্তু রোদে অপেক্ষার ফাঁকে অনেক সময়ে সেই ছাতায় সঙ্গী হয়ে যাচ্ছেন একাধিক জন। তাপের চোটে শিকেয় উঠছে সুরক্ষা-বিধি। ছায়া পেলে সেখানেও দেখা যাচ্ছে একই ছবি। বর্ধমানের রাজবাটী ক্যাম্পাসে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে সওকত আলি খান, সুবীর দত্তগুপ্তেরা বলেন, ‘‘রোদের যা তেজ, তাতে এখন সব নিয়ম মানতে গেলে করোনা সংক্রমণের আগেই প্রাণ হারাতে হবে!’’

কাটোয়া বা কালনার নানা গ্রামে রেশনের দোকানে ভোর থেকে লাইন পড়ছে। বেলা যত বাড়ছে, লাইন ছায়ার খোঁজে এঁকেবেঁকে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় এক-এক সময়ে দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট দূরত্বে দেওয়া দাগে লাইন রেখেছে উপভোক্তাদের ব্যাগ। আর উপভোক্তারা এক সঙ্গে বসে বা দাঁড়িয়ে রয়েছেন কোনও ছাউনির নীচে। কাটোয়ার একটি রেশন দোকানে লাইন দিয়ে মিতালি দাস, শুভঙ্কর রায়েরা বলেন, “দু’ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এখনও কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে জানি না। তাই সবাই লাইনে ব্যাগ রেখে ছায়ায় দাঁড়িয়েছি।’’ আউশগ্রাম, ভাতারের বিভিন্ন জায়গায় রেশন বা গ্যাসের লাইন ছেড়ে গাছতলায় আড্ডা দিতে দেখা যায় উপভোক্তাদের একাংশকে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় না রাখলে তো বিপদের আশঙ্কা রয়েছে? গ্রাহকদের অনেকের বক্তব্য, ‘‘নিয়ম যে ভাঙা হচ্ছে, তা আমরা বুঝছি। কিন্তু মাথায় গনগনে রোদ নিয়ে কতক্ষণ আর লাইনে দাঁড়ানো যায়। তাই বাধ্য হচ্ছি।’’ কয়েকজনের আবার মন্তব্য, ‘‘ছায়া না সামাজিক দূরত্ব, কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, লাইনে দাঁড়িয়ে সেই প্রশ্ন উঠছে।’’

জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন। আমরাও নিবিড় প্রচারের উপরে জোর দিয়েছি।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy