সার দিয়ে রাখা যন্ত্র, বন্ধ তাঁতঘর। নিজস্ব চিত্র
বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া দিনভর তাঁতের খটাখট শব্দ শুনতেই অভ্যস্ত আমরা। এই ক’দিনে চারপাশ নিঃস্তব্ধ, শুকনো মুখ দেখে মনে হচ্ছে পাড়াটাই অচেনা হয়ে গিয়েছে।
নিজের তাঁত-ঘরে নানা ধরনের বালুচরি শাড়ি বুনি। এক-একটা শাড়ি বুনতে সময় লাগে এক থেকে দেড় দিন। মহাজন সেই শাড়ি কিনে মজুরি দেন। নতুন বরাতও দেন। শাড়ির গুণমান অনুযায়ী দু’শো থেকে চারশো টাকা মজুরি মেলে। তবে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পরেই ব্যবসা কমতে শুরু করেছিল। ‘লকডাউন’-এর পরে একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পূর্বস্থলীর ডাঙাপাড়া ও আশপাশের এলাকায় আমার মতো প্রায় ছ’হাজার তাঁতি রয়েছেন। পাওয়ারলুম আসার পরে, বড় ধাক্কা খেয়েছিলাম আমরা। তার পরে জিএসটি, নোটবন্দির সময়েও হস্তচালিত তাঁতে তালা পড়ার জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু কী একটা রোগের জন্য সত্যিই তালা পড়ে যাবে ভাবিনি।
দেশ জুড়ে ‘লকডাউন’ ঘোষণা হওয়ার পরেই, মহাজন জানিয়ে দেন, আপাতত আর শাড়ি কেনা হবে না। কারণ, রাজ্যের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ। ফলে, জিনিস পাঠানো, বিক্রি কোনওটারই লোক নেই। ভেবেছিলাম, দূরে পাঠাতে না পারলেও কাছাকাছি সমুদ্রগড়ের তাঁতের হাটে গিয়ে কিছুটা বিক্রি করতে পারব। কিন্তু তা-ও বন্ধ। আবার সুতোর জোগানও নেই, যে নতুন শাড়ি বুনব। মনে হচ্ছে, হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। কিন্তু যন্ত্র বন্ধ থাকলেও পেট মানছে না।
বাড়িতে ছ’জন সদস্য। আপাতত জমানো টাকা ভাঙিয়ে ডাল-ভাতের জোগাড় হচ্ছে। কিন্তু দিন সাতেকের বেশি চলবে না। তার পরে কী খাব, আর কী খাওয়াব, কে জানে! সরকারি রেশন পেলে তবেই বাঁচব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy