Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Calcutta High Court

ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়! তৃণমূল বিধায়ককে মামলায় যুক্ত করতে বলল কোর্ট

অপহরণ মামলায় পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীকে অভিযুক্তদের তালিকায় যুক্ত করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

কলকাতা হাই কোর্ট।— ফাইল চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্ট।— ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ২৩:১০
Share: Save:

অপহরণ মামলায় পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীকে অভিযুক্তদের তালিকায় যুক্ত করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। প্রায় ১০ মাস আগে ভাতারে এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার শ্যামাশিস হাজরাকে দিনের বেলা অপহরণ করে ‘মুক্তিপণ’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। পরে শ্যামাশিস এ নিয়ে কয়েকমাস আগে উচ্চ আদালতে মামলা করেছিলেন। সেই মামলাতেই আদালত এই নির্দেশ দিয়েছে। মানগোবিন্দের অবশ্য দাবি, ‘‘ওই ঘটনার সময় আমি এলাকাতেই ছিলাম না। এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।’’

ঘটনাটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে। ভাতার বাজারের কদমতলার বাসিন্দা শ্যামাশিস ও তাঁর এক সঙ্গী ব্যাঙ্ক আধিকারিক বাদশাহী রোড ধরে ভাড়া করা চারচাকা গাড়িতে চড়ে মঙ্গলকোটের কাশেমনগরের দিকে যাচ্ছিলেন। কাশেমনগরে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখায় তখন কর্মরত ছিলেন শ্যামাশিস। অভিযোগ, বাদশাহী রোডে মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড পার হতেই ছ’-সাত জন ওই গাড়িটি আটকান। দু’জন গাড়িতে উঠে পড়ে গাড়িটিকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে নিয়ে যেতে বাধ্য করেন। সেখানে শ্যামাশিস ও তাঁর সঙ্গীকে আটকে রাখা হয়। সঙ্গীকে পরে ছেড়ে দিলেও শ্যামাশিসকে আটকে মারধর করে চার লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করে তবেই ছাড়া হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মুক্তিপণের টাকাও উদ্ধার করা হয়।

সেই ঘটনার মাস দেড়েক পর মঙ্গলকোটের এক বধূ শ্যামাশিস হাজরার বিরুদ্ধে কাটোয়া আদালতে মামলা দায়ের করেন। বধূর দাবি, শ্যামাশিস জোর করে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে ওই ছবি দেখিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন শ্যামাশিস। অপহরণকাণ্ডে ধৃতদের দাবি, ওই মহিলা তাঁদের কাছে বিষয়টি জানানোর পর তাঁরা ব্যাঙ্ক ম্যানেজারকে শিক্ষা দিতে ও মোবাইল ফোনে বন্দি অশ্লীল ছবি-ভিডিয়ো মুছে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাঁকে তুলে নিয়ে এসেছিলেন। বধূর অভিযোগের ভিত্তিতে শ্যামাশিসকে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রায় দেড় মাস জেল হেফাজতে থাকার পর জামিনে ছাড়া পান শ্যামাশিস। এর পর তিনি কলকাতা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের কাছে তাঁর অভিযোগ ছিল, সেই সময় ভাতার থানার পুলিশ যথাযথ তদন্ত করেনি। এ ছাড়া অপহরণের ঘটনায় বিধায়ক তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন বিষয়টি নিয়ে আপস মীমাংসা করে নিতে।

উচ্চ আদালতের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত শুনানির সময় প্রশ্ন তোলেন, অপহরণের মামলায় মুক্তিপণ আদায় করা হলেও তার নির্দিষ্ট ধারা কেন যোগ করা হয়নি? অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? যদিও সরকারপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, ‘‘এটা রাজনৈতিক গন্ডগোল। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরেই বিধায়কের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’ দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি নির্দেশ দেন, মামলায় ভাতারের বিধায়কের নাম যুক্ত করতে হবে। পরবর্তী শুনানির সময় মামলার কেস ডায়েরি জমা করতে হবে।

শ্যামাশিস বলেন, ‘‘বিধায়ক আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন। তৃণমূলের এক ব্লক নেতাও একাধিক বার ফোন করে অপহরণের ঘটনায় ধৃতদের বাঁচাতে মামলা তুলে নিতে বলেছিলেন। তার অডিয়ো রেকর্ডিংও আমার কাছে আছে।’’ অন্য দিকে মানগোবিন্দ বলেন, ‘‘শ্যামাশিস হাজরা বিজেপির এক সক্রিয় কর্মী। এলাকায় সবাই সেটা জানেন। আমি ঘটনার দিন বিধানসভায় ছিলাম। রাজনৈতিক কারণেই মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।’’ এ বিষয়ে বিজেপির যুব মোর্চার বর্ধমান বিভাগের আহ্বায়ক সৌমেন কার্ফা বলেন, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা চাই অপহরণের মামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE