দূষণের জেরে গাছের সবুজ রং উধাও। আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী
দরজা-জানলা খোলা রাখলেই কালো হয়ে যায় আ-ঢাকা ভাত। পুকুরের জলে কার্বনের কালো স্তর। গাছের পাতার সবুজ রং কালো!— এই ‘কালো’য় ধুঁকছে আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ফুসফুস। নানা এলাকার বাসিন্দার সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অভিযোগ করেছেন, কলকারখানাগুলি নিয়ম না মানায় এমন দূষণ-চিত্র।
এই দূষণ কমাতে উদ্যোগী হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত সংস্থা ইস্কো স্টিল প্ল্যান্ট। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সতর্কীকরণ ঘোষণাকে মর্যাদা দিয়ে, ইস্কো কর্তৃপক্ষ পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু করতে উদ্যোগী হয়েছেন। কর্তৃপক্ষের দাবি, ইস্পাত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কার্বন নিরোধক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি, কারখানায় প্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহার কমানো-সহ আবাসন এলাকায় বিশেষ নজর চালানো হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাজ্যের ছ’টি শিল্পাঞ্চলকে অতিমাত্রায় দূষণ-প্রবণ বলে সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এগুলির মধ্যে অন্যতম আসানসোল শিল্পাঞ্চল। গত সপ্তাহে পর্ষদের তরফে আসানসোল পুরসভায় একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞেরা আসানসোল শিল্পাঞ্চলকে অতিমাত্রায় ‘দূষণ-প্রবণ’ বলে উল্লেখ করেন। এই শিল্পাঞ্চলে থাকা একাধিক সরকারি ও বেসরকারি শিল্পসংস্থা থেকে নির্গত দূষণের মাত্রা কমানোর উপরে জোর দেওয়া হয় ওই আলোচনাসভায়। বিশেষজ্ঞেরা ইস্পাত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কার্বন নিরোধোক প্রযুক্তি ব্যবহারেরও পরামর্শ দেন।
ইস্কো সূত্রে জানা গিয়েছে, পরামর্শ অনুযায়ী ইস্পাত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কার্বন নিরোধক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে আইআইটি মুম্বই-এর সঙ্গে ‘মৌ’ স্বাক্ষর করেছেন সংস্থা কর্তৃপক্ষ। ইস্কোর পক্ষে এই চুক্তিতে সই করেছেন এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (ওয়ার্কস) শিবাশিস বসু। এ প্রসঙ্গে ইস্কোর ডিরেক্টর ইনচার্জ ডি পি সিংহ মনে করেন, “পরিবেশ রক্ষা করতে এই প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে।” কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইস্পাত উৎপাদনের সময়ে প্রচুর পরিমাণে কার্বন নির্গত হয়, যা বাতাসে মিশে থাকে। তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে কার্বন বাতাসে মেশার আগেই তা সংগ্রহ করে নেওয়া হবে।
পাশাপাশি, বাতাসে কার্বনের মাত্রা কমাতে, প্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কারখানার ভিতরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোওয়াটের একটি সৌরবিদ্যুৎ ‘প্যানেল’ বসানো হয়েছে। সংস্থার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার জানিয়েছেন, এই প্যানেল বসানোয় এক দিকে যেমন পরিবেশ দূষণ কমবে, তেমনি প্রচলিত বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোয় প্রায় তিন লক্ষ টাকা বছরে সাশ্রয় হবে। ইস্কো আবাসন এলাকা বাস করা সংস্থার শ্রমিক-কর্মীদেরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যেমন, শহরের কোথাও ১২০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিক প্যাকেট ব্যবহার করা যাবে না। পচনশীল ও অপচনশীল ব্যবহৃত সামগ্রী আলাদা ভ্যাটে রাখতে হবে। পরে সাফাইকর্মীরা বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে সেগুলি নিয়ে যাবেন।
এ প্রসঙ্গে আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায় জানিয়েছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে পরিবেশ দূষণের বিষয়ে শিল্প সংস্থাগুলিকে সতর্ক করেছে। সেই মতো ইস্কো কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করায় শহরের একটি বৃহৎ এলাকাদূষণমুক্ত হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy