রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সমাজমাধ্যমে উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে দুর্গাপুরে গ্রেফতার করা হল এক প্রাক্তন রেলকর্মীকে। দুর্গাপুর আদালতের এক আইনজীবীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতে বাদল লস্কর নামে ওই ব্যক্তিকে ধরা হয়। তিনি সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে মন্তব্যে লিখেছিলেন, ‘এরপর দিদির গাড়িতে হামলা হবে, বেশি দেরি নেই।’ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হয়ে আইনি পদক্ষেপের দাবি তুলেছিলেন। ধৃতকে সোমবার দুর্গাপুর আদালতে তোলা হলে দু’দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর আদালতের আইনজীবী সুদীপ দেবনাথ অভিযোগ করেন, ওই ব্যক্তির এই মন্তব্যে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানহানি হয়েছে এবং এমন উস্কানিমূলক মন্তব্যের ফলে দুষ্কৃতীরা উৎসাহিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রাণহানি ঘটাতে হামলা চালাতে পারে। অভিযোগ পেয়েই ডিএসপি টাউনশিপের অশোক অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা বাদল লস্করকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ধৃতকে জেরা করে এই ধরনের মন্তব্যের কারণ বা নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে।
সুদীপের দাবি, ‘‘প্ররোচনামূলক মন্তব্যের জন্য রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর উপরে হামলা হতে পারে। তাই থানায় অভিযোগ করেছি।’’ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিএনএস ১৫২, ৩৫২, ৩৫৬ (২), ১৯৬ (১) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ডিসি (পূর্ব) ভিজি সতীশ পশুমার্থি বলেন, ‘‘ফেসবুকে প্ররোচনামূলক একটি মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ হয়। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘একটি মন্তব্যের জন্য এক জনকে জেল খাটানোর চেষ্টা হচ্ছে! মুখ্যমন্ত্রী কত জনকে গ্রেফতার করবেন? আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ধৃতকে যদি দ্রুত না ছাড়া হয়, বিজেপি মানুষকে নিয়ে রাস্তায় নামবে।’’ রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের পাল্টা দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উপরে আক্রমণ হতে পারে বলে কেউ মন্তব্য করতে পারেন, এটা আমার ভাবনাচিন্তার বাইরে। যাঁরা এই ধরনের আচরণ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে। যিনি এমন মন্তব্য করেছেন, যদি সত্যিই কোনও পরিকল্পনা তাঁর জানা থাকে, তা হলে নিশ্চয় পুলিশ তথ্য জোগাড় করে ব্যবস্থা নেবে।’’
আদালতে যাওয়ার পথে সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে ধৃত দাবি করেন, এই মন্তব্যের পিছনে তাঁর অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। তাঁর স্ত্রী শীলা বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানি না। কী লিখেছেন, তা-ও স্পষ্ট জানি না। উনি প্রবীণ মানুষ। শরীর ভাল নেই। পেসমেকার বসানো রয়েছে। কোনও দিন এ সবে থাকেন না। বাড়িতেই থাকেন সারা দিন। আমাদের আবেদন, তাড়াতাড়ি ওঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)