এই নদীতেই ঘটে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র
কালনা মহকুমার নদীঘাটগুলিতে নজরদারির হাল কেমন, মঙ্গলবার সকালে ফের তার প্রমাণ মিলল। মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েত এলাকার মড়াইপিড়ি গ্রামের বাঁকা নদীর ঘাটের কাছে নৌকাডুবির ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ১৭ জন যাত্রী। তবে তলিয়ে গিয়েছে কাঠের নৌকাটি। যাত্রীদের ৬টি সাইকেল এবং চারটি মোবাইলও নদীর তলায়। এই ঘটনায় প্রশাসনিক নড়চড়ার পরে জানা গেল, ওই ঘাটে নৌকায় যাত্রী পারাপারের অনুমোদনই নেই!
ফি-বছর আমনের মরসুমে ধানের চারা পোঁতার কাজ শেষ হলে অনেক খেতমজুরই কাজের জন্য মন্তেশ্বর-সহ জেলার বিভিন্ন ব্লকে যান। এ দিন সকালে মেমারি ২ ব্লকের বেলেডাঙা, হরিণডাঙা, মহেশপুর, সাহাজাদপুর, বিষ্ণুপুর থেকে এক দল খেতমজুর ধান চারা পোঁতার কাজ করার জন্য বাড়ি থেকে রওনা দেন। তাঁরা মেমারির রুকাশপুরে বাঁকা নদীর ঘাট থেকে একটি ছোট্ট নৌকায় ওঠেন। গন্তব্য ছিল জামনা পঞ্চায়েত এলাকা। মেমারি ২ ব্লকের বোহার ১ পঞ্চায়েতের প্রধান হাসমৎ মোল্লা বলেন, ‘‘নৌকা মড়াইপিড়ি ঘাটের কাছে পৌঁছনোর কিছুটা আগেই বিপত্তি ঘটে। নৌকায় কোনও কারণে জল ঢুকতে থাকে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান যাত্রীরা। তাঁরা নৌকা থেকে নদীতে লাফ দিতে শুরু করেন। নৌকা ঘাটের কাছে ডুবে যায়।’’
নৌকায় বেশ কয়েক জন মহিলাও ছিলেন। ঘটনার পর থেকে ঘাটে যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে পঞ্চায়েতের তরফে। এ দিন সাতসকালে নৌকাডুবির ঘটনা জানাজানি হতেই মড়াইপিড়ি ঘাটে জমায়েত হন বহু মানুষ। অনেকে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। তবে কোনও যাত্রী তলিয়ে গিয়েছেন কিনা, তা জানতে দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালানো হয়। উদ্ধারকাজে হাত লাগানো মড়াইপিড়ির রাজকুমার মণ্ডল, সঞ্জয় মণ্ডল, সৌরভ মণ্ডলদের কথায়, ‘‘ঘাট থেকে অল্প দূরেই নৌকাডুবি হওয়ায় যাত্রীদের জল থেকে তোলা সম্ভব হয়েছে। না হলে বড় বিপদ ঘটে যেত।’’
মহকুমার বহু নদীঘাটে যাত্রীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই এবং ওই সব ঘাটে বিপ্পজনক ভাবে নৌকা চলাচল করছে— সম্প্রতি এমন দাবিতে সরব হয়েছিল কালনা মহকুমা কংগ্রেস। দলের মহকুমা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনকে আগেই সতর্ক করেছি। এর পরেও ব্যবস্থা না হলে বিপদ অনিবার্য।’’ মহকুমাশাসক নীতিশ ঢালি বলেন, ‘‘ওই ঘাটে পারাপারের কোনও অনুমোদন ছিল না। ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ অনুমোদন ছাড়াই কী ভাবে এত দিন ওই ঘাটে নৌকায় যাত্রী পারাপার হয়েছে, সেই বিষয়টি জামনা এবং বোহার ১ পঞ্চায়েতের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হবে বলে এ দিন জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু।
স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য জানিয়েছেন, নৌকা ছাড়া তাঁদের গন্তব্যে যাতায়াতের উপায়ও নেই। আশপাশে ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও সেতু না থাকায় এই দুই নদীঘাটই ভরসা। শুধু খেতমজুরেরাই নন, দিনভর স্কুল, বাজার, ছানা বিক্রি-সহ নানা প্রয়োজনে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে এই নদী পারাপার করতে হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি ভাবে ঘাটটি পরিচালনা এবং দুই পাড়ের মধ্যে একটি পাকা সেতুর দাবি করে আসছেন নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা। আজ, বুধবার ফের ওই দাবিতে মেমারি ২ ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দেবেন এলাকার মানুষ। রাজকুমার জানান, এ দিনের ঘটনার পরে দুই ঘাটের মধ্যে পাকা সেতুর জন্য ফের আবেদন জানানো হয়েছে স্থানীয় বিধায়ক এবং বিডিও-র কাছে। তাঁরা ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছেন। হাসমৎ জানান, ঘাটটি সরকারি ভাবে অধিগ্রহণ করা হলে লাইফ জ্যাকেট সহ যাত্রীদের নিরাপত্তার দিকটিও দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy