যত দিন গড়়াচ্ছে, ভোটের মাধ্যমে বোর্ড গঠন, এমন পঞ্চায়েতের সংখ্যাটা বাড়ছে পশ্চিম বর্ধমানে। বুধবার রানিগঞ্জ ব্লকের বল্লভপুর ও এগারা পঞ্চায়েতে ভোটের মাধ্যমেই বোর্ড গঠন হয়েছে। উল্টো দিকে, এ দিন বোর্ড গঠনই হল না জেমারি পঞ্চায়েতে। গত কয়েক দিন ধরেই লাগাতার এমন ঘটনা সামনে আসায় দলীয় কোন্দলকেই দায়ী করেছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা, কর্মীরা। কাঁকসার গোপালপুরে আবার ভোটগ্রহণই অগণতান্ত্রিক ভাবে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বল্লভপুরের ১৫টি সংসদের ১৩টিই তৃণমূলের দখলে। এগারার ১৩টি সংসদের প্রতিটিতেই রয়েছে শাসক দল। তৃণমূল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতেই এই দু’টি পঞ্চায়েতে ভোটের মাধ্যমে বোর্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বল্লভপুরে দল মনোনীত প্রধান পদপ্রার্থী মল্লিকা খাঁ’কে হারান মমতা প্রসাদ নামে এক প্রার্থী। উপপ্রধান হিসেবে দল মনোনীত আশিস দাসও হেরে যান সিদান মণ্ডলের কাছে। এগারায় দল মনোনীত প্রধান পদপ্রার্থী রিনা দাস হারান কল্পনা গোপকে। উপপ্রধান পদে দল মনোনীত প্রার্থী রুমা বাউরি হারান মৌসুমী মণ্ডলকে।
গোলমাল শুরু হয় ১৪ সংসদের জেমারি পঞ্চায়েতে। বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই পঞ্চায়েত সদস্য জিতেন প্রামাণিক ও পাঁচু রুইদাসের মধ্যে বচসা শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, দু’জনেই ব্যালট ছিঁড়ে ফেলেন। এরপরে জিতেনবাবু-সহ আট জন পঞ্চায়েত সদস্য বিডিও-র কাছে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত পঞ্চায়েত সচিব-সহ অন্য আধিকারিকেরা নিরপেক্ষ নন বলে অভিযোগ করেন। আবেদন জানানো হয়, বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার। সেই আবেদন গ্রাহ্যও হয়। জিতেনবাবুর বক্তব্য, “এ দিন আট জন পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান হিসাবে শিল্পী মাজিকে চেয়েছিলেন। তার পরেও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করার জন্য পঞ্চায়েতের সচিব-সহ তিন জন আধিকারিক ঝর্ণা বাউরির নাম প্রধান হিসাবে ঘোষণার প্রস্তুতি নেন। তাতে আমরা রাজি হইনি।’’
এই ঘটনা সম্পর্কে রানিগঞ্জ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাবু রায়ের বক্তব্য, ‘‘কোনও রকম দ্বন্দ্ব এড়াতেই তিনটি পঞ্চায়েতে ভোটাভুটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এ বার সবপক্ষকে নিয়ে চলার প্রক্রিয়া শুরু হল।’’ এ দিন রানিগঞ্জ ব্লকের তিরাট, রতিবাটি, সালানপুরের জিতপুর উত্তরামপুর, সামডি, আছড়া, কল্যায় এবং বারাবনি ব্লকের পানুড়িয়া, পাঁচগাছিয়া ও জামগ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়েছে।
তবে এ দিন গোলমাল হয়েছে ২৫ সংসদের কাঁকসার গোপালপুর পঞ্চায়েতে। বুধবার গোপালপুর পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচন ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শাসক দলের বেশ কয়েক জন পঞ্চায়েত সদস্য অভিযোগ করেন, বিডিও (কাঁকসা) অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচন করেছেন। এই অভিযোগে ন’জন পঞ্চায়েত সদস্য বোর্ড গঠন থেকে বেরিয়েও পড়েন। পরে তাঁরা মহকুমাশাসকের (দুর্গাপুর) কাছে অভিযোগ জানান।
অঞ্জন চট্টরাজ নামে এক পঞ্চায়েত সদস্য জানান, বিডিও ভোটের ব্যবস্থা করেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে হাত তুলে ভোট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে পঞ্চায়েত সদস্যরা রাজি না হওয়ায় ব্যালটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গোপন ব্যালট না করে ভোট দানের পরে প্রকাশ্যে সেই ব্যালট এক সদস্যের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বলা হয়। এতে রাজি না হওয়ায় গোলমাল বাধে।’’ এর পরে ন’জন সদস্য বেরিয়ে যান। যদিও তার পরেও প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিডিও (কাঁকসা) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের আইন অনুযায়ী সব কাজ করা হয়েছে। গোপন ব্যালটে ভোট করার কোনও নিয়ম নেই।’’ মহকুমা শাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy