Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
Bridge collapse

সাঁকো ভেঙে বিপত্তি, পাকা সেতুর দাবিতে সরব বিধায়কেরা

আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে বাঁকুড়া জেলার প্রায় ২৫টি গ্রামের যোগাযোগে উন্নতির জন্য দামোদরে পাকা সেতু তৈরির দাবি বহু দিনের।

যে সেতু দিয়ে চলত পারাপার (বাঁ দিকে), সেই সতুর বর্তমান অবস্থা (ডান দিকে)।

যে সেতু দিয়ে চলত পারাপার (বাঁ দিকে), সেই সতুর বর্তমান অবস্থা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৪০
Share: Save:

প্রবল বর্ষণে শুক্রবার জলের তোড়ে ভেঙে যায় দামোদরের উপরে থাকা অস্থায়ী কাঠের সেতু। মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ায় বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে নদ। এই অবস্থায় বন্ধ রয়েছে খেয়া পারাপারও। ফলে, বিপাকে পড়েছেন দু’প্রান্তের কয়েক হাজার যাত্রী। ঘুরপথে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার বাড়তি পথ উজিয়ে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। বাসিন্দাদের এই দুর্দশার কথা তুলে ধরে দামোদরে একটি পাকা সেতু তৈরির দাবিতে বিধানসভায় সরব হয়েছেন বিজেপির দুই বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল ও চন্দনা বাউড়ি।

আসানসোল শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে বাঁকুড়া জেলার প্রায় ২৫টি গ্রামের যোগাযোগে উন্নতির জন্য দামোদরে পাকা সেতু তৈরির দাবি বহু দিনের। এ নিয়ে দুপ্রান্তের বাসিন্দারা অবস্থান-বিক্ষোভও করেছেন। কিন্তু কোনও পক্ষই এ নিয়ে উদ্যোগী হননি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। শুক্রবার প্রবল বৃষ্টির মধ্যে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়। তার পরে ভেঙে যায় সাঁকোটি। দামোদর ফুলেফেঁপে
থাকায় খেয়া পারাপারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বার্নপুর ইস্কোর কর্মী উত্তম
কর্মকার বলেন, ‘‘সেতু ভেঙে যাওয়ায় আট কিলোমিটার রাস্তা ঘুরপথে
এখন ৬৫ কিলোমিটার পেরোতে হচ্ছে। পাকা সেতু থাকলে এই দুর্ভোগ হত না।’’ আসানসোলের একটি কলেজের ছাত্র স্নেহাশিস রজক
বলেন, ‘‘এই কাঠের সেতু পেরিয়ে কলেজ থেকে ঈশ্বরদা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। এখন চার ঘণ্টায় পৌঁছচ্ছি।’’ এখানে পাকা সেতুর দাবি তুলে সরব হয়েছে ‘দামোদর বিহারিনাথ সেতুবন্ধন কমিটি’। পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের যৌথ ভাবে গড়ে তোলা এই কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা সুবল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রায় ১০ বছর ধরে পাকা সেতু নির্মাণের
দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। কিন্তু রাজ্য বা কেন্দ্র, কোনও সরকারই সদয় হচ্ছে না।’’

শুক্রবার সেতু ভাঙার পরে এই দুর্ভোগের কথা বিধানসভায় তুলেছেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁকে সমর্থন করেছেন বাঁকুড়ার শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউড়িও। অগ্নিমিত্রার দাবি, ‘‘প্রত্যেক বর্ষায় একই দশা হয় দুই প্রান্তের লক্ষাধিক বাসিন্দার। মানুষের রুজির পথ বন্ধ হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য প্রয়োজন হলে আমরা ব্যবস্থা করব। কিন্তু প্রথমে রাজ্য সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে।’’ শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনার অভিযোগ, ‘‘গত বছরও বিধানসভায় প্রসঙ্গটি তুলেছি। কিন্তু সরকাররে কোনও হেলদোল নেই।’’

২০২২ সালের ২৭ জুলাই দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে আয়োজিত প্রশাসনিক বৈঠকে একাধিক বণিক সংগঠনও পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়ার মধ্যে একটি পাকা সেতু তৈরির আবেদন জানান। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেতু কেন্দ্র তৈরি করবে। শুক্রবার অস্থায়ী
সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পরে ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক শচীন রায় বলেন, ‘‘পাকা সেতু তৈরি হলে পশ্চিম
বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মধ্যে যোগাযোগ উন্নত হবে। বাণিজ্যের উন্নতি হবে।’’

দামোদরের এই অংশ বাঁকুড়া জেলার অধীনে পড়ে। বার্নপুরের ভূতাবুড়ি ঘাট থেকে খেয়া পারাপারের জন্য শালতোড়া ব্লক প্রশাসন প্রতি বছর নিলাম ডাকে। এ বার নিলামে বরাত পেয়েছেন শালতোড়ার বাসিন্দা প্রবীর চক্রবর্তী। তিনি জানান, মানুষজন খেয়া পারাপার করতে চান না। তাই তিনিই অস্থায়ী সেতুটি তৈরি করেছিলেন। মোটরবাইক, টোটো, অটো থেকে ছোট গাড়িও এই সেতু দিয়ে চলত। সে জন্য নির্দিষ্ট হারে টোল আদায় করা হত। সেতু নিশ্চিহ্ন হওয়ায় সেই পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol Heavy Rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE