Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

‘গোঁজ’ প্রার্থী ২৪, ব্যবস্থা শাসক দলে

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৩৩টি আসনে তৃণমূলের ৯৮৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। দলের নেতারা দাবি করেন, ফর্ম পূরণ বা পদ্ধতিগত ত্রুটিতে গোলমালের জেরে কিছু মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ঝুঁকি নেওয়া হয়নি।

সুব্রত সীট ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী
দুর্গাপুর ও জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:৩৫
Share: Save:

বহু আসনেই কোনও বিরোধী প্রার্থী নেই। জেলার বেশির ভাগ পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি ভোটের আগেই জেতা নিশ্চিত করে ফেলেছে তৃণমূল। তবে বিরোধীদের অনেকে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নিলেও রয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের নামে মনোনয়ন জমা দেওয়া ২৪ জন ‘গোঁজ’ প্রার্থী। যা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে দল। জামুড়িয়ায় কোন্দলে জড়িত অভিযোগে দলের তিন কর্মীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৩৩টি আসনে তৃণমূলের ৯৮৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। দলের নেতারা দাবি করেন, ফর্ম পূরণ বা পদ্ধতিগত ত্রুটিতে গোলমালের জেরে কিছু মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। স্ক্রুটিনি শেষে দেখা যায়, পঞ্চায়েতে ১৭টি মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। ফলে, ১৩৮টি মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর দরকার ছিল।

তৃণমূল সূত্রের খবর, স্ক্রুটিনির ফল জানার পরেই আসানসোলে দলের জেলা নেতৃত্ব বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, গোঁজ প্রার্থীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে ‘কড়া’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু শনিবার প্রত্যাহার পর্ব শেষে দেখা যায়, ১১৪ জন মনোনয়ন তুলে নিলেও ২৪ জন তা করেননি। ইতিমধ্যে জেলার ৬২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪০টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত তৃণমূলের। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহার না করা ওই প্রার্থীরা অস্বস্তিতে ফেলেছেন দলের নেতাদের।

তৃণমূলের নানা সূত্রের খবর, দলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নানা এলাকায়। দলের আলাদা গোষ্ঠী আলাদা ভাবে প্রার্থী দিয়েছে। দলীয় নেতৃত্ব যাঁকে প্রতীক দিয়েছেন, তিনি তৃণমূলের হয়ে লড়বেন। অন্য জন থাকবেন নির্দল হিসেবে। শুধু জামুড়িয়া ব্লকেই পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের বাড়তি ৬৫টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ৫৪ জন প্রত্যাহার করে নিলেও ১১ জন রয়ে গিয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “জামুড়িয়ায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। যে নেতারা নির্দল প্রার্থীদের দাঁড়াতে সহযোগিতা করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তিন জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

কাঁকসা পঞ্চায়েতের একটি আসনে তৃণমূলের হয়ে মনোনয়ন জমা দেন ধর্মেন্দ্র শর্মা ও জিতেন্দ্র পাসোয়ান। ধর্মেন্দ্র দাবি করেন, ‘‘দল মনোনয়ন দিতে বলেছিল। পরে আর এক জনকে প্রার্থী করা হয়। আমি নির্দল হিসেবে রয়েছি।’’ আর একটি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন রিঙ্কু সিংহ ও জগদীশ সিংহ। দল জগদীশকে প্রতীক দিয়েছে। নির্দল হিসেবে রয়েছেন রিঙ্কু। একটি আসনে তৃণমূল প্রার্থী অনিমা বর্মনের বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে লড়বেন দলেরই কর্মী বলে পরিচিত নির্দল প্রার্থী সঙ্গীতা সরকার। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, অনিমাদেবীকে গত বিধানসভা ভোটেও সিপিএমের প্রচারে দেখা গিয়েছে। অনিমাদেবীর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

শিবদাসন আরও জানান, জেলায় ১১টি পঞ্চায়েতে বিরোধী দলগুলির কোনও প্রার্থী না থাকলেও কোথাও একটি, কোথাও দু’ট়ি সংসদে নির্দল প্রার্থী রয়ে গিয়েছেন। ‘গোঁজ’ প্রার্থীদের হ্যান্ডবিল ছড়িয়ে দলের আসল প্রার্থীকে সমর্থনের কথা প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। শিবদাসন দাবি করেন, “প্রায় অর্ধেক নির্দল প্রার্থী আমাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁরা লড়াইয়ে নামবেন না। দলের প্রচারেই যোগ দেবেন। তাঁদের হ্যান্ডবিল ছেপে প্রচার করতে বলা হয়েছে।’’ দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা দলকে ভালবাসেন তাঁরা নিশ্চয়ই নির্দেশ মানবেন। না মানলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE