তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বাবাকে মারধর, খুনের চেষ্টার ঘটনায় বর্ধমান ১ ব্লকের দলীয় নেতৃত্ব স্থানীয় ১৩ জনকে সাজা দিয়েছেন বিচারক। বর্ধমান ১ ব্লক সভানেত্রী কাকলি তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শুক্রবারই তিনি জামিনও পান। কিন্তু কাকলির ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত ব্লকের যুব সভাপতি মানস ভট্টাচার্য, রায়ান ১ অঞ্চল সভাপতি জামাল শেখ ও রায়ান ১ পঞ্চায়েত প্রধান কার্তিক বাগ-সহ বাকি ১২ জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়। এই রায়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। ভোটার তালিকা-সহ দলের অন্য কর্মসূচিতে গিয়ে দলকে যে ‘বেকায়দায়’ পড়তে হবে, তা মেনে নিচ্ছেন বিভিন্ন স্তরের নেতারা। কাকলির ‘বিরোধী’ বলে পরিচিত তৃণমূল নেতারাও সরব হয়েছেন।
২০১২ সাল থেকে দেওয়ানদিঘির বাসিন্দা কাকলি বর্ধমান ১ ব্লক তৃণমূলের সভানেত্রী। ক্যানসার আক্রান্ত কাকলি মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বর্ধমান ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও। কাকলির বাবা কাশীনাথ তা কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। তিনি ১৯৮২ সালের ১১ অগস্ট খুন হন। বর্ধমান উত্তরের প্রাক্তন বিধায়ক, সিপিএমের প্রদীপ তা ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি খুন হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় কাকলির নিকট পরিজনদের নাম জড়িয়েছিল। যদিও সিআইডি চার্জশিটে তাঁদের নাম বাদ পড়ে। কিন্তু দলীয় কর্মীকে মারধর ও হত্যার চেষ্টার ঘটনায় কাকলি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবেন, তা মানতে পারছেন না তাঁর পরিজনেরা। এ দিন বর্ধমান আদালতে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিকের সামনেই কাকলির এক আত্মীয় বলেন, “উনি এই সব ঘটনায় যুক্ত, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।” দলের অনেক নেতারও একই দাবি।
আবার মানস, জামাল, কার্তিককে নিয়ে দলেই ‘অন্য সুর’। আদালতে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েক জন বলেন, “কার্তিকের সঙ্গে রায়ান পঞ্চায়েতের সদস্য জীবনের লড়াই। কার্তিকের হয়ে মারপিট করতে সে দিন জামাল, অনুপকুমার মণ্ডলেরা গিয়েছিলেন। তাতেই জীবনের বাবা দেবু পাল জখম হয়ে চোখ হারান।” সাজা ঘোষণার পরেই অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেক তৃণমূল কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ‘জামিন পেলেও কাকলিদি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এ বার মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়বেন। তাঁর ঘনিষ্ঠরাও জেলে চলে গেলেন। ব্লক চালানো তৃণমূলের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে’। এক মহিলা নেত্রীর কথায়, “মানস-জামালরাই ব্লক নিয়ন্ত্রণ করত। দলের নানা কর্মসূচি করত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা যাচাই করার পরিকাঠামো তৈরি করেছিল। ধাক্কা গুছিয়ে উঠতে সময় লাগবে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন বলেন, “তৃণমূল করলেও যে ছাড় পাওয়া যাবে না, এই ঘটনায় প্রমাণিত। এ ধরনের রায়ে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা বাড়বে।’’ বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অভিজিৎ তায়ের কটাক্ষ, “তৃণমূল নিজেরাই নিজেদের হাতে আক্রান্ত। তাহলে ভোট পরবর্তী হিংসায় আমাদের কী হয়েছে, বুঝতে পারছেন।” কাকলি-বিরোধী নেতা বলে পরিচিত, জেলা পরিষদের প্রাক্তন তৃণমূল সদস্য নূরুল হাসান বলেন, “কবে থেকে বলে আসছি, পুরনো কর্মী বা নেতারা আক্রান্ত। তাঁরা ভয়ে বসে গিয়েছেন। এই ঘটনায় সেটাই বোঝা গেল।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বা এই রায়ের ফলে সংগঠনে কোনও সমস্যার কথা মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, “ওই ব্লকে আমাদের দল খুবই শক্তিশালী। সাংগঠনিক কাজ করার জন্য অনেকে রয়েছেন। দলীয় কর্মসূচিতে কোনও প্রভাব পড়বে না।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)