চলছে ধান বাছাই পর্ব। — ফাইল চিত্র।
গত মরসুমের (নভেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর) চেয়ে রাজ্যে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার গতি তুলনামূলক ভাবে ভাল। অথচ রাজ্যের শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে চাষিদের সে ভাবে ধান্যক্রয় কেন্দ্রে দেখা যাচ্ছে না। জেলা খাদ্য দফতরের দাবি, গত মরসুমের চেয়ে ১০ হাজার বেশি চাষি ধান বিক্রি করলেও ১৭ হাজার টন ধান সরকারের ঘরে কম ঢুকেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকেই সবচেয়ে বেশি ধান সরকারের ঘরে ঢোকে। সেই জেলার হাল-হকিকত দেখতে সোমবার আসেন খাদ্যসচিব পারভেজ সিদ্দিকি ওহ অন্য আধিকারিকেরা। তাঁরা বেশ কয়েকটি ধান্যক্রয় কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। বিকেলে জেলা প্রশাসন, খাদ্য দফতর ও চালকল সংগঠনের সঙ্গে খাদ্য সচিব বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘‘সহায়ক মূল্যে ধান কেনা ভাল চলছে। গত মরসুমের চেয়ে এই সময়ের মধ্যে ধান কেনা বেশি হয়েছে। তার পরেও পুনর্মূল্যায়ন বৈঠক করলাম।’’ বৈঠকে জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা ছাড়াও খাদ্য দফতরের অন্যতম শীর্ষ কর্তা দেবীপ্রসাদ করণম হাজির ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানের ধান কেনার গতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খাদ্য সচিব। তিনি জানতে চান, গত মরসুমের চেয়ে রাজ্যে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার পরিমান এখনও পর্যন্ত বেশি। এ বছর রাজ্যে ৩১ লক্ষ টনের বেশি ধান কেনা হয়ে গিয়েছে। সেখানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার গতি কমে গেল কেন? খাদ্য দফতরের রিপোর্ট (৩১ জানুয়ারি) অনুযায়ী, গত মরসুমে জেলায় ২,৮৩,২৭২ টনের বেশি ধান কেনা হয়েছিল। অথচ চলতি মরসুমে ওই সময়ের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার টন ধান কেনা কম হয়েছে। গত বছর ৯২ হাজার চাষির কাছ থেকে ওই ধান কিনেছিল খাদ্য দফতর। এ বার সেখানে ১০ হাজার বেশি চাষির কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে। বৈঠকে হাজির থাকা চালকল মালিকদের সংগঠন বর্ধমান রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক খাদ্য দফতরের নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার এক জন চাষির কাছ থেকে ৪৫ কুইন্টাল ধান কেনার নির্দেশ দিয়েছিল। খাদ্য দফতর সেখানে ৩০ কুইন্টাল পর্যন্ত ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে এক জন চাষি ট্রাক ভাড়া করে ধান্য ক্রয় কেন্দ্র পর্যন্ত ধান নিয়ে আসতে অনীহা দেখাচ্ছিলেন। খরচ পোষাচ্ছিল না চাষির। এখন ফের ৪৫ কুইন্টাল ধান কেনার কথা বললেও খোলা বাজারে ধানের দাম বেড়ে গিয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রের দাবি, সহায়ক মূল্যে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ২০৪০ টাকা। সেখানে খোলা বাজারে কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ১৮৭০ থেকে ১৯০০ টাকা। তার পরেও বিভিন্ন কিসান মান্ডিতে চাষিদের দেখা নেই। খাদ্য দফতরের রিপোর্ট বলছে, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জেলায় ১৭,৮৬৩ জন চাষি ধান বিক্রি করেছেন (লক্ষ্যমাত্রার ৮১.৭৯ শতাংশ), সেখানে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮০৪১ জন চাষি ধান বিক্রি করেছেন (লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ)। চাষি ফরিয়াদ মল্লিক, জীবন পোড়েল, অনুপম সামন্তদের দাবি, ডিসেম্বরে খোলা বাজারে ধানের দাম ছিল প্রায় সাড়ে সতেরোশো টাকা কুইন্টাল। তখন সরকারি দাম দু’হাজার টাকার বেশি থাকায় অনেক চাষি কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে খোলা বাজারে ধানের দাম কুইন্টাল প্রতি প্রায় দু’হাজার টাকায় পৌঁছেছে। এ ছাড়াও চলতি মরসুমে নিয়ম ছিল, এক জন চাষি সর্বোচ্চ ৩০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন। তাতে ট্রাক ভাড়া অনেক বেশি হচ্ছিল। সেই কারণেই চাষিরা সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে চাইছেন না। জেলার খাদ্য নিয়ামক অসীম নন্দী বলেন, ‘‘জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ধান সংগ্রহের পরিমান বেড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy