দুর্গাপুরের অটো স্ট্যান্ডে ভিড়। ছবি: পাপন চৌধুরী।
ধর্মঘট রয়েছে, তা জানা ছিল। কিন্তু কোনও বাস পথে নামবে না, এমনটা আশা করেননি অনেকেই। মঙ্গলবার সকালে রাস্তায় বেরিয়ে তাই রীতিমতো দুর্ভোগে পড়লেন যাত্রীরা। দুপুরের পরে কিছু বাস চলতে শুরু করলেও ততক্ষণে অটোয় বেশি ভাড়া গুনে অথবা ট্রেনে গাদাগাদি করে গন্তব্যে রওনা হয়ে গিয়েছেন বেশিরভাগই।
সিটুর ডাকা এই বাস ধর্মঘটে সকাল থেকেই বাস চলাচল বন্ধ ছিল দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ থেকে আসানসোলে। সকালে কোনও রুটেই বড় বাস ও মিনিবাস চলতে দেখা যায়নি। আসানসোল সিটিবাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বহু যাত্রী এসেছেন বাসস্ট্যান্ডে। কিন্তু কোনও বাসের চাকা গড়াচ্ছে না। অগত্যা অটো ও ছোট যাত্রিবাহী গাড়ির দ্বারস্থ হন অনেকে। কেউ-কেউ অটোয় করে আসানসোল স্টেশনে দৌড়ন ট্রেন ধরতে।
সকালে দুর্গাপুরের বেনাচিতির প্রান্তিকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গিয়েছে, দু’একটি মিনিবাস শুরুতে চললেও বড় বাস সকাল থেকেই বন্ধ। পরে মিনিবাসও বন্ধ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে শ’দুয়েক বড় বাস ও প্রায় তিনশো মিনিবাস ধর্মঘটে সামিল হয়। যাত্রীরা অনেকে বাড়ি ফিরে যান। সময়মতো কলেজে পৌঁছতে পারেননি বহু পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমেস্টারের পরীক্ষা চলছে। বিপাকে পড়েন পরীক্ষার্থীরা।
কুলটির নিয়ামতপুর মোড় বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, চিত্তরঞ্জনে যাওয়ার জন্য কয়েকশো যাত্রী অপেক্ষা করছেন। বাস না পেয়ে অটোয় বাদুড়ঝোলা হয়ে চলেছেন তাঁরা। পঞ্চায়েতের কর্মী প্রিয়তোষ সরকার বলেন, ‘‘বাস ধর্মঘটের কথা জানতাম। কিন্তু কোনও বাস চলবে না, বুঝতে পারিনি!’’ রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এ দিন ভোরে কিছু কর্মী মিনিবাস চালাতে চাইলে অন্য কর্মীরা বাধা দেন বলে অভিযোগ। পুলিশ এবং আইএনটিটিইউসি-র উদ্যোগে চারটি বাস রাস্তায় নামলেও পরে সেগুলি বন্ধ হয়ে যায়। রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, অণ্ডালে যাতায়াতে সমস্যা হয়।
মঙ্গলবার আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ড। ছবি: বিকাশ মশান।
সুযোগ বুঝে এ দিন অটোচালকেরা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিয়েছেন বলে অভিযোগ। নিয়ামতপুর মোড় থেকে ডাবর যেতে অন্য দিন যেখানে অটো ১৫ টাকা ভাড়া নেয়, সেখানে এ দিন ২৫ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে জানান অনেকে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেও অটোচালকেরা কান দেননি বলে তাঁদের দাবি। অটোর বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বার্নপুর, চিনাকুড়ি, পাঁচগাছিয়া, বরাকর ও আসানসোলের নানা রুটেও। দুর্গাপুরেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে যাত্রীরা জানান। তাঁদের আরও অভিযোগ, রুটের অটোগুলির একাংশ এ দিন ‘রিজার্ভ’ যেতে শুরু করে। ফলে, সমস্যা আরও বাড়ে।
বেলা গড়ানোর পরে প্রশাসনের তরফে বাস মালিকদের বাস চালানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। আসানসোল মহকুমায় দুপুর থেকে মিনিবাস চলতে শুরু করে। মহকুমা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘সকালে চালকেরা রাস্তায় নামতে চাননি। পরে প্রশাসনের অনুরোধে বাস চলেছে।’’ বড় বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রকাশ মণ্ডল জানান, সকালে দুর্গাপুর থেকে বরাকর ও চিত্তরঞ্জন রুটে কোনও বাস চলেনি। বিক্ষিপ্ত ভাবে বার্নপুর-সহ আরও কিছু রুটে বাস চলেনি। তবে দুপুরের পরে প্রায় সব রুটেই বাস চলেছে। কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের।
ধর্মঘটের জেরে যাত্রীদের হয়রানি নিয়ে সিটু নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কেন্দ্র যে মোটর ভেহিকেল বিল আনতে চলেছে তা জনবিরোধী। এ ভাবে গাড়ি চালকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় না। এর পরে যদি চালকেরা গাড়িই না চালাতে চান তবে তো সাধারণ যাত্রীরাই ফাঁপরে পড়বেন।’’ এ দিন ধর্মঘট পালন করায় চালকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। দুর্গাপুরের আইএনটিইউসি নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কোনও বাস পথে নামেনি। ধর্মঘট সফল হয়েছে।’’
এ দিন ধর্মঘটের বিরোধিতা করেছে আইএনটিটিইউসি। তবে আগে থেকে এর বিরুদ্ধে তারা কোনও প্রচার করেনি বলে যাত্রী ও বাসকর্মীদের একাংশের দাবি। সংগঠনের জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল দাবি করেন, ‘‘সকালে আমি রাস্তায় বেরিয়ে দেখেছি, বাস চলছে। তাই সংগঠনে কর্মীদের সে ভাবে রাস্তায় নামার প্রয়োজন পড়েনি।’’ যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘জেলায় দলের বাসকর্মী সংগঠন আমরা এখনও তৈরি করে উঠতে পারিনি। সে জন্য এ দিন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এক মাসের মধ্যে ওই সংগঠন তৈরি করে ফেলা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy