দামোদরের কিনারায় রামেশ্বর শিবমন্দির। নিজস্ব চিত্র।
ইতিমধ্যেই চাষের বহু জমি চলে গিয়েছে দামোদরের গর্ভে। অনেক বাড়িও গিলে খেয়েছে দামোদর। গলসি ১ ব্লকের সীমাসিম গ্রামের বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যে কোনও সময় নদের গর্ভে তলিয়ে যাবে প্রাচীন স্থাপত্যের নিরর্শন রামেশ্বর শিবমন্দির।
নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আক্ষেপের সুরে গ্রামবাসী দীনবন্ধু দাস বৈরাগ্য বলেন, “ওই যে দেখছেন, ওই জায়গায় নদীর মাঝে চাষের জমি ছিল। এখন সবই নদীর গর্ভে। মন্দিরটাও কোনও দিন চলে যাবে।’’ গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে দামোদরের উত্তর তীরে রয়েছে মন্দিরটি। বাঁধ থেকে সেটির দূরত্ব ৫০ মিটার। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দাদের দাবি, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে তৈরি হয় মন্দিরটি। সেটি ঐতিহ্য।
এখন নদের কিনারায় ঝুলছে ২৫ ফুট উচ্চতার আটচালা মন্দিরটি। সেটির সামনের অংশে দু’টি পূর্ণ স্তম্ভ ও দু’টি অর্ধ স্তম্ভ রয়েছে। মন্দিরের প্রবেশ পথের উপরের দিকের কেন্দ্র স্থলে রয়েছে একটি গণেশের মূর্তি। তার দু’পাশে রয়েছে পোড়ামাটির তৈরি দু’টি টিয়াপাখি, ফুল, লতাপাতা। গ্রামবাসী জানান, মন্দিরের নীচে মাটির একাংশ কয়েক বছর আগেই নদের গর্ভে চলে গিয়েছে। চার দিকে প্রাচীর নির্মাণের পরে মাটি ভরে মন্দির রক্ষার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। সেই প্রাচীরই এখন বড় ভরসা। কোনও রকমে টিকে রয়েছে মন্দিরটি। তবে কত দিন টিকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে এলাকাবাসীর।
এখনও প্রত্যেক দিন পুরোহিত পুজো করেন মন্দিরে। প্রত্যেক বছর চৈত্র মাসের শেষে রামেশ্বর শিবের গাজন হয়। গ্রামবাসীর দাবি, ভাঙন প্রতিরোধে প্রশাসন পদক্ষেপ করেছে ঠিকই, কিন্তু ভাঙন আটকানো যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ গৌরাঙ্গ সরকার বলেন, “এ বছর বর্ষায় নদীর স্রোতের ধাক্কায় মন্দিরে কাছে মাটিতে ধস নেমেছে। গার্ডওয়াল না থাকলে মন্দিরটি ধসেই যেত।’’ তাঁর অভিযোগ, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আচমকা জল ছাড়ে। তার জন্যই মন্দিরের এই হাল। কার্যত ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে এই প্রাচীন স্থাপত্য, অভিযোগ গৌরাঙ্গের। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য নিয়ম মেনে জল ছাড়া হয় বলে অতীতে বারবার দাবি করেছে।
সম্প্রতি সেচ দফতর দামোদরের ভাঙন প্রতিরোধে উদ্যোগী হয়েছে। দামোদরের পাড়ে বহু জায়গায় তারের খাঁচার মধ্যে পাথর ভরে ভাঙন আটকানোর কাজ হয়েছে। সীমাসিমিতেও পাথর ফেলা হয়েছে। কিন্তু পাথরের উপর দিয়ে বইছে দামোদরের জল। ফলে পাড়ের ভাঙন চলছেই, জানাচ্ছেন গ্রামবাসী। স্থানীয় বিধায়ক নেপাল ঘরুই বলেন, “গ্রামবাসী যাতে ভাঙনের কবল থেকে বাঁচেন, প্রাচীন মন্দিরটিও যাতে রক্ষা পায়, সেই ব্যবস্থা করার জন্য সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপের চেষ্টা করব।” বিডিও (গলসি ১) জয়প্রকাশ মণ্ডল বলেন, “প্রাচীন মন্দিরটি নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy