দুর্গাপুরের জঙ্গলে হাতি। বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
রাতে বাড়ি ফেরার জন্য পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে ছিলেন তিন জন। বারান্দায় পা রেখেই প্রাণ যাওয়ার জোগাড়। সামনে দাঁড়িয়ে হাতি।
দুর্গাপুরের বীরভানপুরে পড়িমরি আবার অফিসে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। কিন্তু তাতেও স্বস্তি নেই। টিনের চালের এক কামরার পার্টি অফিস ভেঙে ফেলতে পারে হাতি। আতঙ্কে তাই আলো নিভিয়ে বসে থাকেন বাসুদেব আঁকুড়ে, সমীর মাজি, বাপি পালেরা। অনেকক্ষণ পরে বাইরে লোকজনের আওয়াজ শুনে বোঝেন, হাতি চলে গিয়েছে।
শুক্রবার রাতে পার্টি অফিসের সামনে হাজির হওয়ার আগে হাতিটি আছড়ে মেরে ফেলে এক প্রৌঢ়াকে। দুর্গাপুরের বিদ্যাসাগর পল্লির বাসিন্দা দুর্গা বিশ্বাস (৫৪) রাতে পাশের পাড়ায় কীর্তন শুনে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় হাতির সামনে পড়ে যান। শুঁড়ে তুলে তাঁকে আছাড় মারে হাতি। শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে তাঁর মৃত্যু হয়। এর পরে বীরভানপুর ঘুরে দামোদর পেরিয়ে হাতিটি চলে গিয়েছে বাঁকুড়ায়। তবে তার দুই সঙ্গী শনিবার রাত পর্যন্ত দুর্গাপুরেই রয়েছে বলে বন দফতর জানায়।
২ ফেব্রুয়ারি বীরভূমের ভীমগড় জঙ্গল থেকে অজয় পেরিয়ে তিনটি হাতির একটি দল ঢুকে পড়ে পাণ্ডবেশ্বরের রামনগরে। তাদের হামলায় সেখানে বেশ কয়েকজন জখম হন। মৃত্যু হয় এক জনের। বনকর্মী ও বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে হাতি তিনটি আলাদা হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাদের মধ্যে একটি ঢুকে পড়ে দুর্গাপুর শহরে। গোপালমাঠ হয়ে পৌঁছে যায় দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি)। জখম করে দু’জনকে।
বন দফতর সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে হুলা পার্টি ও বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে হাতিটি ওয়ারিয়া হয়ে ডিপিএল কলোনিতে ঢুকে পড়ে। ডিপিএল হাসপাতালের পাশ দিয়ে রাত ১০টা নাগাদ বীরভানপুরের দিকে যাচ্ছিল সেটি। তখনই দুর্গাদেবী হাতির সামনে পড়ে যান। তাঁকে আছাড় মেরে সেটি এগোয় বীরভানপুরের তৃণমূল পার্টি অফিসের দিকে। তৃণমূল কর্মী বাসুদেববাবু বলেন, ‘‘সামনে হাতি দেখে আমাদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার দশা।
কী করব বুঝতে পারছিলাম না। দমবন্ধ করে কতক্ষণ বসেছিলাম জানি না। বাইরে লোকজনের গলা শুনে বেরিয়ে দেখি, হাতি পালিয়েছে।’’
গ্রামবাসীরা জানান, হাতিটিকে দামোদরের দিকে যেতে দেখেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের দাবি, হাতিটি সামান্য জখম। তাই সে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। দুর্গাপুরের বনাধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে একটি হাতি দামোদর পেরিয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বাকি দু’টির একটি রাতে কাঁকসার কাঁটাবেড়িয়ার জঙ্গলে ও অন্যটি পানাগড়ের জঙ্গলে আশ্রয় নেয়।’’ বন দফতর সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকালে একটি হাতিকে বিধাননগর হয়ে শহরে ঢুকতে দেখেন বাসিন্দারা। সেটি শহরের এবিএল জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। হাতি দু’টি যাতে জনবহুল এলাকায় ঢুকতে না পারে, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলে বনকর্তারা জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy