কাজে ব্যস্ত বৃদ্ধা। দুর্গাপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ মশান। নিজস্ব চিত্র।
নারী দিবসের অর্থ চারুবালা সরকার জানেন না। এই দিবসের তাৎপর্য কী, তাঁর জানা নেই। তিনি শুধু জানেন, নাতি-নাতনিকে বড় করে তোলার জন্য তাঁকে আমৃত্যু জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। রোজকার মতোই এ দিনও তাঁর ঘুম ভাঙবে ভোরে। দিনভর বিড়ি বাঁধতে হবে। তা না হলে যে পেটের ভাত জুটবে না।
দুর্গাপুরের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের আশিসনগর লাগোয়া বিদ্যাসাগরপল্লির পাইকপাড়ায় বাস ৮০ বছরের বৃদ্ধা চারুবালা। বাড়ির দেওয়াল ভগ্নপ্রায়। মাথার উপরে ছাউনি জরাজীর্ণ। বৃষ্টিতে টিনের চাল ফুটো হয়ে জল পড়ে মাটির দেওয়াল বেয়ে। দেওয়াল গলে যায়। ঘরের এক কোণে একটি তক্তা। সেখানে বসেই পড়াশোনা করে চারুবালার নাবালক নাতি-নাতনি। তারা চারুবালার ছোট ছেলে অর্জুনের সন্তান। ২০১৮ সালে অর্জুনের মৃত্যু হয়। তার পরে সন্তানদের রেখে সংসার ছেড়ে গিয়েছেন অর্জুনের স্ত্রী। তখন থেকে নাতি- নাতনিকে বড় করে তোলার দায়িত্ব বর্তেছে চারুবালার উপরে।
বাড়ির দাওয়ায় বসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিড়ি বাঁধেন চারুবালা। আগে দিনে হাজার বিড়ি বাঁধতেন। গড়ে প্রায় দেড়শো টাকা রোজগার ছিল। এখন নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তিনি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা হয় না। সেই অবস্থাতেই দিনভর বসে বসে বিড়ি বাঁধতে হয় তাঁকে। তিনি জানান, এখন গড়ে দু’শো-আড়াইশোর বেশি বিড়ি বাঁধতে পারেন না। রোজগার হয় গড়ে মাত্র ৩০-৪০ টাকা। এ ছাড়া, বিধবা ভাতা পান। সেই সম্বলেই তিন জনের পেট ভরানোর ব্যবস্থা ছাড়াও, নাতি-নাতনির পড়াশোনা চালাতে হয় তাঁকে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাসের সংযোগও পাননি। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবেশী এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহায্য করে মাঝে মাঝে।’’ তিনি জানান, কিছু দিন আগে এলাকায় কীর্তনের আয়োজন করেছিল দু’টি সংস্থা। তারা মোট ৫০ কেজি চাল দিয়েছে।
চারুবালার নাতি দুর্গাপুর ওল্ড বয়েজ় হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। প্রতিবেশী এক জন তাকে একটি পুরনো সাইকেল দিয়েছেন। সেই সাইকেলে স্কুলে যায় সে। তার দিদি দুর্গাপুর প্রজেক্টস গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তাকে প্রতি বছর শিক্ষাসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করেন প্রাক্তন কাউন্সিলর শিপুল সাহা। তবে তাতেও সব প্রয়োজন মেটে না, জানায় মেয়েটি। চারুবালা বলেন, ‘‘আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, যাতে নাতি-নাতনিরা পড়াশোনা চালিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আমি ছাড়া যে ওদের আর কেউ নেই!’’ নাতি-নাতনি বলে, ‘‘ঠাকুমাই আমাদের কাছে সব। বড় হয়ে আমরা ঠাকুমার পাশে থাকতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy