Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Koshigram Union Institution

প্রধান শিক্ষককে জুতো, দিনভর ধুন্ধুমার স্কুলে

এ দিন স্কুল খোলার পরেই গ্রামবাসী একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানাতে আসেন। কথা কাটাকাটি হয়। তাঁদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের ঘরে ঢুকে কম্পিউটার, চেয়ার ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ।

কোশিগ্রামের স্কুলের গেটের পাশে ঝোপ। নিজস্ব চিত্র

কোশিগ্রামের স্কুলের গেটের পাশে ঝোপ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০১
Share: Save:

স্কুল থেকে ফিরেই বমি শুরু হয়। বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যেতেই মারা যায় পঞ্চম শ্রেণির ওই পড়ুয়া। অভিযোগ, স্কুলে সর্পদষ্ট হওয়ার পরেও বাড়িতে তা জানানো হয়নি। চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার স্কুলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে ধুন্ধুমার বাধল কাটোয়ার কোশিগ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউটে। এ দিনই আরও এক দশম শ্রেণির ছাত্রও স্কুলের গেটের কাছে সর্পদষ্ট হয় বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে সে।

এ দিন স্কুল খোলার পরেই গ্রামবাসী একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানাতে আসেন। কথা কাটাকাটি হয়। তাঁদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের ঘরে ঢুকে কম্পিউটার, চেয়ার ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। মহিলারা স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে জুতোপেটা করেন বলেও অভিযোগ। রোষ থেকে বাঁচাতে গ্রামবাসীরই একাংশ প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের ঘরে ঢুকিয়ে আটকে দেন। খবর পেয়ে বেলা ১১টা নাগাদ আসে পুলিশ। প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়। কাটোয়া থানার আইসি তীর্থেন্দু গঙ্গ্যোপাধ্যায়ের কাছে ঠিকঠাক তদন্ত ও প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে গ্রামবাসীরা গণস্বাক্ষর করে আর্জি জানান। মৃত ছাত্রের বাবা কার্তিক মাঝি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি ধারায় প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ দিন বিকেলে কাটোয়া ১-এর বিডিও মৃতের বাড়িতে যান। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষাক্ত কোনও প্রাণীর কামড়েই ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সুপার বিপ্লব মণ্ডল বলেন, “ময়না তদন্তে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে কোনও কিছুই কামড়েই বিষক্রিয়ায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।’’ অভিভাবকদের দাবি, পুরো স্কুল চত্বর আগাছায় ভরে রয়েছে। বর্ষায় সাপের উপদ্রব বেড়েছে। সব জানা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেননিস্কুল কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতোই মঙ্গলবার স্কুলে গিয়েছিল ইন্দ্রজিৎ মাঝি। টিফিনের সময় বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলা করে। খানিক বাদেই পায়ে জ্বালা শুরু হয় তার। ক্ষতচিহ্নও দেখা যায়। এক শিক্ষককের কাছে গিয়ে ঘটনার কথা জানালে তিনি চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা না করে, বাড়িতে খবর না দিয়ে পায়ে ডেটল লাগিয়ে ছেড়ে দেন বলে অভিযোগ। বাড়িতে গিয়ে বরফ লাগানোরও পরামর্শ দেন। দুপুর ৩টে নাগাদ বাড়ি ফেরে ইন্দ্রজিৎ। পরিজনেদের দাবি, ভাতও খেতে পারেনি। বিকেল ৪টে নাগাদ বাড়ির কাছেই এক গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যায় সে। সেখানে গিয়েই বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন অচেতন অবস্থায় ওই ছাত্রকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যেতেই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে জানান। ওই স্কুলের পড়ুয়া, ইন্দ্রজিতের সহপাঠী রাজদীপ দাস, সুপ্রিয়া পালেরা বলে, “ইন্দ্রজিৎকে সাপে কাটার পরেই প্রধান শিক্ষককে জানানো হয়েছিল। কিন্তু, কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’’

এ দিন প্রধান শিক্ষককে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন মৃতের মা টগর মাঝি ও কাকা বিশ্বজিৎ মাঝি। তাঁরা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “স্কুলের গাফিলতিতেই আমাদের ছেলেটা সাপের ছোবলে মারা গেল। ঠিক সময় স্কুল চিকিৎসা করালে ছেলে প্রাণে বেঁচে যেত। এর বিচার চাই।’’

প্রধান শিক্ষককে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার বেশ খানিক পরে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হয়। অন্য ছাত্ররা তখনও ছিল স্কুলে। দশম শ্রেণির ছাত্র অর্ণব সাহার বাবা পল্টু সাহা জানান, স্কুলের গেটের কাছে ঘুগনি, ফুচকার মতো খাবার বসে। ওই খানেই গিয়েছিল ছেলে। ঝোপঝাড়ে ভর্তি জায়গায় সর্পদষ্ট হয়। বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি ফেরে সে। কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন মাঝি, বাসন্তী মাঝিরা বলেন, “কোনও রকম পরিষ্কার হয় না স্কুলে। সেই কারণেই একটা প্রাণ হারাতে হল। আরও এক ছাত্র সর্পদষ্ট হয়েছে। বিপদের ভয়ে ছেলেদের স্কুলে পাঠাতেই পারব না মনে হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Snake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy