পণ্যবাহী গাড়িতেই গন্তব্যের পথে। সোমবার তেলিপুকুরে। নিজস্ব চিত্র
অনির্দিষ্ট কালের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হল প্রথম দিনের পরেই। তবে সোমবার বাস বন্ধ থাকায় দক্ষিণ দামোদর রুটে দুর্ভোগ পোহালেন যাত্রীরা। ইচ্ছেমতো ভাড়া হাঁকার অভিযোগ উঠল টোটো থেকে ছোট মালবাহী গড়িগুলির বিরুদ্ধে।
প্রশাসনের আশ্বাস মেলায় আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকেই দক্ষিণ দামোদর রুটে বাস রাস্তায় নামবে বলে জানাল বর্ধমান জেলা বাস সমিতি। এ দিন সকালে জেলা ট্র্যাফিক পুলিশের ডিএসপি, পরিবহণ দফতরের আধিকারিক থেকে নানা প্রশাসনিক কর্তা বাস মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে বাস মালিকেরা জানান, আরামবাগ রোডে পূর্ব বর্ধমানের মধ্যে থাকা ৩২ কিলোমিটার রাস্তায় ৮২টি ‘হাম্প’ রয়েছে। ঘনঘন হাম্প বসানোয় তেল বেশি পুড়ছে, যন্ত্রাংশের সমস্যা হচ্ছে। এত হাম্প থাকলে বাস চালানো সম্ভব নয়। জেলা পরিবহণ দফতরের কর্তা (আরটিও) রানা বিশ্বাস তাঁদের বলেন, ‘‘মঙ্গলবার জেলায় পথ নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক রয়েছে। ওই রাস্তায় কোথায় হাম্প থাকা প্রয়োজন, তার রিপোর্ট আমাদের দিন। আমরা ওই বৈঠকে আলোচনা করে সমাধানের পথ বার করব।’’ তবে তিনি জানান, হাম্প থাকায় দুর্ঘটনা অনেক কমেছে বলে প্রশাসনের রিপোর্ট রয়েছে।
প্রশাসনের আশ্বাস পাওয়ার পরে এ দিন বিকেলে বর্ধমান বাস মালিক সমিতি আলোচনায় করে ঠিক করে, বাজার, স্কুল-কলেজের সামনে হাম্প রাখা জরুরি। সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের কাছে একটি রিপোর্টও জমা দেয় সমিতি। তাতে ৩২ কিলোমিটার রাস্তায় কতগুলি হাম্প রাখা প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে, সে প্রশ্নে বাস মালিক সমিতির কর্তা জানকী সিংহের বক্তব্য, ‘‘প্রশাসন ৮২টি হাম্প রেখেছিল। আমরা ১৪টির বেশি রাখতে পারলাম না।’’ তাঁর দাবি, প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, পূর্ত দফতরকে বলে বাকি হাম্পগুলি তুলে দেওয়া হবে।
এ দিন বাস বন্ধ থাকায় হাজার-হাজার যাত্রী নাকাল হন। রাস্তায় দেখা য়ায়, ছোট মালবাহী গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে চড়ে গন্তব্যস্থলে যাচ্ছেন যাত্রীরা। টোটো চালকেরা সুযোগ বুঝে বেশি দর চেয়েছেন বলে অভিযোগ। গাড়ির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে বাধ্য হয়েছেন যাত্রীরা। রাস্তার উপরে থাকা দোকান-বাজারগুলিও ছিল ফাঁকা। বাস মালিক সমিতির অন্যতম কর্তা তুষার ঘোষের দাবি, ‘‘ওই রাস্তা দিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ নানা এলাকার দূরপাল্লার বাস চলে। সব মিলিয়ে বাসে লাখখানেক যাত্রী যাতায়াত করেন। বাস বন্ধ থাকার প্রভাব বাজারে-হাটে তো পড়বেই।’’
আরামবাগ থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আসছিলেন রাজকুমার নন্দী। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক বেশি টাকা খরচ করে ট্রেকারে আসতে হল।’’ উচালনের বাসিন্দা রেহেনা সুলতানা, সেহেরাবাজারের বিমল প্রামাণিকদের ক্ষোভ, ‘‘তিন-চার বার গাড়ি বদলে বর্ধমান পৌঁছতে হল। টাকা ও সময়, দু’টোই বেশি লাগল।’’ রায়নার উৎপল বসু, মিরেপোতা বাজারের জামিরুল ইসলামেরা দাবি করেন, ‘‘প্রশাসন আলোচনা করে সমাধান করুক। তবে তেলের চেয়ে মানুষের জীবনের দাম বেশি। রেষারেষি বন্ধ ও মানুষ সচেতন না হলে দুর্ঘটনা আটকানো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy