Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

দুর্গাপুরে অবহেলায় ধুলো জমছে ১১০ বছরের ‘ইন্দ্রাণী’র গায়ে

ইন্দ্রাণী স্টেশনের বাইরেই ঘেরা জায়গায় থাকা প্রায় ৫০ ফুট লম্বা একটি স্টিম ই়ঞ্জিনটির নাম। ইঞ্জিনটি তৈরি হয় ১৯০৭ সালে। অসমের ন্যারো গেজ লাইনে পাহাড়ি পথ বেয়ে ইঞ্জিনটি সঙ্গের তিনটি কামরাকে নিয়ে ঢিমে তালে চলাচল করত।

অযত্নে: ইন্দ্রাণীর ঘেরার চারদিকে শুকোচ্ছে গামছা। ছবি: বিকাশ মশান

অযত্নে: ইন্দ্রাণীর ঘেরার চারদিকে শুকোচ্ছে গামছা। ছবি: বিকাশ মশান

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৫
Share: Save:

যাওয়া-আসার পথেই আছে সে। কিন্তু দু’এক জন অতিউৎসুক ছাড়া কেউই তার দিকে ফিরে তাকায় না। তাকাবেই বা কেন, অতীতের সেই জৌলুসই যে আর নেই। অথচ, একটা সময় কয়েক দশক জুড়ে সেটিরই ক্ষমতায় ভর করে দশকের পর দশক বহু মানুষ পৌঁছে গিয়েছেন গন্তব্যে। কিন্তু ১১০ বছরে পা দেওয়ার মুহূর্তে দুর্গাপুর স্টেশনে ‘ইন্দ্রাণী’র খোঁজ কেউ রাখে না। অযত্নের ছাপও বড্ড স্পষ্ট।

ইন্দ্রাণী স্টেশনের বাইরেই ঘেরা জায়গায় থাকা প্রায় ৫০ ফুট লম্বা একটি স্টিম ই়ঞ্জিনটির নাম। ইঞ্জিনটি তৈরি হয় ১৯০৭ সালে। অসমের ন্যারো গেজ লাইনে পাহাড়ি পথ বেয়ে ইঞ্জিনটি সঙ্গের তিনটি কামরাকে নিয়ে ঢিমে তালে চলাচল করত। পরে এই ইঞ্জিনটিকে নিয়ে আসা হয় বাঁকুড়া-দামোদর রিভার রেলওয়ের (বিডিআর) ন্যারো গেজ লাইনে। সমতলে ইঞ্জিনটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত নাগাড়ে কাজ করার পরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে ইন্দ্রাণী। রোগ সারাতে আসেন ‘যন্ত্র-চিকিৎসকে’রা। সুস্থ হয়ে নতুন উদ্যোমে ফের কাজে নামে ওই ইঞ্জিনটি। ১৯৮৯ সালে লোহালক্কড়ের কলিজায় শেষে বারের মতো পরিবর্তনের ছোঁয়া পায় সিসি ৬৭০ টাইপের ইঞ্জিনটি। তবে ইন্দ্রাণীর বয়সের কথা বিবেচনা করে রেল ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শে পাকাপাকি ভাবে সেটিকে ইয়ার্ডে বিশ্রামে পাঠানো হয়।

১৯৯৯ সালে ইয়ার্ড থেকে ইন্দ্রাণীকে আনা হয় দুর্গাপুরে। স্টেশনের সামনে প্রায় তিন ফুট উঁচু চাতালের উপরে প্রায় ৬০ ফুট লম্বা রেল লাইন পেতে তার উপরে রাখা হয় ইঞ্জিনটিকে। চারপাশে বাগান। বৃত্তাকার গ্রিল দিয়ে জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়। ওই বছরই ১২ মে থেকে সাধারণের জন্য দ্রষ্টব্যের জন্য ইঞ্জিনটি রাখা আছে দুর্গাপুর স্টেশনে।

কিন্তু সম্প্রতি স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, ইন্দ্রাণীর সংসারে অযত্নের ছাপ বড্ড স্পষ্ট। গ্রিলের পাশে জমেছে আবর্জনা। গ্রিলের গায়ে শুকোচ্ছে ভিজে জামা-কাপড়। ভিতরের বাগান অগোছালো। ইঞ্জিনের পিছনে লেখা নাম উঠে গিয়েছে সেই কবেই। দেওয়ালে মরচে। ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে ছোট ছোট গাছের চারা। ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ যে করা হয় না , তা এক নজরেই মালুম পড়ে।

এই অযত্ন বুঝিয়ে দেয় যেন, এক্সপ্রেস-সুপারফাস্টদের বা আগামীর বুলেট-স্বপ্নের সাজানো বাগানে ইন্দ্রাণীর ঠাঁই নেই আর। কিন্তু ১১০ বছরে সামান্যতম যত্নও কি সে পেতে পারে না, প্রশ্ন এক সচেতন যাত্রীর। যদিও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পিয়ালী বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যাঙ্ক কর্মী দেবনাথ বসুরা খুব একটা ঠাহর করেননি ইন্দ্রাণীর দিকে। তবে ১১০ বছর শুনে তাঁরাও একটু থমকালেন। তার পরে ফের রওনা দিলেন এক্সপ্রেস গতিতে।

দুর্গাপরের স্টেশন ম্যানেজার জ্যোতির্ময় রায় অবশ্য বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ইঞ্জিনটির রক্ষণাবেক্ষণে ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Indrani Railway Station Negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE