পাতুন গ্রামে দেবীপ্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
যেখান থেকে সেখান থেকে মাটি আনলে চলবে না। স্থানীয় বাউরি পরিবারের মাটি এনে মূর্তি গড়তে হবে। এই রীতি আজও রয়েছে মন্তেশরের দেনুর পঞ্চায়েতের পাতুন গ্রামের সামন্ত পরিবারের কালীপুজোয়। পারিবারিক পুজোটি এ বার ১০১ বছরে পা দিল।
প্রথমে তালপাতার মন্দিরে পুজো শুরু হলেও বর্তমানে দেবীর জন্য তৈরি হয়েছে পাকা মন্দির। পারিবারিক পুজো হলেও তাতে সামিল হন গোটা গ্রামের মানুষ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবারে প্রথম কালীপুজো শুরু করেন অমুল্যধন সামন্ত।
জনশ্রুতি রয়েছে, অমুল্যধনবাবুর পর পর পাঁচ নাতি মারা যায়। কী ভাবে বংশরক্ষা করা যায় তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান অমুল্যধনবাবুর ছেলে দাশুরথি সামন্ত-সহ গোটা পরিবার। হঠাৎই ওই সামন্ত বাড়িতে হাজির হন ভিন্ রাজ্যের এক সাধু। তিনি নিদান দেন, কাছাকছি বাউরি বাড়ি থেকে মাটি এনে মূর্তি তৈরি করে কালীর আরাধনা করার।
কথিত রয়েছে, পুজোয় জোড়া ঢাকের ব্যবহারের আদেশ দেন ওই সাধু। তাঁর কথামতো সামন্ত পরিবারে ধুমধাম করে শুরু হয় দেবীর আরাধনা। নিয়ম মেনে দেবীর আরাধনা করার পরে দাশুরথিবাবু ৯ ছেলে এবং এক কন্যা সন্তান লাভ করেন। ধীরে ধীরে এলাকায় নয় ভাইয়ের পুজো হিসেবে এই কালীপুজো পরিচিতি পায়।
নয় ভাইয়ের মধ্যে সামন্ত পরিবারে বর্তমানে জীবিত রয়েছেন চার জন। বয়স্ক চার জনই পালা করে পুজো চালান। এ ছাড়াও পুজোর খরচ জোগানের জন্য রয়েছে বিঘা তিনেক জমি। প্রথম থেকেই মুর্শিদাবাদের একটি পরিবার পুজোয় ঢাক বাজানোর কাজ করে আসছিল। তবে ঢাকি পরিবারের কোনও প্রতিনিধি না থাকায় বছর দু’য়েক হল সে রেওয়াজ ভেঙেছে। বর্তমানে স্থানীয় ঢাকিরা পুজোয় যোগ দেন। সামন্ত পরিবারের অনেকেই বাইরে থাকেন। তবে পুজো এলে ঘরে ফেরেন সকলেই। পুজোর আয়োজক চার ভাইয়ের একজন কমলকান্তি সামন্ত। তিনি জানান, সাধু যে ভাবে পুজো চালাতে বলেছিলেন, আজও সে ভাবেই পুজো চলে আসছে। শুধু পরিবারের সদস্যরাই নয়। বাড়ির পুজোয় যোগ দেন এলাকার মানুষজনও।
পরিবারের এক বয়স্কা সদস্য ঊর্মিলা সামন্ত বলেন, ‘‘একবার অগ্নিকাণ্ডে ঘরের চাল পুড়ে গিয়েছিল। তবে ঘরের কোনও জিনিসপত্র নষ্ট হয়নি। আর একবার ডাকাত দল বাড়িতে ঢুকলেও তাদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়। দেবীর কৃপাতেই দু’বার বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy