বছরের পর বছর সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা খরচ করেনি জেলার বেশ কিছু স্কুল, অথবা খরচের কোনও হিসেবই সর্বশিক্ষা মিশনের দফতরে জমা দেয়নি এই অভিযোগে জেলার ৯টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন জেলার সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিকেরা।
অভিযুক্তদের মধ্যে চার প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কালনা ১ ব্লকের বৃদ্ধাপাড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের প্রকল্প আধিকারিক ভাস্কর পাল বলেন, “প্রায় দেড় কোটি টাকার হিসেব পাচ্ছি না। স্কুলগুলি আদৌ কাজ করছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। তদন্ত করে গাফিলতি পাওয়ার পরেই আমরা এফআইআর করেছি।” আরও কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে বলেও তাঁর দাবি। হিসেব জমা দেয়নি এমন স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের বেতন আটকানোর কথা ভাবে হচ্ছে বলেও সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে। আজ, বুধবার জেলাশাসক, স্কুল পরিদর্শকের উপস্থিতিতে এ নিয়ে একটি বৈঠকও হওয়ার কথা।
জেলা সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫৫টি স্কুল বছরের পর বছর সর্বশিক্ষা মিশনকে খরচের কোনও হিসাব দিচ্ছে না। কোথাও দু’হাজার, কোথাও ২৫ লক্ষ টাকারও হিসাব দেয়নি স্কুলগুলি। অথচ এই স্কুলগুলিকে ফি বছর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য টাকা দেয় সর্বশিক্ষা অভিযান। টাকা পেয়ে তারপরের আর্থিক বছরে ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ দিতে হয় স্কুলগুলিকে। কিন্তু সেই শংসাপত্র দেওয়ার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। সর্বশিক্ষা মিশনের তরফে দাবি করা হয়েছে, গত আর্থিক বছরের শুরু থেকেই খরচের হিসাব দেওয়ার জন্য বারবার চিঠি দেওয়া হয় স্কুলগুলিকে। ভাস্করবাবু বলেন, “অনেক খতিয়ে দেখার পর সত্যিই যখন আমরা বুঝতে পারছি হিসাবে গড়মিল রয়েছে, তখনই এফআইআর করতে বাধ্য হচ্ছি।” যে স্কুলগুলির বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে সেগুলি হল গুসকরার দেবশালা প্রাথমিক স্কুল, আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, কালনা শশীবালা সাহা উচ্চ বিদ্যালয়, দেধুয়া প্রাথমিক স্কুল, উখড়ার কাজোড়া উচ্চ বিদ্যালয়, বরাকর আদর্শ বিদ্যালয়, বাগরাই প্রাথমিক স্কুল, পাঁচরা এসসিআ এস বিদ্যামন্দির ও কালনার বৃদ্ধাপাড়া জিএস প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে বরাকর, দেধুয়া, কাজোড়া ও পাঁচড়ার প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বরাকরের প্রধান শিক্ষক জামিনে রয়েছেন। আর অভিযোগ গুরুতর হওয়ার জন্য কালনার বৃদ্ধাপাড়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা দফতরকে চিঠি দিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন।
সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আউশগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৪ লক্ষ টাকা, ভাতারের শুশুনদিঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৩ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা, মঙ্গলকোটের নিগন দেশবন্ধু বিদ্যামন্দিরে ২২ লক্ষ টাকা, আসানসোলের কাঙ্খায়া এসএ বিদ্যামন্দিরে ১৬ লক্ষ টাকা, পূর্বস্থলীর পারুলডাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ লক্ষ টাকা, কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ সুবোধচন্দ্র শিক্ষা নিকেতনে ৭ লক্ষ টাকা, আসানসোলের গুরু নানক মিশন উচ্চবিদ্যালয়ে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকার হিসেবে গড়মিল রয়েছে। এ ছাড়া চিত্তরঞ্জনের মহিলা স্কুল, মঙ্গলকোট একেএম, কালনার মেদগাছি-সহ ৫৫টি স্কুলকে হিসাব দেওয়ার জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছে সর্বশিক্ষা মিশন। ওই দফতরের এক কর্তার দাবি, “স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ না করে ব্যাঙ্কে টাকা রেখে সুদ গুনছেন প্রধান শিক্ষক। সুদের টাকা কোথায় যাচ্ছে কেউ জানে না। আমাদের প্রধান শিক্ষকের হাত-পা ধরে মূল টাকার হিসাব চাইতে হচ্ছে। তাতেও যা হিসাব দেওয়া হচ্ছে তাতে প্রচন্ড গড়মিল থাকছে। এ ভাবে ব্যাঙ্কে টাকা রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি।” তিনি আরও জানান, আউশগ্রাম, নিগন-সহ বেশ কয়েকটি স্কুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চলেছে সর্বশিক্ষা মিশন।
তবে ওই সব স্কুলের শিক্ষকদের একাংশের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে স্কুলের পরিকাঠামো শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু জেলার কোনও চাপ না থাকায় ‘ইউটিলাইজেশন শংসাপত্র’ জমা দেওয়া হয়নি। এখন সর্বশিক্ষা মিশন চাপ দেওয়ায় ফের হিসাবপত্র ঠিক করতে সময় লাগছে। শংসাপত্র দিতে দেরিও হচ্ছে সে কারণেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতির কারণে প্রধান শিক্ষক স্কুল উন্নয়নের কাজ শুরুই করতে পারেননি বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু রাজনৈতিক কারণ বা চাপ কি, তা বিস্তারিত বলতে চাননি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy