মন্তেশ্বরে ধৃত। নিজস্ব চিত্র।
শীত পড়তেই ফের মন্দিরে হানা দিতে শুরু করেছে দুষ্কৃতীরা। কালনার মন্তেশরে সপ্তাহখানেকের মধ্যে সাতটি মন্দিরের তালা ভেঙেছে তারা।
গত বছর জেলা জুড়ে পরপর বিভিন্ন মন্দিরে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। যার বেশির ভাগেরই এখনও কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। অনেক ক্ষেত্রে চোরেরা মূর্তি ছাড়াও সোনা, রুপোর গয়না নিয়ে চম্পট দেয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চুরি চক্র বেশি সক্রিয় ছিল কালনা এবং কাটোয়া মহকুমায়। এ বার ফের কালনা মহকুমার মন্তেশ্বর ব্লকে একের পর এক মন্দিরে দুষ্কৃতী-হানার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার পুড়শুড়ি পঞ্চায়েতের মথুরা গ্রামের বাসিন্দারা মূর্তি চোর সন্ধেহে এক যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেন। গ্রামবাসীদের দাবি, সাধুর ছদ্মবেশে ওই যুবক তাঁদের গ্রামের কালীমন্দিরের তালা ভেঙে মূর্তি চুরি করে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
গত বছর জুন ও জুলাইয়ে পরপর কেতুগ্রামের নিরোলে গুপ্ত পরিবারের মন্দিরে ও অট্টহাসের আশ্রম থেকে মূর্তি চুরি যায়। তার পরে সে বছর শীত পড়তেই একের পর এক মন্দিরে চুরি শুরু হয়। অট্টহাসে আবার সন্ন্যাসীকে মারধর করে চুরি, জামালপুরে এক রাতে আট মন্দিরে চুরি, গলসির চান্নায় আশ্রমে সন্ন্যাসীকে খুনের ঘটনা ঘটে। পূর্বস্থলীর জামালপুরে বুড়োরাজ মন্দির থেকে রুপোর তৈরি বড় সাপ চুরি যায়। এ নিয়ে অবরোধ-বিক্ষোভও হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ নানা জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে একটি আস্ত কম্পিউটার চুরি চক্রের হদিস মেলে। অদ্ভূদ ভাবে, এই ঘটনার পর থেকেই মন্দিরের তালা ভেঙে চুরি বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু এ বার শীত পড়তেই ফের সেই চুরি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। গত বুধবার রাত থেকে মন্তেশর ব্লকের বিভিন্ন মন্দিরে তালা ভেঙে চুরি হয়েছে। প্রথমে পুড়শুড়ি এলাকার গোপীনাথ, ব্রজকালী, পঞ্চানন এবং শ্রীধর মন্দিরে তালা ভাঙে চোরেরা। খোয়া গিয়েছে গয়না, বাসন-সহ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার মালপত্র। পঞ্চানন দেবতার পাথরের মূর্তি অবশ্য মিলেছে মন্দির থেকে কিছুটা দূরে। এর পরে শুক্রবার মামুদপুর ২ পঞ্চায়েতের কাইগ্রামে রাধামাধব মন্দিরে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। তবে এই মন্দিরে দেবতার কক্ষের লোহার দরজা ভাঙতে পারেনি দুষ্কৃতীরা। সেবাইতদের অভিযোগ, মূল মন্দির লাগোয়া একটি ঘর থেকে চোরেরা বেশ কিছু মূল্যবান বাসনপত্র নিয়ে চম্পট দেয়। এই রাতে এলাকার আরও একটি মন্দিরে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। শনিবার রাতে মথুরা গ্রামে প্রাচীন কালী মন্দিরে তালা ভাঙে। এখানে বহু বছর ধরে রয়েছে কোষ্ঠী পাথরের মূর্তি। প্রতিবছর কালীপুজোর সময় বড় উত্সব হয়। রবিবার সকালে দেখা যায়, মন্দিরের গ্রিল ভাঙা। দেবী মূর্তি নেই।
গ্রামবাসীরা জানান, শনিবার সকালে সাধুর বেশে গ্রামে আসে বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তি। সে প্রথমে নানা বাড়িতে ঘুরে ভিক্ষা করে। সন্ধ্যায় একটি বাড়িতে খাওয়াদাওয়াও সারে। যাওয়ার আগে রেখে যায় তার ভিক্ষার ঝোলাটি। গ্রামের বাসিন্দা লাল্টু ঘোষের দাবি, রবিবার সকালে চুরির বিষয়টি মন্তেশর থানায় জানালে পুলিশ তেমন আমল দিতে চায়নি। তাই গ্রামেরই কয়েক জন মোটরবাইকে চড়ে চুরি যাওয়া মূর্তির খোঁজে বেরোন। তাঁরা জানতে পারেন, আগের দিন যে সাধু গ্রামে এসেছিল তার নাম বিশ্বনাথ দাস। বাড়ি পূর্বস্থলী ১ ব্লকে কাইবাতি গ্রামে। গ্রামবাসীর দাবি, সোমবার সকালে গিয়ে তার বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করতেই একটি পুটলি থেকে দু’টি মূর্তি বেরোয়, যার মধ্যে একটি তাঁদের কালী মূর্তি। এর পরে বিশ্বনাথকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। গ্রামবাসীদের ধারণা, একা ওই ব্যক্তি নয়, এই চুরির পিছনে রয়েছে আরও অনেকে।
জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বনাথকে জেরা করা হচ্ছে। সে সাধুর ছদ্মবেশে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মূর্তি চুরির পরিকল্পনা করত কি না, তা বিশদে জানার চেষ্টা চলছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা এ দিন বলেন, “আমাদেরও ধারণা, এই অপরাধের সঙ্গে একাধিক দল জড়িত। তাদের হদিস পাওয়ার চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy