রাস্তার পাশে ডাম্পার দাঁড় করিয়ে কয়লা নামিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
মাঝ রাস্তা থেকে কয়লা উধাও রুখতে হাতিয়ার ছোট্ট যন্ত্র।
খনি থেকে ডাম্পারে করে সরবরাহের সময়ে কয়লা চুরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর ফলে কোটি কোটি টাকা লোকসান হয় সংস্থার। সেই চুরি ঠেকাতে এ বার আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারস্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএল। ডাম্পারে জিপিআরএস পদ্ধতি ব্যবহার করে চুরি আটকানোর ব্যবস্থা করেছে তারা। ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান, সংস্থার ১৪টি এরিয়ার মধ্যে একটিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাকিগুলিতেও শীঘ্র তা চালু হবে।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই জিপিআরএস পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সংস্থার কারিগরি বিশেষজ্ঞেরা জানান, ডাম্পারের এক জায়গায় ছোট একটি যন্ত্র বসানো হচ্ছে। তাতে একটি ‘চিপ’ থাকছে। সেই চিপের মাধ্যমেই কয়লা পরিবহণ চলাকালীন ডাম্পারটির ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য এসে যাচ্ছে ইসিএলের কন্ট্রোল রুমের কম্পিউটারে। সেখান থেকেই ডাম্পারটি কোথায় যাচ্ছে, কোথায় থামছে, রাস্তায় কতক্ষণ দাঁড়িয়ে কী করছেসব তথ্য ফুটে উঠছে কম্পিউটরের মনিটরে। তা দেখে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন।
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, আপাতত সালানপুর এরিয়ায় এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই এরিয়ায় মোট ১১৪টি ডাম্পার কয়লা পরিবহণের কাজ করে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বাকি ১৩টি এরিয়াতেও এই ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি। জানা গিয়েছে, ইসিএলের ১৪টি এরিয়ার বিভিন্ন খনির কয়লা নির্দিষ্ট গন্তব্য বা রেল সাইডিংয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে প্রায় ১৭০০টি ডাম্পার। নীলাদ্রিবাবু বলেন, “ডাম্পারে কয়লা পরিবহণের সময়ে চুরির যে পরম্পরা চলছিল, তা এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় রোখা যাচ্ছে। সংস্থার ক্ষতিও আটকানো সম্ভব হবে।” ইসিএলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।
সালানপুর এরিয়ার সেই কন্ট্রোল রুম।
এই আধুনিক পদ্ধতিটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ইসিএলের নিরাপত্তা বিভাগ। দফতরের মুখ্য আধিকারিক রানা চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিক ভাবে যেহেতু সালানপুর এরিয়ায় এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তাই সেখানকার এরিয়া কার্যালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম তৈরি করা হয়েছে। এখন সেখান থেকেই পুরো বিষয়টি দেখাশোনা করা হচ্ছে। তবে শীঘ্রই সংস্থার সদর কার্যালয় সাঁকতোড়িয়ায় একটি মূল কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। সেখানে পৃথক একটি সার্ভার বসানো হচ্ছে। নিরাপত্তা আধিকারিকেরা সাঁকতোড়িয়ায় বসেই ডাম্পারগুলির গতিবিধির উপরে নজর রাখতে পারবেন।
ইসিএলের কয়েক জন আধিকারিকদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, পরিবহণের সময়ে কয়লা চুরি হয় কয়েকটি উপায়ে। খনি থেকে ডাম্পারে কয়লা তোলার সময়ে কাঁটাঘরে তা ওজন করা হয়। এই সময়ে একটি ডাম্পারে যতটা পরিমাণ কয়লা তোলা উচিত, ওজনে কারচুপি করে তার চেয়ে বেশি তুলে দেওয়া হয়। এক শ্রেণির অসাধু খনিকর্মী এই কারচুপির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ। গন্তব্যে যাওয়ার পথে সুবিধা মতো জায়গায় ওই বাড়তি কয়লা নামিয়ে নেওয়া হয়। খনি থেকে বাড়তি কয়লা তোলা সম্ভব না হলে রাস্তায় সুবিধা মতো জায়গায় কয়লা নামিয়ে নিয়ে ওজন সমান করার জন্য বাকি কয়লায় জল, কালো মাটি বা পাথর মিশিয়ে দেওয়া হয়। তার জেরে এক দিকে যেমন চুরির ফলে লোকসান হয়, তেমনই পাথর, মাটি বা জল মেশানো কয়লা পেলে নানা তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র তা কোলিয়ারিতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। ফলে, দু’দিক থেকেই লোকসান হয় ইসিএলের।
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা পরিবহণে ব্যবহৃত ডাম্পারগুলি বেসরকারি ঠিকা সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া হয়। অভিয়োগ, সেগুলির চালক-খালাসিদেরও একাংশ এই অসাধু কাজের সঙ্গে জড়িত থাকেন। সালানপুরের কালিতলা মোড় ও কুলটির লছিপুর এলাকায় প্রতি দিন ডাম্পার থেকে কয়লা নামানোর এই ছবি দেখা যায়। জিপিআরএস ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এই চুরি রোখা সম্ভব, ধারণা খনিকর্তাদের।
ছবি দু’টি তুলেছেন শৈলেন সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy