তৃণমূল পরিচালিত বর্ধমান পুরসভার বিরুদ্ধে টেন্ডারে অনিয়ম, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, অবৈধ নির্মাণ না ভাঙা-সহ একাধিক অভিযোগ জানিয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে চিঠি দিলেন দলেরই ১২ জন কাউন্সিলর।
সুব্রতবাবু শুধু রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী নন, তৃণমূলের তরফে বর্ধমান জেলা পরিদর্শকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। সুব্রতবাবু বলেন, “চিঠি পেয়েছি। যদি পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তা ভাবার বিষয়।”
গত ১২ নভেম্বর তাঁকে পাঠানো চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, পুরসভার তরফে কোনও সিটি ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (সিডিপি) তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানো হয়নি। ফলে উন্নয়নের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। ওয়ার্ড কমিটিগুলিও নতুন করে গড়া হয়নি। শহরের পাঁচ-ছ’টি ওয়ার্ডকেই শুধু উন্নয়নের টাকা দেওয়া হচ্ছে। আরবান এমপ্লয়মেন্ট স্কিমের টাকাও সাধারণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সাধারণ কাউন্সিলরদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হচ্ছে না।
বর্ধমান শহরের ৩, ৩১, ১৩, ১০, ২৭, ৩৪, ৬, ২৫, ২৬, ৭ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেছেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর। তাঁদের অভিযোগ, গত বছর ৬ নভেম্বর বর্ধমানের তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড বন্ধ করা হলেও সেখানে কর্মরত মানুষদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। শহর জুড়ে হোর্ডিং-এর দৌরাত্ম্য বন্ধে পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আয় বাড়াতে ট্রেড লাইসেন্স বাড়ানোর কথাও ভাবেনি। ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর উদ্দেশ্যে একটি সংস্থাকে বেআইনি ভাবে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। পছন্দ মতো বিভিন্ন সংস্থাকে আকছার টেন্ডার পাইয়ে দেওয়াও হচ্ছে। শহরের অবৈধ নির্মাণের তালিকা হাতে থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
হঠাৎ কেন এই ঝুড়ি-ঝুড়ি অভিযোগ?
পুরসভা সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই পরিচালনা সংক্রান্ত কিছু বিষয় নিয়ে পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত ও তাঁর অনুগামী চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল খোকন দাসের সঙ্গে বেশ কয়েক জন কাউন্সিলরের বিরোধ তৈরি হয়েছে। গত ১১ ডিসেম্বর কাউন্সিলর বসিরউদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, পুরসভার তরফে বোআইনি দোকানগুলির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যদিও স্বরূপবাবু ও খোকনবাবু সে অভিযোগ উড়িয়ে দেন। পুরপ্রধান এ দিন দাবি করেন, “ওই চিঠিতে ১০ জনের স্বাক্ষর আসল। কিন্তু ৩৪ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের সই আসল নয় বলে জানা গিয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “আমরা বৃহৎ পরিবারের মতো কাজ করি। পরিবারের মধ্যে অসন্তোষ থাকতেই পারে। তাই একে গুরুত্ব দিচ্ছি না।”
গত বিধানসভা নির্বাচনে তুমুল জয়ের পরে বর্ধমান পুরভোটেও ৩৫টি ওয়ার্ডের সব ক’টিতে জিতে বোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূল। কিন্তু মাত্র ১৪ মাসের মধ্যেই তৃণমূল পরিচালিত বোর্ডের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন দলেরই কাউন্সিলারেরা। তাঁদের কেউ এ দিন প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে তাঁদের দাবি, অভিযোগের বেশ কিছু প্রমাণও তাঁরা চিঠির সঙ্গে দিয়েছেন। সুব্রতবাবু বলেন, “কিছু দিনের মধ্যেই বর্ধমানে গিয়ে ওই কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করব।” তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, এই অভিযোগের জেরে স্বরূপবাবুকে পুরপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। যদিও স্বরূপবাবু বলেন, “বোর্ডের পুরো মেয়াদ না শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার সরে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy