টুটুল মোল্লা। —নিজস্ব চিত্র।
চারদিন ‘নিখোঁজ’ থাকার পরে বুধবার গভীর রাতে কাটোয়া স্টেশন থেকে টুটুল মোল্লাকে উদ্ধার করল পুলিশ। রবিবার দুপুরে মঙ্গলকোটের লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকে তাঁর বাড়ির লোকেরা ‘নিখোঁজ’ ডায়েরি করে। টুটুল মোল্লা ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পরে স্থানীয় স্তরে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছিল। সিপিএমের দাবি ছিল, রাজনৈতিক কারণেই তৃণমূল তাঁদের কর্মীকে ‘অপহরণ’ করেছে। উল্টোদিকে তৃণমূলের দাবি, টুটুল তাঁদেরই সমর্থক।
এ দিন বছর তিরিশের ওই যুবককে উদ্ধার করার পরে রাতভর জেরা করে পুলিশ। তবে কীভাবে ‘নিখোঁজ’ হয়েছিল সে তা জানা যায়নি। পরে মফিজা বিবির হাতে তাঁর স্বামী টুটুলকে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, পারিবারিক গোলমালের জেরে টুটুল বাড়ি থেকে পালিয়ে কাটোয়া শহরের কোথাও আশ্রয় নিয়েছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টুটুল মোল্লা পেশায় ট্রাক্টর চালক। পাশের ধান্যরুখী গ্রামে অমর পালের বাড়ির ট্রাক্টর চালাতেন তিনি। বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়েই রোজ লক্ষ্মীপুর যাতায়াত করতেন টুটুল। রবিবার ভোরে ধান্যরুখী গ্রামের কাছ থেকে টুটুল মোল্লার সাইকেলটি পুলিশ উদ্ধার করে।
টুটুলের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পিছনে সিপিএম ও তাঁর বাড়ির লোকেরা তৃণমূলকে দুষেছিল। তাঁদের অভিযোগ, লোকসভা ভোটে টুটুল সিপিএমের হয়ে কাজ করায় তৃণমূল তাঁকে ‘অপহরণ’ করে। টুটুলের স্ত্রী আরও অভিযোগ করেন, শনিবার রাতে তাঁর স্বামীকে কে বা কারা হুমকি দিয়েছিল। যদিও এই অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করে আসছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, টুটুল তাঁদেরই সমর্থক। তাঁকে খোঁজার চেষ্টাও করছিল তাঁরা। পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধার করার পরে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এ দিন সকালেই মঙ্গলকোট থানায় যায়। স্থানীয় তৃণমূল নেতা দেবকুমার ধারা বলেন, “আমাদের কর্মীদের নামে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছিল। পুলিশ তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এর প্রতিবাদ করছি আমরা।” তবে টুটুলের খোঁঝ মেলার পরে সিপিএমের সুর অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এ দিন স্থানীয় সিপিএম নেতা মহব্বত শেখ বলেন, “আমরা তো কোনও রাজনৈতিক দলের নাম দিয়ে থানায় অভিযোগ করিনি। শুধুমাত্র সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম।” তবে সিপিএমকে পাল্টা দিয়ে লক্ষ্মীপুরেরই বাসিন্দা তৃণমূল নেতা প্রদীপ চট্টোরাজ বলেন, “আমরা সিপিএমের কায়দায় খুন-খারাপির রাজনীতি করি না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল টুটুল ঠিক ফিরে আসবে এবং সঠিক তথ্য প্রকাশ পাবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেলেই কাটোয়া শহরের কেশিয়া এলাকায় টুটুলকে দেখা যায়। খবর পেয়েই কেশিয়ায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে টুটুলের দেখা পায় নি। এরপর থেকেই কেশিয়া ও লাগোয়া এলাকা কাটোয়া স্টেশনে নিজেদের লোক রেখে দিয়েছিল পুলিশ। এছাড়া মুর্শিদাবাদের সালার-সহ বিভিন্ন স্টেশনে টুটুলের ছবি দিয়ে প্রচারও করা হয়। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বুধবার গভীর রাতে আমাদের লোক টুটুলকে দেখতে পেয়ে মঙ্গলকোটের ওসিকে খবর দেয়। মঙ্গলকোটের ওসি কাটোয়া থানা ও জিআরপিকে খবর দেন। তারা গিয়ে টুটুলকে ধরে।” পরে মঙ্গলকোটের ওসি কাটোয়া থেকে টুটুলকে মঙ্গলকোটে নিয়ে যান। রাতভর জেরা করে টুটুলের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, রবিবার ভোরে মাঠে সাইকেল রাখার পর থেকেই আর কিছু মনে নেয় তাঁরা। থানাতে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে পরিজনদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনতে পারে টুটুল। তখন তাদের হাতেই টুটুলকে তুলে দেয় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy