মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার দেহ আটকানোর ক্ষেত্রে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেওয়া হোক বা ব্রিগেডে তাঁর বক্তৃতায় বাম-জনতার উত্তাল হওয়া— সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে এমন নানা ঘটনা দেখেছে রাজ্যবাসী। মীনাক্ষীকে গত লোকসভা নির্বাচন-পর্বেও রাজ্য জুড়ে প্রচারের অন্যতম মুখ হিসেবে কাজে লাগিয়েছিল সিপিএম। এ বার দলের জেলা সম্মেলন-পর্বে মীনাক্ষীকে তাঁর ‘ঘরের মাঠ’ দুই বর্ধমানের এরিয়া কমিটি আয়োজিত বিভিন্ন সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চর্চায় উঠে এসেছে দুই বর্ধমানে জমি ফিরে পেতে সিপিএমের এরিয়া কমিটিগুলির জনসংযোগের প্রয়াসও।
পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে সিপিএমের জেলা সম্মেলন আসন্ন। পূর্ব বর্ধমানে ২৭ ডিসেম্বর সমাবেশ এবং ২৮-২৯ ডিসেম্বর কালনা শহরে জেলা সম্মেলন রয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের ক্ষেত্রে কাঁকসার পানাগড় বাজারে ২৬ জানুয়ারি সমাবেশ এবং ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি সম্মেলন হবে। দু’টি সমাবেশেই প্রধান বক্তা হিসেবে থাকার কথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের। তার আগে দুই জেলাতেই এরিয়া কমিটির সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় পদযাত্রা, মিছিল ও সমাবেশ করছে সিপিএম। দুই বর্ধমানে অনেক এরিয়া কমিটির সমাবেশেই মীনাক্ষীকে বক্তা হিসেবে দেখা গিয়েছে। যেমন, পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ, দুর্গাপুর পূর্ব ৩, মন্তেশ্বর এরিয়া কমিটির মতো বেশ কিছু জায়গায় সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক, কুলটির মেয়ে মীনাক্ষী। পূর্ব বর্ধমানে গোটাদুয়েক এরিয়া কমিটির সমাবেশে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।
দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, দলের অন্যতম যুব-প্রতিনিধি মীনাক্ষীকে এই ভাবে দুই বর্ধমানে সামনে রেখে জমি উদ্ধারেরই চেষ্টা করছে সিপিএম। এরিয়া কমিটির সম্মেলনকে তারা কাজে লাগাতে চাইছে জনসংযোগের লক্ষ্যে। একদা সিপিএমের ‘গড়’ বলে পরিচিত সাবেক বর্ধমান জেলায় দল এখন ভোট-অঙ্কের নিরিখে কার্যত ‘প্রান্তিক-শক্তি’। গত লোকসভা ভোটেও তারা প্রত্যাশিত ভোট টানতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘ক্ষয়িষ্ণু’ বুথ-ভিত্তিক সংগঠনকে টানা আন্দোলনের পথে রাখতে হলে মীনাক্ষীর মতো পরিচিত ‘লড়াকু নেত্রী’কে দরকার বলেই দলের একাংশের মত। যদিও দলের মধ্যেই উল্টো মত রয়েছে যে, স্থানীয় স্তরে ‘সক্রিয়তা ’ না-বাড়লে নেতা-নেত্রী এনে কিছু হবে না।
অন্য বারের তুলনায় দুই বর্ধমানেই এরিয়া কমিটির সম্মেলন উপলক্ষে এ বার স্থানীয় ভাবে পদযাত্রা, মিছিল, সমাবেশ কিছুটা ‘বেশি’ হচ্ছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মত। আসানসোল শহর ১ ও ২, বার্নপুর, কালনা ১-সহ বিভিন্ন এরিয়া কমিটিগুলি জনসভা, সমাবেশ, আলোচনাসভা আয়োজন করেছে। কাটোয়া-সহ নানা জায়গায় হয়েছে পথসভা। পদযাত্রা হয়েছে বর্ধমান শহরেও। অন্যান্য জেলায় এরিয়া কমিটির সম্মেলন উপলক্ষে এত আয়োজন চোখে পড়ছে না। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘এরিয়া কমিটিগুলি সম্মেলনে কী করবে, তার জন্য রাজ্য স্তর থেকে কোনও নির্দেশিকা দেওয়া নেই। স্থানীয় প্রয়োজন ও পরিস্থিতির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলা নেতৃত্বের উপরেই বিষয়টি ছাড়া হয়েছে।’’
এই অবস্থায় দুই বর্ধমানে এরিয়া কমিটিগুলির আয়োজনের নেপথ্যে এক দিকে যেমন বুথ-ভিত্তিক সংগঠনকে মজবুত করার কথা বলছেন সিপিএম নেতৃত্ব, তেমনই উঠে আসছে জনসংযোগের প্রসঙ্গও। সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা নেতা তথা রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “লোকসভা ভোটের সময় থেকেই বুথ-ভিত্তিক কাজের গতি বেড়েছে। আগে তা কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল। আমাদের কমরেডরাও প্রকাশ্য সমাবেশ চাইছেন। বুথ-ভিত্তিক সক্রিয়তা বাড়ানোটাই মূল লক্ষ্য।” দলের পূর্ব বর্ধমানের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হুসেনও বলছেন, “এরিয়া-ভিত্তিক সমাবেশ বরাবরই হয়। তবে এই বার তা কিছুটা বেড়েছে। যেখানে মনে হয়েছে, সেখানেই তা করা হচ্ছে। আমাদের কথা মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সমাবেশ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy