Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

তুহিনকে ছুঁয়েই কাটোয়ায় চলা শুরু তৃণমূলের

সাত বছর পার। দরজার কড়া নেড়ে হাত জোড় করে বাড়িতে ঢুকলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। পিছু পিছু এগিয়ে এলেন বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। তাঁদের দেখে বারান্দা থেকে মাঝ উঠোনে এগিয়ে এলেন বাড়ির কর্তা শরদিন্দু সামন্ত। ধানের গোলার কাছে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে হাত জোড় করলেন। এগিয়ে গিয়ে শরদিন্দুবাবুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন মন্ত্রী ও প্রার্থী।

নিষাদদেবীর সঙ্গে কথা বলছেন স্বপনবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

নিষাদদেবীর সঙ্গে কথা বলছেন স্বপনবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৩
Share: Save:

সাত বছর পার। দরজার কড়া নেড়ে হাত জোড় করে বাড়িতে ঢুকলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। পিছু পিছু এগিয়ে এলেন বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল।

তাঁদের দেখে বারান্দা থেকে মাঝ উঠোনে এগিয়ে এলেন বাড়ির কর্তা শরদিন্দু সামন্ত। ধানের গোলার কাছে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে হাত জোড় করলেন। এগিয়ে গিয়ে শরদিন্দুবাবুর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন মন্ত্রী ও প্রার্থী।

কাটোয়ার নন্দীগ্রামের এই বাড়ির বড় ছেলেই তুহিন সামন্ত। সাত বছর আগে পাশের গ্রাম চাণ্ডুলিতে স্কুল ভোট চলাকালীন পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে কাটোয়ার তৎকালীন ওসি দেবজ্যোতি সাহা-সহ সাত সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাটোয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে চার্জগঠন হয়। আগামী ২২ মে সাক্ষীদের শুনানির দিন করার কথা আদালতের। ওই মামলার এক অভিযুক্ত লোকসভা ভোটে বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাসও।

শুক্রবার অগ্রদ্বীপে গোপীনাথের মেলায় নিজের আখড়া থেকে স্বপনবাবু সোজা চলে আসেন তুহিনের বাড়ি। সঙ্গে ছিলেন প্রার্থী সুনীল মণ্ডল, দলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রাম, যুব নেতা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। এসেই বারান্দায় টেবিলের উপর রাখা তুহিন সামন্তের ছবিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন মন্ত্রী ও প্রার্থী। কথাবার্তার মাঝেই তুহিনের স্ত্রী, কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির কংগ্রেস কর্মাধক্ষ্য নিষাদ সামন্ত তাঁদের প্রণাম করেন। নিষাদদেবীর মাথায় হাত রেখে মন্ত্রী বলেন, “আমরা আছি তোমার সঙ্গে, তোমার পরিবারের পাশে।”

কিন্তু এত দিন পরে ওই বাড়িতে কেন? সুনীলবাবুকে পাশে বসিয়ে স্বপনবাবু বললেন, “এখানে ভোটের প্রচার করতে আসিনি। এসেছি বিবেকের টানে।” তারপর নিজেই আর একটু ব্যাখ্যা করে বলেন, “বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে যেখানেই প্রচার-কর্মিসভা করছি, অবধারিত ভাবে তুহিনের কথা উঠে আসছে। সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা বলছি। বাম জমানার পুলিশ যাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল, তাঁকে প্রার্থী করে কাটোয়ার মানুষকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে সিপিএম, সে কথাও বলছি। যাঁর নামকে সামনে রেখে ভোট চাইছি, তাঁর মা-বাবাকে প্রণাম করার জন্যই আমরা এখানে এসেছি।” স্বপনবাবুর কথা শুনে চোখ ছলছল করে উঠল নিষাদদেবীর। হাতের কাছে মন্ত্রীকে পেয়ে ছেলের খুনের দোষিদের শাস্তির দাবি করলেন তুহিনের বাবা-মাও। মন্ত্রীর আশ্বাস, “তুহিন মারা যাওয়ার পরে আমি ও রাজ্য তৃণমূল নেতারা আপনাদের বাড়ি এসেছিলাম সে কথা আমাদের মনে আছে। চিন্তা করবেন না, আপনারা সঠিক বিচার পাবেন।” নিষাদদেবী বলেন, “মন্ত্রী তো বললেন, আমাদর সঙ্গে সৌজন্যমূলক দেখা করতে এসেছেন। ভাল লাগল, এত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের কথা মনে রেখেছেন। আমাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।”

তবে নন্দীগ্রামের ওই বাড়ির দেওয়ালে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত কংগ্রেসের কোনও দেওয়াল লিখন বা ফ্লেক্স চোখে পড়েনি। এমনকী তুহিনের বাড়ির দেওয়ালেও জ্বলজ্বল করছে তৃণমূলের প্রতীক ঘাসফুল। ওই দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে সুনীলবাবু বলেন, “তুহিনের বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে কাটোয়ায় ভোট প্রচার শুরু করলাম। আমরা তাঁদের কাছে সহযোগিতা প্রার্থনা করেছি।”

নেতাদের এগিয়ে দিয়ে বাড়ির কাছে একটি কালভার্টের উপর দাঁড়িয়ে শরদিন্দুবাবু বলেন, “আমার বউমা কংগ্রেসের কর্মাধ্যক্ষ। আমার কাছে তৃণমূলের নেতারা ভোট চাননি। তবে সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন। ছেলের আত্মার শান্তির জন্য আমরা তা ভেবে দেখব।”

তবে ঘটনার কথা শুনে কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “সাত বছর ধরে দেখা নেই, ভোটের সময় তুহিনের কথা মনে পড়ল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো তুহিন জায়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। ওই সময় এখনকার তৃণমূল প্রার্থী তো বামই ছিলেন। তাহলে সিপিএম আর তৃণমূলের মধ্যে তো কোনও পার্থক্যই নেই।” আর সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রার্থীকে নিয়ে আমরা গর্বিত। আমাদের নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছ।”

অন্য বিষয়গুলি:

tuhin samanta katwa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy