শাঁখাই ঘাটে পরিদর্শক দল। নিজস্ব চিত্র।
এনটিপিসির প্রস্তাবিত কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণ সামগ্রী কিংবা উন্নতমানের বিদেশী কয়লার বার্জ অজয়ের উপর দিয়ে যেতে পারবে কি না, তা খতিয়ে দেখে গেলেন অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ দফতরের (আইডব্লুএআই) প্রতিনিধিরা। শুক্রবার দুপুরে ওই দলের সঙ্গে ছিলেন কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এনটিপিসির কাটোয়া প্রকল্পের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু। কেতুগ্রামের রসুই ঘাট থেকে শাঁখাই পর্যন্ত অজয় নদের গভীরতা ও নদী পাড়ের অবস্থা খতিয়ে দেখেন তাঁরা।
এখন এনটিপিসির ফরাক্কা প্রকল্পে ইন্দোনেশিয়া থেকে উন্নত মানের কয়লা হলদিয়া থেকে জলপথেই যায়। ২০১১ সালের ১১ অগস্ট এনটিপিসির সঙ্গে অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ দফতর ও জিন্দল আইটিএফের চুক্তিও হয় এ নিয়ে। জিন্দল আইটিএফ ওই কয়লা ফরাক্কায় সরবরাহ করে। পরিবহণের কাজে যে বার্জগুলি ব্যবহৃত হয় তা অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণের। কাটোয়াতে তখনই টামির্নাল করার প্রস্তাব দেয় অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ দফতর। এনটিপিসির কাটোয়ার কর্তারা শাঁখাই ঘাটে (এখানে অজয় এসে ভাগীরথীতে মিশছে) ওই টার্মিনাল করার প্রস্তাব দেন।
তাঁদের যুক্তি ছিল, কাটোয়াতে এনটিপিসির প্রকল্প গড়ে উঠলে শাঁখাই ঘাটের ওই টার্মিনাল বিশেষ উপযোগী হয়ে উঠবে। তাঁরা জানান, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির নির্মাণ সামগ্রী থেকে কয়লা আনা, কিংবা ছাই বাইরে পাঠানোর কাজে জলপথ ব্যবহার করা যাবে। এর জন্য নিজের খরচে শাঁখাইয়ের উপর বড় লকগেট তৈরিরও প্রস্তাব দেন এনটিপিসি। ঠিক হয়, ওই লকগেটের পাশ দিয়েই ভাগীরথী থেকে জলের পাইপ প্রকল্প এলাকার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হবে। আর লকগেট থাকায় সারা বছরই অজয়ে পর্যাপ্ত জলও থাকবে। ফলে বার্জ চলাচলেও অসুবিধে হবে না। তাঁদের আরও দাবি ছিল, কয়লা নামানোর জন্য ফরাক্কায় ভাগীরথীর ফিডার ক্যানালের উপর ‘ডক’ বানানো হয়েছে। সে ভাবে অজয়ের রসুই ঘাটের কাছেও ‘ডক’ বানানোর প্রস্তাব দেন তাঁরা। কারণ রসুই ঘাট থেকে প্রকল্প এলাকা একেবারে ঢিল ছোড়া দূরত্বে।
অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা যায়, বার্জ চালাতে মোটামুটি ভাবে আড়াই মিটার গভীরতা প্রয়োজন। অজয়ের গভীরতা দু’মিটারের মতো। দফতরের অধিকর্তা এস ভি কে রেড্ডি বলেন, “অজয়ে বছরে চার মাস জল থাকে। আমরা প্রাথমিক ভাবে দেখে গেলাম। প্রযুক্তিগত বিষয়টি দেখছি। এনটিপিসিও আমাদের এ ব্যাপারে বিস্তারিত সাহায্য করবে। তারপরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এই প্রকল্পের জন্য রেলকে ইতিমধ্যে ১১২কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা দিয়েছে এনটিপিসি। এ ছাড়াও সড়কপথ উন্নত করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। তারপরে জলপথে পরিবহণেরও প্রয়োজন রয়েছে কি? এনটিপিসির কাটোয়া প্রকল্পের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু বলেন, “জলপথ দিয়ে কয়লা বা নির্মাণ সামগ্রী এলে সংস্থা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান হবে।” সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া ঘিরে যে সব ট্রেন লাইন রয়েছে, তা সবই সিঙ্গল লাইন। ফলে ওই লাইন দিয়ে কয়লা বা নির্মাণ সামগ্রী এলে সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হবে। অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ সূত্রেও জানা গিয়েছে, রেলের তুলনায় জলপথ পরিবহনের খরচ ৩১ শতাংশ কম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy