Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Bangladesh Protest

চিকিৎসার জন্য বহু কষ্টে সীমান্ত পেরিয়ে আসছেন বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশ প্রবল ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল। তার ছাপ পড়েছে সীমান্তেও। শুক্রবার সাধারণত পণ্যবাহী গাড়ির যাতায়াত বন্ধ থাকে। কিন্তু লোক যাতায়াত চলে। সীমান্ত পেরিয়ে এ দিন যাতায়াতের সংখ্যা ছিল অন্য সময়ের অর্ধেক।

অশান্ত বাংলাদেশ।

অশান্ত বাংলাদেশ। —ফাইল ছবি।

সীমান্ত মৈত্র   , নির্মল বসু 
পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৩
Share: Save:

পুরো রাস্তাটাই প্রায় ফাঁকা। যানবাহন, মানুষজন— কোনও কিছুরই বিশেষ দেখা নেই। এতটা পথ মোটরবাইকে এলেন? ‘‘উপায় নেই। গাড়িঘোড়া সব বন্ধ। কী করব বলুন?’’ বলছিলেন ইয়াকুব মণ্ডল। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বেনাপোল সীমান্তে এসেছেন বাইকে চেপেই।

একা ইয়াকুবই নন। বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর কাছেই বাড়ি মহম্মদ ইসাক দেওয়ানের। তিনিও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন তিন বার অটো এবং দু’বার বাস পাল্টে। চিকিৎসা করাতেই ভারত আসছিলেন ইসাক। বলছিলেন, ‘‘সাধারণ সময়ে হলে বেনাপোল দিয়ে বাতানুকূল বাসে কলকাতা চলে যেতাম। কিন্তু এখন তো সে জো নেই।’’ ঢাকা থেকে বেনাপোল সাড়ে চার ঘণ্টার পথ তিনি পাড়ি দিয়েছেন প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টায়।

বাংলাদেশ প্রবল ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল। তার ছাপ পড়েছে সীমান্তেও। শুক্রবার সাধারণত পণ্যবাহী গাড়ির যাতায়াত বন্ধ থাকে। কিন্তু লোক যাতায়াত চলে। সীমান্ত পেরিয়ে এ দিন যাতায়াতের সংখ্যা ছিল অন্য সময়ের অর্ধেক। সে দৃশ্য যেমন দেখা যায় উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল ও ঘোজাডাঙা সীমান্তে, তেমনই দেখা গিয়েছে নদিয়ার গেদে বা কোচবিহার সীমান্তেও। বেশিরভাগই এসেছেন চিকিৎসা করাতে। যেমন ইসাক। যেমন কুষ্টিয়ার বাসিন্দা রিয়াজুদ্দিন রাজু। তিনি এসেছেন অসুস্থ ছেলের জন্য ওষুধ নিতে। কুষ্টিয়া শহরে বৃহস্পতিবার রাতেই ব্যাপক গোলমাল হয়। রিয়াজুদ্দিনের কথায়, ‘‘বাড়িতেই ছিলাম। হঠাৎ শুনি পরপর গুলির শব্দ। তখনও জানি না, কী ভাবে পরদিন গেদে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছব!’’ চলে তো এসেছেন। ওষুধ নিয়ে শনিবার বাড়ি ফিরবেন কী ভাবে, সেই চিন্তায় ডুবে রিয়াজুদ্দিন।

ঘোজাডাঙায় গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকার বাসিন্দা ফজলুল হক, আর্শাদ হোসেনের কথায়, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলন চলছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ একাধিক ক্যাম্পাসে। এখন এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এই অবস্থায় চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনও কারণে ভারতে আসার কথা ভাবতে পারছি না আমরা।’’ একই কথা বললেন ঘোজাডাঙা সীমান্তে অভিবাসন দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকার বাসিন্দা ফারুক গাজি, রুকসানা বিবিরা। সাধারণত এক দিনে এই সীমান্ত দিয়ে পাঁচ-ছ’শো জন পারাপার করেন। ‘‘বাংলাদেশে গন্ডগোলের ফলে শুক্রবার সে সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে আড়াইশোয়,’’ বলেন, সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিক। এ দিন পেট্রাপোল সীমান্তেও লাইন ছিল না। বাংলাদেশ থেকে হাতেগোনা কয়েক জন এসেছেন মূলত জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনে। এ দেশে থাকা বাংলাদেশিরাও দেশে ফিরেছেন একরাশ আতঙ্ক নিয়ে।

কোচবিহারেও মোট ৩৩ জন সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছেন। এঁরা মূলত রংপুরের মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। এঁদের মধ্যে ভারত ছাড়াও নেপাল, ভুটানের লোকজনও রয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের সাকির আনসারি বলেন, ‘‘বুধবার রংপুর মেডিক্যাল কলেজ নোটিস দিয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্লাস বন্ধের কথা জানায়। বাড়ি ফেরা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। শুক্রবার বাড়ি এসেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Protest Petrpole Benapole
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE