কেউ আগ্রহী নন। কেউ থাকতে পারবেন না অনুষ্ঠানে। তাই বাদ গেল নাম। কেউ আবার ‘ফটো-ফিনিশে’ আচম্বিতে ঢুকে পড়লেন ভূষণ-তালিকায়।
মাঝখানে মাত্র একটা দিন। আগামিকাল, বুধবার রাজ্য সরকারের ‘ভূষণ পুরস্কার’ অনুষ্ঠান। তার আগে সোমবার পর্যন্ত পুরস্কার প্রাপকদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে হিমসিম খেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসন। ওই তালিকা নিয়ে শেষ মুহূর্তেও বিস্তর কাটাছেঁড়া চলেছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
এই কাটাছেঁড়ার জেরে একেবারে শেষ মুহূর্তে কবীর সুমন, দেব-দের সঙ্গে পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন কবি সুবোধ সরকার। সোমবার নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ দিনই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সুবোধ সরকারের নাম তালিকাভুক্ত করতে বলা হয়েছে।’’ রাজ্যে পালাবদলের পরেও বেশ কিছু দিন পর্যন্ত বাম-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন সুবোধবাবু। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ধর্মতলায় একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে শুরু করে তৃণমূলের ভোটের প্রচারেও সামিল হন। তাই নবান্নের কর্তাদের একাংশের মতে, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণেই অনেক কবি-সাহিত্যিককে টপকে বঙ্গভূষণের তালিকায় জায়গা করে নিলেন সুবোধবাবু।
সুবোধবাবুর নাম অন্তর্ভুক্তির দিনেই আবার বাদ গিয়েছে বলিউডের চিত্রপরিচালক প্রদীপ সরকারের নাম। ‘পরিণীতা’, ‘মর্দানি’র মতো ছবির পরিচালক প্রদীপবাবু আগেই জানিয়েছিলেন, বুধবারের অনুষ্ঠানমঞ্চে তিনি হাজির থাকতে পারবেন না। পরিবর্তে তাঁর কোনও আত্মীয় পুরস্কার নিতে আসতে পারেন। এই কথা শুনে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের ওই কর্তা বলেন, ‘‘সরাসরি এসে পুরস্কার না নিলে সাধারণত ভূষণ পুরস্কার দেওয়া হয় না।’’ স্পষ্টত, সেই কারণেই বাদ গিয়েছেন প্রদীপবাবু। এর ব্যতিক্রম ঘটতে পরে একমাত্র বয়সের কারণে।
সেই ব্যতিক্রমী ভাবেই দুই প্রবীণ কৃতীর বাড়িতে ভূষণ সম্মান পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এঁরা হলেন সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরী এবং বিশ্বশ্রী ব্যায়ামবীর মনোহর আইচ। রমাপদবাবুর বয়স নব্বই পেরিয়েছে। একশো পেরিয়েছেন মনোহরবাবু। শারীরিক কারণেই দু’জনে আসতে পারবেন না। তাই পুরস্কার যাবে তাঁদের বাড়িতে। এ বছর মরণোত্তর বঙ্গবিভূষণ দেওয়া হচ্ছে নজরুলগীতি শিল্পী ফিরোজা বেগমকে। প্রয়াত শিল্পীর হয়ে সম্মান গ্রহণ করতে বাংলাদেশ থেকে আসার কথা তাঁর আত্মীয়া ও ছাত্রী সুস্মিতা আনিসের।
ভূষণ সম্মানের প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী এবং বিজ্ঞানী অশোক সেন। দু’জনেই আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। উপরন্তু প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ জানিয়ে দেন, তিনি এই পুরস্কারের ব্যাপারে আগ্রহী নন। ফলে দু’জনের নামই বাদ যায়। আইপিএল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাদ পড়েছেন অরুণলাল এবং ঋদ্ধিমান সাহাও। তবে আর এক ক্রীড়াবিদ, সৈয়দ নইমুদ্দিনের নাম তালিকায় রয়েছে। প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ নইম বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন। ২০ তারিখ পুরস্কার নিতে তাঁর আসার সম্ভাবনা কম। তবে সরকারকে নইম জানিয়েছেন, তিনি আসার চেষ্টা করবেন। সম্ভবত সেই কারণেই তালিকায় তিনি রয়ে গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধু তালিকা নয়, পুরস্কার মূল্য নিয়েও এ বার শেষ পর্যন্ত টানাপড়েন চলেছে। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী কাছে এ বার পুরস্কারমূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। এত দিন পর্যন্ত বঙ্গবিভূষণ এবং বঙ্গভূষণ প্রাপকেরা পেতেন যথাক্রমে দুই এবং এক লক্ষ টাকা। এ বার তা বাড়িয়ে পাঁচ এবং দু’লক্ষ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেন।
কেন পুরস্কারমূল্য বাড়াতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী? নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা ভোটের আর এক বছরও নেই। এই অবস্থায় ভোটের আগে আরও অনেক পুরস্কার দেওয়ার এবং উৎসব করার ভাবনা আছে মুখ্যমন্ত্রীর। সেই খরচের কথা মাথায় রেখেই এ বার আর আর্থিক মূল্য বাড়াতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy