Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ফের জামিন খারিজ নির্যাতিতার স্বামীর

তাঁরা অন্য অপরাধ মূলক ঘটনায় অভিযুক্ত। তাই সাত্তোরের নির্যাতিতার স্বামী-সহ বাকি চার জনের জামিন মঞ্জুর হল না সোমাবারও। একই কারণে, গত শুক্রবারও তাঁদের জামিন না মঞ্জুর হয়েছিল। জেল হেফাজতে থাকা তাঁদের জামিনের জন্য এ দিন আবেদন জানিয়ে ছিলেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৮
Share: Save:

তাঁরা অন্য অপরাধ মূলক ঘটনায় অভিযুক্ত। তাই সাত্তোরের নির্যাতিতার স্বামী-সহ বাকি চার জনের জামিন মঞ্জুর হল না সোমাবারও। একই কারণে, গত শুক্রবারও তাঁদের জামিন না মঞ্জুর হয়েছিল। জেল হেফাজতে থাকা তাঁদের জামিনের জন্য এ দিন আবেদন জানিয়ে ছিলেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়।
অন্য দিকে ধৃতদের জামিনের বিরোধিতা করেন পাবলিক প্রসিকিউটর রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কুন্তল চট্টোপাধ্যায়। দু’পক্ষের সাওয়াল জবাব শোনার পর এ দিন সিউড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যজিস্ট্রেট (সিজেএম) ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় জামিন নামঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই সন্ধ্যায় সাত্তোরের নির্যাতিতা তার স্বামী ও শাশুড়ি-সহ ছ’জনকে পুলিশ ধরেছিল। তৃণমূল কার্যালয়ে বোমা রয়েছে, এই দাবি করে বোমা উদ্ধারের দাবিতে সাত্তোর বাসস্টপ এলাকায় রাস্তা অবরোধ করছিল বিজেপি। সেখানেই ছিলেন নির্যাতিতা-সহ অন্যান্যরা ছিল বলে পুলিশের দাবি। সেই অবরোধ তুলতে এলে নির্যাতিতা-সহ সকলেই নাকি সরকারি কাজে বাধা দেওয়া পুলিশ কর্মীদের হেনস্থা করা বোমা ছোড়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ওই ছয়জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দেওয়া হয় একাধিক জামিন অযোগ্য ধারাও।
ঘটনার পর, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনায় সরব হন বিরোধী সব রাজনৈতিক দলগুলি। যেহেতু মাসকয়েক আগে বোমাবাজিতে অভিযুক্ত এক বিজেপিকর্মীর খোঁজে তার কাকিমার(ওই বধূ) বাপের বাড়ি বুদবুদের কলমডাঙায় গিয়ে তাঁর উপর মধ্যযুগীয় অত্যাচার চালিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। যে ঘটনা এখনও বিচারাধীন।

পুলিশের নির্যাতনের স্বীকার সেই নির্যাতিতার বিরুদ্ধেই পুলিশ কর্মীকে হেনস্থা করা ও বিস্ফোরক রাখা ও ফাটানোর মত একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযোগ এনেছে পুলিশ বলে প্রতিবাদ জোরালো হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবারে ঘটনার কেস ডায়েরি আদালতে জমা পরলেও ওই বধূ-সহ কারও বিরুদ্ধেই তেমন কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। এমনকী, যে বিস্ফোরক আইনের ধারা প্রয়োগ নির্যাতিতা-সহ সকলের বিরুদ্ধে করেছিল পুলিশ। তারও উপযুক্ত ভিত্তি না থাকায় সরকারি দুই আইনজীবীর বিরোধিতা সত্বেও অভিযু্ক্ত পক্ষের আইজীবীর সাওয়ালের জেরে শর্ত সাপেক্ষে জামিন পান নির্যতিতা ও তাঁর শাশুড়ি।

একই মামলায় দু’জনকে জামিন দেওয়া হলে বাকিদের কেন নয়, এই প্রশ্ন তুলে সোমবার সিউড়ির সিজেএমের এজলাসে আবেদন করেন অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি বিচারককে বলেন, ‘‘ওই মামলায় পুলিশ নতুন কিছু পেশ করতে পারেনি অভিযুক্তদের ব্যাপারে। ঘটনায় নির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলতে পারেনি পুলিশ। না তাঁদের রিমাণ্ডে চাওয়া হয়েছে। তাহলে শুধু শুধু অভিযু্ক্তদের গরাদের পিছনে রেখে এই মামলার অগ্রগতি কী।’’

ধৃতদের জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায় ও পাবলিক প্রসিকিউটর রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁরা বলেন, ‘‘অভিযুক্তরা শুধু এই ঘটনায় নয় এলাকায় ঘটে যাওয়া অন্যান্য অপরাধের ঘটনায় অভিযুক্ত। তার মধ্যে খুনের মামলাও রয়েছে। ছাড়া পেলে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হবে। তাই তাঁদের জামিন যেন আদালত মঞ্জুর না করে।’’

দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক অভিযুক্ত বাকি চার জনের জামিন না মঞ্জুর করে ঘটনার তদন্তকারী অফিসারকে নির্দেশ দেন, তিনি যেন আগামী ১৭ তারিখ পুঙ্খানুপুঙ্খ কেস ডায়েরি জমা দেন। সঙ্গে অভিযু্ক্তদের অন্য যে যে মামলায় অভিযুক্ত তার বিশদ বিররণ। এ কাজে পাড়ুই থানার ওসিকে তদন্তকারি আধিকারিককে সাহায্য করার নির্দেশ দেন বিচারক।

অন্য দিকে, জামিনে থাকলেও নতুন কোনও নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে প্রত্যেক দিন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে নির্যাতিতা ও তাঁর শাশুড়িকে। মঙ্গলবার নির্যাতিতা হাইকোর্টে যাবেন একটি হলফনামা দিতে। যাবেন তাঁর অসুস্থ শাশুড়িও।

সোমনাথ বাবু আবেদন ক্রমে আগামী দু’দিন ওঁদের দুজনের জন্য আদালতে হাজিরা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন বিচারক। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ১৭ তারিখ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE