দিলীপের সমালোচনায় মুখ খুললেন বাবুল।
ক্রমশ প্রকাশ্যে বিজেপির অন্দর মহলে শুরু হওয়া তুমুল সঙ্ঘাত। দিলীপ ঘোষের ‘গুলি করে মারব’ মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে সোমবার সকালেই বিস্ফোরক টুইট করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। দিলীপ-সহ রাজ্য বিজেপির আরও অনেক শীর্ষনেতাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, বাবুলের মন্তব্য গুরুত্বহীন। কিন্তু বেলা গড়াতেই অন্য মোড় নিল পরিস্থিতি। সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত রিটুইট করলেন বাবুলের টুইট। স্পষ্ট বোঝা গেল, আসানসোলের সাংসদ একা নন, বিজেপির অন্দরে আরও অনেকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাতে চাইছেন দলের রাজ্য সভাপতিকে।
সোমবার সকালে দিলীপের মন্তব্য প্রসঙ্গে টুইট করেন বাবুল। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। উনি যা বলেছেন তার পুরোটাই কাল্পনিক। যত বড় কারণই হোক না কেন, উত্তরপ্রদেশ, অসমে বিজেপি সরকার কখনওই মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়নি। দিলীপদা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো মন্তব্য করেছেন।’’
BJP, as a party has nothing to do with what a DIlipGhosh may hv said•It is a figment of his imagination&BJP Govts in UP, Assam hv NEVER EVER resorted to shooting people for whatever reason whatsoever•Very irresponsible of DilipDa to hv said what he said https://t.co/aXF8pmJtAR
— Babul Supriyo (@SuPriyoBabul) January 13, 2020
বাবুল সুপ্রিয়র টুইট
বাবুল সুপ্রিয়র মন্তব্যকে অবশ্য গুরুত্ব দেননি রাজ্য বিজেপির সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘যিনি যেমন বোঝেন, তিনি তেমন বলেন। আমার যা মনে হয়েছে, আমি তাই বলেছি। আমাদের সরকার ওখানে যা করেছে, আমরা ক্ষমতায় এলে এখানেও তাই করব।’’
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য দিলীপের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলছেন, ‘‘ভবিষ্যতে আমরা ক্ষমতায় এলে কী হবে সেটা ভবিষ্যৎই বলবে।তা নিয়ে এখন অত ভাবার দরকার নেই।তবে বাবুল সুপ্রিয়কে যাঁরা হেনস্থা করেছেন, আমরা তাঁদেরও যেমন ছেড়ে কথা বলব না, তেমনই যাঁরা সম্প্রতি গোটা রাজ্যে উপদ্রব করছেন, তাঁদেরও ছেড়ে কথা বলব না।"
কিন্তু দিলীপের বিরুদ্ধে বাবুলের এই প্রকাশ্য মন্তব্যকে কী চোখে দেখছে দল?
রাজ্য বিজেপি সে বিষয়েও স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে গিয়েছে।সায়ন্তন বলছেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ যা বলছেন, তা দিলীপ ঘোষের কল্পনা বলে যদি কেউ মনে করেন, তা হলে আপত্তি করার কিছু নেই।আবার দিলীপ ঘোষ যা বলছেন, তা নিয়েও আপত্তি করার কিছু নেই।"
এই আবহে বিজেপির অবস্থান স্পষ্ট করতে বলে টুইট করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বাবুল সুপ্রিয়র টুইটারে অভিষেক লিখেছেন, ‘‘যদিও দিলীপ ঘোষ তাঁর দলের চরিত্র যথাযথ বর্ণনা করেছেন, তাঁদের সাংসদই তা প্রকাশ্যে খণ্ডন করেছেন। এতে বাংলায় বিজেপিকে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই যথেষ্ট প্রশ্ন উঠছে। দিলীপবাবু দয়া করে আমাদের জানান, আপনার এই মন্তব্যকে আমরা ব্যক্তিগত হিসাবে ধরব না দলের বক্তব্য বলে মেনে নেব?’’
Although @DilipGhoshBJP correctly characterized his party, his own MP refuting his stance publicly raises serious doubts over his credibility to lead BJP in Bengal.
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) January 13, 2020
Dilip Babu please let us ALL know if your statements are to be seen as personal opinion or views of your party. 🙏🏻 https://t.co/4rHvQ29HHm
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট
রবিবার রানাঘাটে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর সমর্থনে প্রচারে গিয়ে বিতর্কিত ওই মন্তব্য করেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে পাঁচশো-ছ’শো কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করা হয়েছে। অসম, কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশে শয়তানদের গুলি করা হয়েছে। তাদের জেলে ভরা হয়েছে। এই রাজ্যে কাউকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়নি।’’ এর পরেই এ রাজ্যের বিক্ষোভকারীদের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘এখানে আসবে, থাকবে, খাবে আবার সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করবে! আমরা এলে লাঠি মারব, গুলি করব, জেলে পাঠাব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও মুরোদ নেই।’’
দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়র সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’, তা রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে অনেকেরই জানা। লোকসভা নির্বাচনের আগে মেদিনীপুরে নরেন্দ্র মোদীর জনসভার দিন বাবুল-দিলীপের প্রকাশ্য কথা কাটাকাটির ছবি গোটা বাংলা দেখেছিল। পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবুল সুপ্রিয় হেনস্থা হওয়ার পরে দিলীপ বাবুলের পাশে দাঁড়িয়ে যে সব মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়। তাঁর হেনস্থার নিন্দা করতে গিয়ে দিলীপ কেন এমন বিতর্কিত কথা বলছেন, যা দলেরই বিপক্ষে যাচ্ছে— এমন প্রশ্নও দলের অন্দরে তুলেছিলেন বাবুল। জানা গিয়েছিল বিজেপি সূত্রে। তবে এ বার যে ভাবে বিস্ফোরক টুইট করে দিলীপকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ আখ্যা দিলেন বাবুল, এর আগে কখনও ততটা উত্তপ্ত হয়নি পরিস্থিতি।
দিলীপ ঘোষ নিজে যে ভাবে বাবুলের মন্তব্য নস্যাৎ করেছিলেন, যে ভাবে সায়ন্তন বসুও দিলীপের পাশে দাঁড়ান, তাতে প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন— বাবুল যা বলেছেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত মত। বাবুল দলে একা পড়ে গিয়েছেন বলেও ধারণা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু স্বপন দাশগুপ্তের মতো অত্যন্ত প্রভাবশালী সাংসদ বাবুলের টুইটকে রিটুইট করায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, দিলীপের জন্য পরিস্থিতি খুব সহজ নয় এই মুহূর্তে। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ, দু’জনেরই পছন্দের পাত্র রাজ্যসভার সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে স্বপনের মতামতের গুরুত্বও যথেষ্ট। আর এ রাজ্যে বিজেপির নিয়ন্ত্রক বা সামনের সারির মুখ যাঁরা, তাঁদের মধ্যে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, বাবুল সুপ্রিয়-সহ অনেকের সঙ্গেই স্বপন দাশগুপ্তর সম্পর্ক বেশ ভাল। সুতরাং দিলীপ ঘোষকে যে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে, স্বপনের রিটুইটের পরেই সে ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy