প্রতীকী ছবি।
অন্ধ হলে যে প্রলয় বন্ধ থাকে না, আবার সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আর্সেনিক।
অথচ বছর পনেরো আগেই অশনি-সঙ্কেত দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। জানিয়ে দিয়েছিল, ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের সহনমাত্রা প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হলেই বিপদ। কিন্তু সমূহ বিপদ বুঝেও সেই হুঁশিয়ারিকে আমল না-দিয়ে প্রতি লিটারের ৫০ মাইক্রোগ্রামের মানদণ্ড আঁকড়ে বসে ছিল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। সেই মাপকাঠিতে রাজ্যের ৮৩টি ব্লক আর্সেনিক-কবলিত। কিন্তু চুপিসারে বিপদের থাবা এসে পড়েছে ঘাড়ে। কেন্দ্র এত দিনে মেনে নিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকাই ঠিক। ৫০ নয়, আর্সেনিকের সহনমাত্রা প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রামই। সঙ্গে সঙ্গেই প্রকট হয়ে গেল রাজ্যের আর্সেনিক-দূষণের ভয়ঙ্কর ছবি। ৮৩ নয়, বাংলার ১৩০টি ব্লক আর্সেনিকের কবলে! আন্তর্জাতিক সহনমাত্রা এক টানে ছিপিটা খুলে দিতেই যেন সটান বেরিয়ে এল বোতলবন্দি আর্সেনিক-দানবের কালান্তক অবয়ব।
৫০ মাইক্রোগ্রামের নিজস্ব মাপকাঠি আঁকড়ে থাকলে যে চলবে না, মানতে হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড— সেটাই সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। সেই সুপারিশ অনুসারে কেন্দ্র সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছে, দেশের সর্বত্রই হু-র নির্ধারিত সহনমাত্রা মেনে আর্সেনিকের বিপদ মাপতে হবে এবং তার মোকাবিলার ব্যবস্থা করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্সেনিক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান কুমারজ্যোতি নাথ জানাচ্ছেন, আর্সেনিক-দূষণ নির্ধারণের মানদণ্ড কঠোর হওয়ায় রাজ্যের অনেক নতুন এলাকাই এখন আর্সেনিকের থাবার আওতায় এসে যাচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, নতুন মানদণ্ডে প্রায় ১৩০টি ব্লক আর্সেনিক-কবলিত। সেই বিচারে আর্সেনিক ঠেকাতে কেন্দ্রের বাজেট-বরাদ্দ যত হওয়া উচিত ছিল, ততটা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন কুমারবাবু। জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল কর্মসূচিতে ২০১৭-’১৮ সালের বাজেট-বরাদ্দ ছ’হাজার ৫০ কোটি টাকা।
এ দেশে ভূগর্ভস্থ জলে প্রথম আর্সেনিক ধরা পড়ে পশ্চিমবঙ্গেই। মাটির গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই মহাবিপদ সামনে আসে আশির দশকে। পরবর্তী কালে গঙ্গার পূর্ব পাড় বরাবর প্রতিটি রাজ্যেই ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক-দূষণ ধরা পড়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গেই আর্সেনিক-কবলিত এলাকা সব থেকে বেশি। কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী ২১টি রাজ্যের ১৫৩টি জেলার প্রায় ২৪ কোটি মানুষ আর্সেনিক-দূষিত জল পান করেন। ‘ইনস্টিটিউশন অব পাবলিক হেল্থ ইঞ্জিনিয়ারস, ইন্ডিয়া’ (আইপিএইচই) জানাচ্ছে, এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা সব চেয়ে গুরুতর। এই রাজ্যে গ্রামের এক কোটি ৬০ লক্ষ এবং শহরের এক কোটি ২০ লক্ষ মানুষ আর্সেনিক-কবলিত এলাকায় বসবাস করেন।
উটপাখির মতো বালিতে মুখ গুঁজে না-থেকে আর্সেনিকের স্বীকৃত সহনমাত্রা অবশেষে কবুল করেছে কেন্দ্র। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কিন্তু এখনও আর্সেনিক-প্রবণ ব্লক বেড়ে যাওয়ার তত্ত্ব মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘সাত বছর আগে আমরা ৮৩টি ব্লকে আর্সেনিক মোকাবিলার কাজ শুরু করেছিলাম। সবটা যে করে উঠতে পেরেছি, তা নয়। তবে অনেক ব্লকেই আর্সেনিক-দূষণ ঠেকানো গিয়েছে। দূষণের মাত্রা মাপার মাপকাঠি যা-ই হোক, এখন এত ব্লক (১৩০) মোটেই আর্সেনিক-কবলিত নয়।’’ সুব্রতবাবু জানান, আর্সেনিক-দূষণের মোকাবিলায় রাজ্যে বছরে দু’হাজার কোটিরও বেশি টাকা খরচ করা হয়। এর একটা অংশ কেন্দ্র দেয় ঠিকই। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের মতো কিছু সংস্থাও টাকা দেয়।
আইপিএইচই এবং মার্কিন মুলুকের লিহাই বিশ্ববিদ্যালয় বুধবার সল্টলেকে যৌথ আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল। সেখানে লিহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক অরূপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘যে-সব জেলা ও গ্রামে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি, সেখানে ভূগর্ভ ছেড়ে জলের জন্য অন্য উৎসের খোঁজ করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy