Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Anubrata Mandal

Cattle Smuggling: গরু পাচার নিয়ন্ত্রণ করা হত দু’টি পশু হাট থেকে, জড়িত ছিলেন কেষ্টবিষ্টুরা, বলছে সিবিআই

সূত্রের খবর, ওড়িশা এবং পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার হয়ে যে-সব গরু বীরভূমে আনা হয়, সেগুলির বেশির ভাগই ইলামবাজার পশুহাটে আসত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২২ ০৬:১৮
Share: Save:

বীরভূমে দু’টি বড় পশু হাট। অভিযোগ, সেখান থেকেই ‘নিয়ন্ত্রিত’ হত গরু পাচার। তদন্তে নেমে এমনই জানতে পেরেছে সিবিআই। জানতে পেরেছে, এর সঙ্গে কী ভাবে জড়িত ছিলেন পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশ এবং শাসক দলের কেষ্টবিষ্টুরা।

যদিও এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি জেলার পুলিশ, প্রশাসনের কেউই। বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘আমি সেই সময় দায়িত্বে ছিলাম না। তাই এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে আমার মনে হয়, অভিযোগ থাকলে পুলিশ নিশ্চয় তার ব্যবস্থা নিয়েছে অতীতে।’’

একটি পশু হাট ইলামবাজার ব্লকের সুখবাজারে। অন্যটি মুরারই ২ ব্লকের হিয়াতনগরে। এর মধ্যে সুখবাজার আকার-আয়তনে এবং কারবারের অঙ্কে বিশাল। দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, এই হাট থেকে মুর্শিদাবাদ-সহ বিভিন্ন জেলায়, এমনকি, পড়শি দেশেও গরু পাচার হয়। এই হাট এবং তার সঙ্গে যুক্ত কিছু নাম, যাঁরা অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বলে শোনা যায়, সে-সবই এখন সিবিআইয়ের নজরবন্দি।

তেমনই এক গরু ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে এই মামলায় সিবিআইয়ের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে। তিনি ওখানকার গরু পাচার সিন্ডিকেটের ‘মাথা’ বলেই জানা যাচ্ছে। সুখবাজারে তাঁর পেল্লায় বাড়ি। ইলামবাজার থেকে বোলপুর যাওয়ার রাস্তার ধারে একটি বিরাট মার্বলের শো-রুম আছে। বোলপুরে প্রচুর জমির মালিকও তিনি, এমনটাও বিভিন্ন গরু কারবারির সূত্রে জানা যাচ্ছে। এঁর সঙ্গেই অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে দাবি সিবিআইয়ের। সেহগালের নামও চার্জশিটে রয়েছে।

সূত্রের খবর, ওড়িশা এবং পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার হয়ে যে-সব গরু বীরভূমে আনা হয়, সেগুলির বেশির ভাগই ইলামবাজার পশুহাটে আসত। সরকারি ভাবে ইলামবাজারের পশুহাট সপ্তাহে এক দিন (শনিবার) খোলা থাকার কথা। জেলার বিভিন্ন অংশের চাষিরা সেখান থেকে চাষের জন্য বলদ বা বাড়িতে পোষার জন্য গরু কেনেন। কিন্তু, পাচার কারবার শুরু হওয়ার পরে সেই হাট সপ্তাহের প্রায় সাত দিনই খোলা থাকত বলে অভিযোগ। অভিযোগ, গরু কিনে ট্রাকে পাচারের ব্যবস্থা ছিল এবং আরও অভিযোগ, পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হত পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের সহযোগিতায়। রাস্তায় যাতে পুলিশ না ধরে সেই জন্য দিনে কোনও একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকাকে প্যাড হিসাবে ব্যবহার করা হত। তাতে সে দিনের তারিখ, গাড়ির নম্বর লিখে দেওয়া হত। তেমন প্যাড দেখিয়ে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় ডিএম, এসপির কাছে অভিযোগও করেছিলেন জেলা কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা।

ইলামবাজার থেকে জাতীয় সড়ক ধরে বা বোলপুর হয়ে গরু পৌঁছত নলহাটি। সেখান থেকে চাতরা হয়ে হিয়াতনগর রোড সংলগ্ন গরুর হাটে। পাচারের আগে গরুগুলিকে সেখানেই বিশ্রামে রাখা হয়। সেই জায়গাকে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা ‘আরডি’ বলেন। ‘বাংলা খাটাল’ নামেও পরিচিত। কারবারিদের থেকে জানা গিয়েছে, গরুগুলিকে দেখাশোনা করার জন্য সেখানে লোকজন থাকত। সীমান্ত থেকে ‘সিগন্যাল’ (কোন রাতে গরু আন্তর্জাতিক সীমানা পার হবে) পেলেই রাতের অন্ধকারে গরুগুলিকে ট্রাকে চাপিয়ে হিয়াতনগর মোড়, ওমরপুর হয়ে জঙ্গিপুর নিয়ে যাওয়া হত। অন্য একটি পথ ছিল সাগরদিঘি। তখন হিয়াতনগর মোড় দিয়ে না গিয়ে নলহাটি, মোরগ্রাম হয়ে সাগরদিঘি ঢুকত গরু বোঝাই ট্রাক। নির্দিষ্ট রাতে এক ঘণ্টা বা দু’ঘণ্টা সীমান্তের চোরা পথ কার্যত ‘খুলে’ দেওয়া হত। গরু চলে যেত ও-পারে। সীমান্তে বিএসএফের একাংশের মদতেই এই কাজ হয় বলে অভিযোগ।

গরু কারবারিদের একাংশের দাবি, এই পাচারের সূত্র ধরে ওঠে কোটি কোটি টাকা। সে টাকা ভাগ হয় স্থানীয় থানা থেকে শাসকদলের নেতাদের একাংশের মধ্যে। বাম আমলে এ কারবার চললেও তার রমরমা ২০১৩ থেকে ’১৯ সাল পর্যন্ত। সেই সময় খোলা ট্রাকে করেই গরু পাচার চলেছে। ’১৯ সালের শেষ ভাগ থেকে কারবারে কিছুটা ভাটা চলছে।

বীরভূম গরু পাচারের করিডর হওয়ায় এ জেলার গরু পাচারকারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে পড়শি দেশের পাচারকারীদের। অভিযোগ, তাদের কেউ কেউ বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে বীরভূমে এসে ‘চুক্তি’ও সেরে গিয়েছেন আগে।

অন্য বিষয়গুলি:

Anubrata Mandal Cattle Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy