Advertisement
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফের হুমকি অনুব্রতের

যা শুনে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘দলীয় কর্মী মার খাওয়ায় উত্তেজনা ছিল। এই পরিস্থিতিতে কে কী বলেছেন, সেটা বড় নয়।’’

পুলিশকে সময় বেঁধে দিচ্ছেন অনুব্রত। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

পুলিশকে সময় বেঁধে দিচ্ছেন অনুব্রত। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৪১
Share: Save:

ফের চেনা চেহারায় অনুব্রত মণ্ডল। ‘পুলিশকে বোম মারুন’ বলা নেতা এ দিন পুলিশকে গ্রেফতারির সময়ও বেঁধে দিয়েছেন। পুলিশ না পারলে তৃণমূল কর্মীর উপর হামলা চালানো শিবপুরের জমি আন্দোলনকারীদের বাড়িঘর জ্বালানোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। পাশাপাশি শিবপুরে যাওয়া বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বা বাম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের হাত-পা ভাঙারও হুমকি দিয়েছেন অনুব্রত।

যা শুনে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘দলীয় কর্মী মার খাওয়ায় উত্তেজনা ছিল। এই পরিস্থিতিতে কে কী বলেছেন, সেটা বড় নয়।’’ বাম আমলে বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্পের নামে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রতিবাদে সেই সময় আন্দোলনে নামে তৃণমূলই। পালাবদলের পর সিদ্ধান্ত বদল করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে ‘গীতবিতান’ আবাসন প্রকল্প, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির কথা ঘোষণা করেন। জমিদাতাদের একাংশ এর পরেই ‘শিল্প না হলে জমি ফেরাতে হবে’ এই দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

এ দিন সেই জমিদাতাদেরই সভার কথা ছিল। তাতে যোগ দিতে শিবপুরের সাবিরগঞ্জে আসছিলেন আব্দুল মান্নান, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যেরা। সাবিরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের কাছে তৃণমূল কাউন্সিলর ওমর শেখের নেতৃত্বে পাল্টা জমায়েত হয়। শুরুতেই একপ্রস্ত কথা কাটাকাটির পরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ, তৃণমূল কর্মীরা সভা ভেস্তে দিতে মঞ্চ ভেঙে দেন। গুলিও চালানো হয়। পাল্টা তৃণমূলের অভিযোগ, আন্দোলনকারীদের মারে গুরুতর জখম হন শেখ কাদের নামে এক তৃণমূল কর্মী।

সে সময়ই এলাকায় পৌঁছন মান্নান এবং বিকাশবাবু। নিরাপত্তার যুক্তিতে বোলপুর বাইপাসের জিলাপিতলা মোড়ে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে কলকাতায় ফিরে যান তাঁরা। যদিও, উত্তেজনার মধ্যেই সভা করেন অনিচ্ছুক জমিদাতারা। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ শিবপুর পৌঁছন অনুব্রত। ডিএসপি কাশীনাথ মিস্ত্রিকে ডেকে নিজের হাতের ঘড়ি দেখিয়ে বলেন, “ক’টা বাজে? ৪.১৫ মিনিট। ৭টা পর্যন্ত সময় দিলাম। ৯টার মধ্যে আমি ঢুকে যাব। এক জনেরও বাড়ি-ঘর রাখব না। তাণ্ডবলীলা খেলে দেব। ভয়ঙ্কর খেলে দেব। আর যারা মেরেছে তাঁদের গ্রেফতার করুন। কোনও কাহিনি শুনব না।’’ একটু থেমেই যোগ করেন, ‘‘এখানে উন্নয়ন হচ্ছে। কে মান্নান, কে সিপিএমের নেতা জানি না। হাত পা ভেঙে দেব।”

জেলার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘‘কে, কাকে, কোন প্রসঙ্গে কী বলেছেন তা দেখা হচ্ছে।’’ মান্নানের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল নেতা কটূক্তি করলেও পুলিশ দেখে না। এটা কি গণতন্ত্র!’’ প্রায় একই সুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, ‘‘গণতন্ত্র বিপন্ন। মুখ্যমন্ত্রীর পোষা হুমদো হুলোরা আঁচড়াচ্ছে। নিজের হেঁশেল সামলাতে তৈরি থাকুন।’’ তবে, হুমকিতে পিছু না হটে ফের সভা, মিছিল করতে আসবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আদালতে এ দিনের ঘটনা তুলে ধরব। আইনি পদক্ষেপ করব।’’ তবে অনুব্রতর হুমকির পরেও তৃণমূল কর্মীদের মারধরের ঘটনায় রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। দায়ের হয়নি অভিযোগও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE