গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রতিবাদ জানানোয় সাসপেন্ড হয়েছিলেন তিনি। নির্দিষ্ট সময় পরে আবার কাজে ফেরেন। অভিযোগ, হেয়ার ড্রেসার গিল্ড এবং ফেডারেশন একযোগে কাজ কেড়ে নিতে থাকে তাঁর হাত থেকে। খবর, একের পর এক কাজ হারিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন টলিউডের এক কেশসজ্জা শিল্পী। শনিবার তিনি সেই অভিযোগ জানিয়ে গায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে দাবি। শেষ মুহূর্তে তাঁকে বাঁচায় তাঁর মেয়ে। অভিযোগকারিণীকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী, চৈতি ঘোষাল, মানালি দে, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। আনন্দবাজার অনলাইনকে সুদীপ্তা পরে বলেন, “এই অন্যায় মানতে পারছি না। এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে ওই কেশসজ্জা শিল্পীর সেই অভিযোগ বার্তা পৌঁছেছে। সেই বার্তা অনুযায়ী, অভিযোগকারিণী মাস তিনেকের জন্য গিল্ড থেকে সাসপেন্ড হন। সংসার চালাতে গিয়ে তাঁকে প্রচুর দেনা করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর তিনি কাজের অনুমতি পান। কিন্তু নিজে বাইরের কাজ জোগাড় করতে পারবেন না, এই নির্দেশ জানানো হয় তাঁকে। ওই বার্তা অনুযায়ী, “এর পরেই আমার হাত থেকে একের পর এক কাজ কেড়ে নেওয়া হতে থাকে।” উদাহরণ দিয়ে জানান, রবিবার মৈনাক ভৌমিকের আগামী ছবির লুক সেট। তিনি এই কাজটি জোগাড় করেছিলেন। শনিবার প্রোডাকশন ম্যানেজার ফোন করে জানান, গিল্ড থেকে ফোনে বলা হয়েছে তাঁকে যেন কাজটি না দেওয়া হয়। এর পর তিনি যোগাযোগ করেন ফেডারেশন সম্পাদকের সঙ্গে। তিনিও জানান, গিল্ড ফোন করে তাঁকে অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পর পর তিন বার একই ভাবে কাজ খুইয়ে দিশেহারা ওই কেশসজ্জা শিল্পী হতাশায় ভেঙে পড়েন। সেই হতাশা থেকেই গায়ে কেরোসিন তেল ঢালেন। তাঁর বক্তব্য, বাড়িতে অসুস্থ স্বামী। মেয়ের পড়াশোনার খরচ রয়েছে। মাত্র এক শিফ্টে কাজ করে দেনা শোধ, সংসার চালানো কোনও মতেই সম্ভব নয়।
সাধারণ সদস্যদের গ্রুপে কেশসজ্জা শিল্পীর বার্তা ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্কিত সকলে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন গিল্ড-এর প্রাক্তন সম্পাদক হেমা মুন্সী। তিনি বার্তায় বলেন, “বিষয়টি একাধিক বার উত্থাপন করেছি। প্রত্যেককে কাজ করতে দেওয়া হোক, দাবি জানিয়েছি। তার পরেও এই ঘটনা চলতে থাকবে ভাবতে পারিনি।” তিনি সাফ জানান, তিনিও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন। কখনও এমন ধরণের আচরণকে প্রশ্রয় দেননি। এ-ও বলেন, “এ ভাবে মানসিক নির্যাতন চলতে থাকলে বাকি সদস্যদের বলব সংগঠনের বিরুদ্ধে পথে নামতে।”
একা ওই কেশসজ্জা শিল্পীই কি নির্যাতনের শিকার? না কি, এই অভিযোগ আরও কোনও কেশসজ্জা শিল্পীর রয়েছে? খোঁজ নিতে আনন্দবাজার অনলাইন কথা বলে চন্দ্রা মিত্র, শ্রাবণী দাসের সঙ্গে। ওই কেশসজ্জা শিল্পীর অভিযোগকে সমর্থন করে বলেও জানিয়েছেন। তাঁরা এক যোগে বলেছেন, “একা উনি নন, আমরা প্রত্যেকে ভুক্তভুগী। আমরা গিল্ড-বিরোধী বক্তব্য রাখায় আমাদের সাসপেন্ড করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পর আমাদের দিয়ে জোর করে মুচলেকা লেখানো হয়। সেখানে বলা হয়, আমরা কাজ খুঁজতে পারব না! ওরা কাজ দেবে। কিছু তো পাব এই আশায় বাধ্য হয়ে আমরা মুচলেকা সই করি। তার পর থেকে শুরু এই কাণ্ড।”
আরজি কর-কাণ্ডের পাশাপাশি টলিউড নিয়ে নানা বিতর্কে বীতশ্রদ্ধ সুদীপ্তা। তাঁর কথায়, “ওই কেশসজ্জা শিল্পীর কথা অনুযায়ী, ওঁকে অকারণে ১ জুলাই থেকে তিন মাস সাসপেন্ড করেছিল ওঁদের গিল্ড। তার পর কাজে ফিরলেও বাইরের কাজ করতে পারছিলেন না। সেই অভিযোগ আমার কাছে করেন। রবিবার মৈনাকের কাজটি হাতছাড়া হওয়ার পর সম্ভবত নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি।”
কী বলছেন কেশসজ্জা শিল্পীদের সংগঠনের সম্পাদক জয়শ্রী দাস? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। তিনি ফোন ধরেননি। একই ভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসেরও। যাঁকে নিয়ে এত হুলস্থুল সেই কেশসজ্জা শিল্পী কেমন আছেন? রূপসজ্জাশিল্পী পাপিয়া জানিয়েছেন, প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। চিকিৎসকেরা তাঁকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy