গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে অধীর চৌধুরীকে সরিয়ে দিল দিল্লি। শনিবার রাতে কংগ্রেসের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে বাংলায় কংগ্রেসের নতুন সভাপতি হচ্ছেন শুভঙ্কর সরকার।
কংগ্রেসের দলীয় সংবিধান অনুযায়ী, নতুন সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরেই প্রদেশ কংগ্রেসগুলিতে সভাপতি পদে রদবদল অনিবার্য হয়ে পড়ে। মল্লিকার্জুন খড়্গে সভাপতি হওয়ার পরে কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটিগুলিতে সভাপতি পদে যে বদল হবে তা রাজনৈতিক মহলের অজানা ছিল না। বাংলার শেষ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে ছিলেন অধীর চৌধুরী। লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণার অব্যবহিত পরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ‘অস্থায়ী সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন। অধীর বহরমপুর লোকসভায় পরাস্ত হয়েছেন। তিনি ছিলেন গত মেয়াদে লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা। এর মধ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে অধীরকেই পুনর্বহাল করা হবে, না কি অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, সে দিকে নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। দেখা গেল, অধীরকে সরিয়েই দিল দিল্লি। বদলে দায়িত্ব দিল শুভঙ্করকে।
অধীর ‘তৃণমূল-বিরোধী’ রাজনীতিতেই অভ্যস্ত। কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, তিনি তাঁর পরাজয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বয়ং সনিয়াকে বলে এসেছিলেন, তাঁকে হারাতে গিয়ে তৃণমূল মুর্শিদাবাদের মাটিতে মেরুকরণের রাজনীতিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। সংখ্যালঘু হিসাবে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন খ্যাতনামী ইউসুফ পাঠানকে গুজরাত থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল। সেই মেরুকরণের কাছেই তিনি পরাস্ত হয়েছেন।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছিল, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী শক্তির অন্যতম অক্ষ তৃণমূলকে কি বাংলায় বিড়ম্বিত করতে চাইবে কংগ্রেস? দেখা গেল, ‘তৃণমূল বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত অধীরকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে রাখলেন না সনিয়ারা। তার বদলে কংগ্রেসের অন্দরে তৃণমূল-বিরোধিতার প্রশ্নে অপেক্ষাকৃত নরম শুভঙ্করকেই দায়িত্ব দিল জাতীয় কংগ্রেস, যা বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্কের জন্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন অনেকে।
সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল শনিবার রাতে অধীরকে ফোন করে বলেন, “আপনাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।” মুর্শিদাবাদ কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, অধীর ওই কথা শুনেই ফোন কেটে দেন। তারপর দিল্লির একাধিক নেতা তাঁকে ফোন করেছিলেন, কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, শুভঙ্কর প্রদেশ সভাপতি হওয়ার পর বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক কেমন হবে? প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, শুভঙ্কর সরকার অধীরের মতো তৃণমূলের প্রতি চরমপন্থী নন। বরং কিছুটা ‘নরমপন্থী’। প্রদেশ কংগ্রেসের এখন যাঁরা নেতা, যাঁরা তৃণমূলের সমালোচনায় সরব, তাঁরাও একান্ত আলোচনায় বলছেন, ‘আমাদের ঘরে ঢুকে যেতে হবে।’ রাজনৈতিক মহলের নজর সেদিকেই, বিধান ভবনের সঙ্গে কালীঘাটের সম্পর্ক কেমন হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy