পাশাপাশি: মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডল। বুধবার আমোদপুরে। ছবি:তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
অক্সিজেন বদলে গেল প্ররোচনায়। প্রকাশ্যে ধমকের পর্ব কাটিয়ে এ বার সস্নেহ বার্তা।
বার্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যাঁর উদ্দেশে, তিনি বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডল। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার সভামঞ্চে প্রকাশ্যেই কুকথা থেকে বিরত থাকতে অনুব্রতকে ‘শেষ বারের মতো’ সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সভার আগেই বোলপুরে পুলিশকে ধমক দিতে দেখা গিয়েছিল অনুব্রতকে। হুমকি দিয়েছিলেন, ‘তাণ্ডবলীলা খেলে’ দেওয়ার।
বুধবার বীরভূমের আমোদপুরের সভায় অবশ্য অনুব্রতকে কুকথা বলানোর জন্য মমতা দায়ী করলেন ‘প্ররোচনা’কে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি প্রায়ই শুনি, ওরা বীরভূমে আসে আর কেষ্টর নামে অকথা-কুকথা বলে। কেষ্ট যদি মাথা গরম করে একটা বাজে কথা বলে, তা হলে সংবাদমাধ্যম সেটা বারবার দেখায়। অথচ ভেবে দেখেছেন কি, এই ছেলেটাকে প্ররোচনা দেওয়া হয়! উত্তেজিত করার জন্য কথা বলা হয়। সেটা লেখা হয় কই!’’ ‘ওরা’ বলতে মুখ্যমন্ত্রী আসলে বিজেপি-কেই দায়ী করেছেন বলে মনে করছেন জেলা তৃণমূলের একাংশ। বস্তুত, মমতা এ দিন বলেওছেন, ‘‘বিজেপি সরকারের কোনও কনট্রিবিউশন নেই। শুধু মানুষের উপরে অত্যাচার। সেই দলের কিছু নেতা এসে বড় বড় কথা বলছেন। আমি বলছি, বেশি কথা বলবেন না। বীরভূমে দাঁড়িয়ে গালিগালাজ করলে, সেই বিজেপি নেতার মুখে মানুষই লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে দেবে!’’
আরও পড়ুন: সমদূরত্ব কিছু নেই, স্পষ্ট কথা সূর্যের
বিতর্ক বরাবরই সঙ্গী থেকেছে জেলা তৃণমূলের সভাপতির। বিরোধী দলের নেতাদের প্রতি শাসানি, অশোভন উক্তি বহু বারই করেছেন। পুলিশকে ‘বোম মারুন’ বলতেও ছাড়েননি। বিধানসভা ভোটের সময় তিনি নজরবন্দি থেকেছেন নির্বাচন কমিশনের। এত কিছুর পরেও কেষ্ট যে তাঁর বিশেষ স্নেহের, তা কখনও গোপন করেননি মমতা। এতটাই যে অনুব্রতর হয়ে এক সময় মমতা বলেছিলেন, ‘ওর ব্রেনে অক্সিজেন কম যায়’। তবে কাঁকসার সভায় ‘দিদি’-র ধমক খেয়ে মাঝে কিছু দিন একটু সতর্ক ছিলেন কেষ্ট। সেই প্রসঙ্গও এ দিন নিজেই তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘এক দিন একটা কুকথা বলায় আমি কেষ্টকে বকেছি। কিন্তু, এটাও ভেবেছি যে, ওরা রোজ ওকে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে।’’
বিরোধী দলের নেতাদের অভিযোগ, ‘প্রিয়’ কেষ্টকে ‘দিদি’ ফের প্রশ্রয় দিলেন আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট মাথায় রেখেই। যাতে আগে ভোটের আগে ফের স্বমহিমায় ফিরতে পারেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মনসা হাঁসদা বলেন, ‘‘এটা গটআপ গেম। তৃণমূল কোনও কিছু করেই পার পাবে না।’’ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকেই স্পষ্ট, কে কেষ্টকে উত্তেজিত করেন! উনি নিজে আগের বার কেষ্টকে ঠান্ডা হতে বলেছিলেন। এখন বুঝতে পেরেছেন, ঘাড়ে বিপদ। ফলে আবার যাতে কেষ্ট কুকখা শুরু করেন, তার জন্য তাঁকে উনিই উত্তেজিত করছেন।’’
জেলার পুলিশ মহলে অন্য কারণও আলোচনা হচ্ছে। বীরভূম পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, অনুব্রতর উপরে হামলা হতে পারে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছেন। সেই উদ্বেগ থেকেই হয়তো এ কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুব্রত নিজে অবশ্য এ নিয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy