মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়া বিমল গুরুঙ্গদের উপরে চাপ বাড়াতে পাহাড়ে ফের মোর্চা বিরোধী মঞ্চ গড়ল অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ (এবিজিএল)।
মঙ্গলবার গোর্খা লিগের দফতরে পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। সাড়া মিলেছিল জিএনএলএফ, কমিউনিস্ট পার্টি অব রেভলিউশনারি মার্কসিস্ট (সিপিআরএম), সিপিএম এবং সিকিম-দার্জিলিং একীকরণ মঞ্চের।
বৈঠক শেষে মোর্চা বিরোধী ‘ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ গড়ে, পাহাড়ে গণতন্ত্র ফেরানো এবং দ্রুত তামাঙ্গ-হত্যায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে নব গঠিত ফ্রন্ট এ বার আন্দোলনে নামবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে ওই ফ্রন্টে সামিল হয়নি তৃণমূল, বিজেপি কিংবা কংগ্রেস। তাই সদ্য গঠিত ফ্রন্টের সমালোচনায় সরব হলেও মোর্চা কিন্তু রাজ্যের শাসক দল কিংবা বিজেপি-র সঙ্গে এখনই কোনও সংঘাতের রাস্তায় হাঁটবে না বলে বুঝিয়ে দিয়েছে। এ দিন, পাহাড়ের তৃণমূল সভাপতি রাজেন মুখিয়া অবশ্য বলেন, ‘‘নৈতিক ভবে ওই ফ্রন্টকে সমর্থন করলেও আমাদের নির্ধারিত সূচি থাকায় বৈঠকে যেতে পারিনি।’’ দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের পাহাড় শাখার মুখপাত্র লরেন্স পি টি লামা অবশ্য জানান, তাঁদের আমন্ত্রণ পাঠানো হয়নি।
পাহাড় জুড়ে পর্যটনের ভরা মরসুম। আগামী ৭ জুন মোর্চার জনসভা করার আর্জি তাই জেলা প্রশাসন বাতিল করে দিলেও এ দিন এক কথায় তা মেনে নিয়েছেন মোর্চা নেতারা। মোর্চার এই মনোভাবের দিকে নজর রাখছে নবান্ন এবং নয়াদিল্লি। তামাঙ্গ খুনের মামলায় চার্জশিটে বিমল গুরুঙ্গ-সহ ২৩ জন প্রথম সারির মোর্চা নেতার নাম জুড়ে যেতেই কি সুর নরম করছেন মোর্চা নেতারা? পাহাড়ে মোর্চা বিরোধীরা জানাচ্ছেন, ‘ভয়’ পেয়ে সরকারের সব নির্দেশই এখন মেনে চলবে মোর্চা।
তবে, পাহাড়ে যাতে অশান্তি না হয় সে দিকে নজর রাখছে কেন্দ্র-রাজ্য উভয়েই। স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্র বলছে— আইনি প্রক্রিয়ার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনও আন্দোলন করে পাহাড়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা যাতে না হয়, সে দিকে নজর রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে। নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা জানান, কোনও অছিলায় পাহাড়ে শান্তি নষ্টের চেষ্টা রেয়াত করা হবে না। এমনই নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বিনয় তামাঙ্গও পাল্টা বলছেন, ‘‘পাহাড়ে শান্তি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে বলেই পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে। আমরা বড় সমাবেশ করলে যানজট-সহ নানা সমস্যায় পড়বেন পর্যটকেরা। তাই প্রশাসনের অনুরোধ এক কথায় মেনে নিয়েছি আমরা।’’
তবে সদ্য গঠিত ওই ফ্রন্টকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিনয়। তিনি বলেন, ‘‘যদি গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ফ্রন্ট হত তা হলে স্বাগত জানাতাম। অতীতে জিএনএলএফের আমলে সিকে প্রধানের মতো অনেকে খুন হয়েছেন। কই তখন তো সিপিএম-সিপিআরএম এগিয়ে আসেনি।’’ তাঁর দাবি, গণতান্ত্রিক পরিবেশ রাখতে পারেননি বলেই জিএনএলএফ নেতাদের পাহাড় ছাড়তে হয়েছিল। তবে তৃণমূল কিংবা বিজেপি-র অবস্থান নিয়ে মোর্চা নেতারা এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ঘটনা হল, পাঁচ বছর আগে, ২০১০ সালে ‘ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ গড়েছিলেন মদন তামাঙ্গ। মোর্চার বিরোধিতায় সরব হয়েছিলেন তিনিই। খুন হওয়ার দিন তিনেক আগে, ১৮ মে গণতন্ত্র ফেরানোর আর্জি জানাতে দার্জিলিঙের রাজভবনেও গিয়েছিলেন তিনি। এ বার ফ্রন্টের আহ্বায়ক হয়েছেন প্রতাপ খাতি। যিনি এবিজিএল-এর সাধারণ সম্পাদক। প্রতাপ বলছেন, ‘‘আমরা সব দলকে ডেকেছিলাম। ৪টি দল প্রতিনিধি পাঠায়। তৃণমূল জানায়, পাহাড়ের নেতারা পূর্ব নির্ধারিত সূচি থাকায় আসতে পারেননি।’’ সঙ্গে কটাক্ষ, ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে যাঁদের বিরুদ্ধে খুনের মামলায় চার্জশিট হয়েছে, তাঁরা এখনও সরকারি রক্ষী পরিবৃত হয়ে রয়েছেন। কী পদক্ষেপ করা উচিত সে ব্যাপারে রাজ্যের উপরেইভরসা রাখছি।’’
আজ, বুধবার দার্জিলিঙের রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার কথা নবগঠিত ফ্রন্টের প্রতিনিধিদের। সিপিআরএমের নেতা আর বি রাই ফ্রন্টের কমিটিতে তাঁদের প্রতিনিধি থাকবেন বলে জানিয়েছেন। তবে, সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘আমরা এবিজিএলের আমন্ত্রণ পেয়ে স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠিয়েছিলাম। মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলার দোষীদের সাজা আমরাও চাই। কিন্তু, ফ্রন্টের কমিটিতে থাকব কি না তা পরে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।’’
জিএনএলএফের দার্জিলিং শাখার সম্পাদক মণিকুমার ছেত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, মোর্চা অতীতে কী হয়েছে তা ঢাল করতে চাইছে। তিনি বলেন, ‘‘আগে যা হয়েছে তা অতীত। এখন সামনের দিকে তাকিয়ে এগোব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy