সাইবার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে জমানো সর্বস্ব খোয়ালেন বৃদ্ধ। তাঁর তিনটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দফায় প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ফুলবাগান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বৃদ্ধ। ডিভিশনের সাইবার শাখা তদন্ত শুরু করেছে।
অভিযোগকারী ৭৫ বছরের বিকাশকান্তি সরকার এক জন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। ফুলবাগান থানার নারকেলডাঙা মেন রোডে তিনি থাকেন। মাসখানেক আগে তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি একাই থাকছিলেন। তাঁর অভিযোগ, স্ত্রীর মৃত্যুর এক-দু’সপ্তাহ পরে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত কিছু কাজ করতে গিয়ে তিনি সমস্যায় পড়েন। দিন চারেক ধরে মোবাইল ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে চেষ্টা করার পরেও সেই সমস্যার সমাধান করতে না পেরে ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেন তিনি। অভিযোগ, এর পরে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলে পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি তাঁকে ফোন করেন। তিনি ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত কিছু তথ্য জেনে নিয়ে কবে কী লেনদেন হয়েছে, তা বলতে থাকেন। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘লেনদেন সংক্রান্ত একের পর এক তথ্য বলে দেওয়ায় আমি তাঁকে সত্যিই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলে ভেবে নিই। এর পরে আমার থেকে আরও তথ্য নিয়ে আমার মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেই লোকটি।’’
ওই বৃদ্ধের অভিযোগ, সেই ফোনে কথোপকথনের ঘণ্টা চারেক পর থেকে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত তাঁর মোবাইলে একের পর এক ওটিপি আসতে থাকে। সন্দেহ হওয়ায় বৃদ্ধ ফের সেই ব্যক্তিকে ফোন করেন। কিন্তু তখন ফোনের অপর প্রান্ত থেকে তাঁকে জানানো হয় যে, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবু রাতের দিকে সন্দেহ হওয়ায় তিনি মুম্বইয়ে থাকা ছেলেকে বিষয়টি বলেন। এর পরেই থানায় গিয়ে যোগাযোগ করেন তিনি। অভিযোগ, ঘটনার রাতে ফুলবাগান থানায় গেলে প্রথমে কোনও অভিযোগ নেওয়া হয়নি। কত টাকার প্রতারণা হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু সে সম্পর্কে সঠিক কিছু বলতে না পারায় জেনে পরের দিন আসতে বলা হয়। ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘‘রাতে ফিরে এসে অনলাইনে গোটা ঘটনা নথিভুক্ত করি। পরবর্তীতে চলতি মাসে ফুলবাগান থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাই।’’ তিনটি অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া ছাড়াও ক্রেডিট কার্ডে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সর্বস্ব খুইয়ে কার্যত পথে বসার অবস্থা হয়েছে ওই বৃদ্ধের।
পুলিশ যদিও গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। কোন কোন অ্যাকাউন্টে ওই টাকা ঢুকেছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)