ঘনিষ্ঠতার দাবি উড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণে সুর চড়ালেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। রাজ্যে পুরভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মমতার অধীনস্থ পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের উপর তিনি যেমন অনাস্থা প্রকাশ করলেন, তেমনই সাফ জানিয়ে দিলেন— মুকুল রায়কে বিজেপিতে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
পুরভোটে মুখ থুবড়ে পড়ার পর দলের অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ অমিত শাহকে জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কলকাতায় ‘কুস্তি’ হলেও দিল্লিতে গোপনে ‘দোস্তি’র বার্তা যাচ্ছে মানুষের কাছে। রাজ্যসভায় বিভিন্ন বিল পাশে সমর্থনের জন্য তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখতে হচ্ছে বিজেপিকে। যার খেসারত দিতে হয়েছে পুরভোটেও। পাশাপাশি মুকুল রায় বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ক্ষণিকের বৈঠক করে আরও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আজ বিজেপি সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে কোনও বন্ধুত্বই করা হচ্ছে না। কেউ বিলের সমর্থনে এগিয়েই এলেই তার সঙ্গে দোস্তি হয়ে যায় না।’’
আর মুকুল রায়কে বিজেপিতে নেওয়ার বিষয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘‘তেমন কোনও আবেদনপত্রই পাইনি, তাই এ নিয়ে ভাবনাচিন্তারও অবকাশ নেই। (মুকুলকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে) কোনও প্রশ্ন উঠছে না!’’
তৃণমূলের সঙ্গে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার সংশয় দূর করে বিজেপি যাতে বিধানসভা নির্বাচনে সোজাসাপটা আক্রমণের পথে যেতে পারে, সে জন্য আজ দলের নীতি স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপি সভাপতি। পুরভোটের বিপর্যয় প্রসঙ্গে অমিত শাহের বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় পুলিশ ভোটের দায়িত্বে না থাকলে এই ফল হত না। বিধানসভা নির্বাচন হবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। সেখানে আধা-সামরিক বাহিনী থাকবে। তখন অন্য রকম ফল হবে।’’ বিজেপি সভাপতি বলেন, ‘‘বিধানসভার কথা ভেবে আগেও বলেছিলাম, মমতা উড়ে যাবেন। এখনও সে কথাই বলছি। আমরা আগের মতোই আক্রমণাত্মক। নিরপেক্ষ ভোট হলে বিজেপি সফল হবেই।’’
অমিত শাহের মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন না। ওরা ভাগ ভাগ বলেছে। এ বার মানুষই বিজেপিকে বলবে— বাংলা থেকে ভাগ!’’ তৃণমূল নেতৃত্ব বলছেন, গত লোকসভা নির্বাচন তো কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই হয়েছিল। মানুষ কিন্তু তৃণমূলের পক্ষেই রায় দিয়েছেন।
বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ এখনও চান, যে ভাবে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকরা তৃণমূল নেতৃত্বের ইশারায় কাজ করছে, তার সঙ্গে এখন পাল্লা দেওয়া মুশকিল।
অনেক জায়গায় বিজেপির জয়ী প্রার্থীরাও এখন তৃণমূলে চলে যেতে পারেন— এমন আশঙ্কা রয়েছে।
এই অবস্থায় সরাসরি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করেই বিধানসভা ভোটে যাওয়ার জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশ। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও সে ব্যাপারে সম্মতি দেননি। কারণ, রাজ্যসভায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে তৃণমূলের সমর্থন প্রয়োজন। তার উপর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে মোদী সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হতে পারে। তাতে ফায়দা তুলতে পারে তৃণমূলই।
এই অবস্থায় অমিত শাহ চাইছেন, খুব দ্রুত পশ্চিমবঙ্গে সাংগঠনিক শক্তি আরও বাড়ানো। সে জন্য সংগঠনও ঢেলে সাজা প্রয়োজন। দরকার একটি জনপ্রিয় মুখও, যাঁকে সামনে রেখে বিধানসভায় যেতে পারে দল। বিজেপি সভাপতির কাছে ইতিমধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অনেক অভিযোগ এসেছে। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়ম-সহ নানা অভিযোগ জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি লঘু করে অমিত শাহ বলেন, ‘‘এ ধরনের রিপোর্ট কিছু এসেছে। সর্বত্রই কিছু না কিছু ঘটনা ঘটে থাকে। পুরো রিপোর্ট পেলে খতিয়ে দেখব।’’ কিন্তু দলের মুখ কে হবেন? এ প্রশ্নের জবাবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন, রাজ্যের সভাপতিই তো বাঙালি! মেয়াদ শেষ হলে শীঘ্রই সাংগঠনিক নির্বাচন হবে। নেতৃত্বের ব্যাপারেও উপযুক্ত সময়ে সিদ্ধান্ত নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy