নবান্নে অমিত মিত্র। — নিজস্ব চিত্র
রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য বাড়তি উৎসব-ভাতা (বোনাস) ঘোষণা করলেন তিনি। কিন্তু এই জমানায় বকেয়া মহার্ঘভাতা (ডিএ) মিলবে কি না, সে ব্যাপারে কোনও আশ্বাস দিলেন না অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চার বছর আগে পরিবর্তনের সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন রাজ্য-কর্মচারীদের ডিএ বকেয়া ছিল ১৬%। সেটাই এখন বাড়তে বাড়তে ৪৯%-এ দাঁড়িয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, প্রথা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকার এবং এ রাজ্যের বাম সরকার বছরে দু’বার ডিএ দিত। তৃণমূল সরকার দিচ্ছে এক বার। তাই কেন্দ্রীয় কর্মীদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ-র ব্যবধান বেড়েই চলেছে।
এমতাবস্থায় ডিএ প্রশ্ন উহ্য রেখে ঘোষিত হয়েছে উৎসব-ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। বুধবার নবান্নে অর্থমন্ত্রী জানান, সরকারি কর্মীদের বোনাস ৩০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩২০০ টাকা করা হয়েছে। পাবেন তাঁরাই, যাঁদের মূল বেতন ও ডিএ মিলিয়ে ২৪ হাজার টাকা ছাড়ায়নি। ঈদ উপলক্ষে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বোনাস পেয়ে যাবেন ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে, বাকিরা পাবেন অক্টোবরে। একই ভাবে পেনশন প্রাপকদের এককালীন প্রাপ্য (এক্সগ্রাসিয়া) বেড়ে হয়েছে ১৭০০ টাকা। এ ক্ষেত্রেও যাঁদের মূল পেনশন ও ‘রিলিফ’-এর মিলিত পরিমাণ ২৪ হাজারের মধ্যে, তাঁরাই এক্সগ্রাসিয়া পাবেন।
পাশাপাশি পুজো-অগ্রিমের পরিমাণ তিন হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে সাড়ে তিন হাজার। যাঁদের মূল বেতন ও ডিএ’র মিলিত অঙ্ক ২৪ হাজারের বেশি কিন্তু ৩৫ হাজার ছাড়ায়নি, তাঁরা ইচ্ছে করলে ওই পুজো-অগ্রিম পেতে পারেন, যা কিনা আট কিস্তিতে কাটা হবে। ‘‘সব মিলিয়ে আট লক্ষ সরকারি কর্মী বোনাস ও এক্সগ্রাসিয়া পাবেন। এতে খরচ হবে চারশো কোটি টাকা।’’— দাবি অমিতবাবুর।
কিন্তু ডিএ-র কী হল?
অমিতবাবুর উত্তর, ‘‘সরকার যখন সমর্থ হবে, তখনই দেবে। কর্মীদের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য রয়েছে।’’ এ প্রসঙ্গে অমিতবাবু চলতি বছরের গোড়ায় ৭% ডিএ মঞ্জুরির কথাও মনে করিয়ে দেন। তা সত্ত্বেও বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ তো এখন প্রায় ৫০% ছুঁইছুঁই! এটা কেন?
উত্তর এড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘সময়মতো ঠিক দেওয়া হবে।’’
সেই ‘সময়’ কখন আসবে, অমিতবাবু অবশ্য তা খোলসা করেননি। তাঁর দফতরের কর্তাদের একাংশের কথায়, ‘‘মন্ত্রী নিজেই এর উত্তর জানেন না। অন্যকে বলবেন কী করে?’’ রাজ্যের অর্থ-কর্তাদের বক্তব্য: আগামী জানুয়ারিতে আর এক কিস্তি ডিএ দেওয়ার কথা। ভোটের বছর হওয়ায় বাড়তি কিছু প্রাপ্তিও অসম্ভব নয়। ‘‘তবে তার মধ্যে কেন্দ্রও তো ডিএ ঘোষণা করবে! কাজেই বকেয়ার বহরে বিশেষ হেরফের হবে বলে মনে হয় না।’’— পর্যবেক্ষণ এক অর্থ-আধিকারিকের।
রাজ্যের পে-কমিশন গঠন সম্পর্কেও অর্থমন্ত্রী এ দিন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। অর্থ-সূত্রের খবর: কেন্দ্রীয় পে-কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় কর্মীরা নতুন হারে বেতন পেতে চলেছেন। অথচ সরকার এখনও পে কমিশন গড়েই উঠতে পারেনি। কারণ জানতে চাওয়া হলে অমিতবাবুর জবাব, ‘‘এখনই স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। যখন সময় হবে, তখন বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy