Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪
Jaynagar Child Death

নিহত মেয়ের বিচার চেয়ে পথে গ্রামবাসীরা

গ্রামের মেয়েকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় জোট বেঁধে রবিবার থেকেই পথে নেমেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষ। সন্ধের দিকে সেখানে এসে পৌঁছয় আর জি করের ঘটনায় আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল।

বালিকার খুন ও ধর্ষণের বিচার চেয়ে রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবস্থান-বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের।

বালিকার খুন ও ধর্ষণের বিচার চেয়ে রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবস্থান-বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:৪১
Share: Save:

দিনভর দেখা মিলল না নিহত নাবালিকার বাবার। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই মা। তবে গ্রামের মেয়েকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় জোট বেঁধে রবিবার থেকেই পথে নেমেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু অঞ্চলের মানুষ। সন্ধের দিকে সেখানে এসে পৌঁছয় আর জি করের ঘটনায় আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের একটি প্রতিনিধি দল। দিনভর বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলেছে গ্রামে। সমাজের নানা স্তরের মানুষজন এসেছিলেন আন্দোলনে শামিল হতে। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেয়েটির বাড়ি, থানায় যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীরা। তবে আন্দোলনরত গ্রামবাসীরা জানিয়ে দেন, তাঁদের জমায়েতে শামিল হতে গেলে কোনও দলের পতাকা আনা চলবে না। শনিবার গোলমালের সময়ে এলাকার বিধায়ককে তাড়া করে এলাকা-ছাড়া করেছিল জনতা। ‘গো-ব্যাক’ ধ্বনি শুনতে হয় তৃণমূল সাংসদকেও।

শুক্রবার গভীর রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বছর নয়েকের মেয়ের দেহ উদ্ধার হয়েছিল বাড়ির কাছে চাষের জমি থেকে। গ্রামেরই যুবক মোস্তাকিন সর্দার তাকে ধর্ষণ করে খুন করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই রাতেই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে বিকেল থেকে মেয়েটি নিখোঁজ থাকলেও পুলিশ অভিযোগ নিতে নানা টালবাহানা করে বলে গ্রামের মানুষজনের দাবি। সেই থেকে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। শনিবার ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে। জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে জখম হন দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন। পুলিশের অবশ্য দাবি, তদন্তে গাফিলতি নেই। অভিযোগ মিলতেই গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে। জেরায় সে অপরাধের কথা কবুল করেছে বলেও দাবি পুলিশ কর্তাদের। যদিও মেয়েটিকে সে খুন করল কেন, তার জবাব মেলেনি। তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবারই বারুইপুর আদালতে তোলা হলে মোস্তাকিনকে বিচারক ৭ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

তবে দেহের ময়না তদন্ত হয়নি এ দিনও। পুলিশ শনিবার সন্ধের পরে দেহ নিয়ে গিয়েছিল কাটাপুকুর মর্গে। কিন্তু সন্ধে নামায় ময়না তদন্ত করা যাবে না বলে দাবি জানান বিজেপি ও সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশের সঙ্গে প্রবল ধস্তাধস্তি বাধে। শেষে পুলিশ জানিয়ে দেয়, ময়না তদন্ত করা হবে রবিবার।

পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল, এক জন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কোনও হাসপাতালে যেন ময়না তদন্ত করানো হয়। সেই মতো শনিবার রাতে হাই কোর্টে বিষয়টি জানায় পুলিশ। রবিবার দুপুরে সেই নির্দেশই দিয়েছে হাই কোর্ট। আজ, সোমবার কল্যাণী এমস অথবা জেএনএম হাসপাতালে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতেই ময়না তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি। কোর্টের নির্দেশে পকসো আইনেও মামলা রুজু হয়েছে বলে তিনি জানান। পুলিশ সুপার বলেন, “পরিবার যেমন চাইছে, এ ক্ষেত্রে সে ভাবেই এগোব। পুলিশের বিরুদ্ধে কিছু অপপ্রচার চলছে। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি। আমরাও চাইছি, দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট তৈরি করতে।”

শনিবার বিকেলেই এলাকার মানুষ আলোচনা করে ঠিক করেন, গ্রামের মেয়ের নৃশংস খুনের বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু হবে। রাতেই এক দফা মিছিল হয়। রবিবার সকালে গ্রামের পথে ফের মিছিল বেরোয়। পরে নাবালিকার বাড়ির কাছে রাস্তার মোড়ে শুরু হয় অবরোধ। সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন বয়সের মহিলাদের। অনেকের হাতে ছিল ‘মা লক্ষ্মীর বিচার চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড।

আন্দোলনে যোগ দেওয়া প্রভাতী হালদার, রিক্তা নস্করেরা বলেন, “এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আর কেউ এর সঙ্গে জড়িত কি না, খুঁজে বার করতে হবে। গ্রামের মেয়ের জন্যই আমরা পথে নেমেছি। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” রাজনৈতিক পতাকা আনতে বারণ করলেন কেন আপনারা? প্রভাতীর জবাব, “এটা সাধারণ মানুষের আন্দোলন। এখানে কোনও রাজনৈতিক দল নেই।” শনিবার ভাঙচুর হওয়া ফাঁড়ি এ দিন ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি কাউকে। ফাঁড়ির কিছু জিনিস, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও সরানো হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিহত নাবালিকার পিসির বছর পনেরোর মেয়েকেও কয়েক বছর আগে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। পরে মেয়ে আত্মহত্যা করে বলে দাবি তাঁর। পিসির অভিযোগ, সেই সময়ে পুলিশ টাকা নিয়ে মামলা তুলে নিতে বলেছিল। পিসি বলেন, “আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি। ভাইয়ের মেয়েও চলে গেল! সে বারও পুলিশ পাশে ছিল না। লকডাউনের মধ্যে থানা থেকে পুলিশ সুপারের অফিসে অনেক ছোটাছুটি করেছি। কোনও কাজ হয়নি। অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায়। এ বারও পুলিশের সাহায্য পেলে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারতাম!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jaynagar protests
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE