ফাইল চিত্র।
একা করোনায় রক্ষা নেই, ডেঙ্গি দোসর!
এ বছর এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৫৭৩ জন ডেঙ্গি-আক্রান্ত বলে খবর। গত বছর সংখ্যাটা ছিল ৬৮২। কলকাতা পুরসভা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মহানগরে আক্রান্তের সংখ্যা নব্বইয়ের বেশি। এমনকি, একই সঙ্গে কোভিড ও ডেঙ্গির শিকার হয়েছেন অন্তত দু’জন। এক জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর এক জনও হাসপাতালে, স্থিতিশীল। হাওড়ায় করোনা-আক্রান্ত হয়ে মৃত এক রোগীর ডেঙ্গি রিপোর্ট পজ়িটিভ ছিল বলে খবর।
এ রাজ্যে শুধু নয়। বিশ্বে যে সব দেশে ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব রয়েছে, সেখানেও মানবদেহে দুই ভাইরাসের সহাবস্থানের পরিণাম এখন আলোচ্য বিষয়। চিকিৎসকেরা জানান, ব্রাজিল এবং সিঙ্গাপুরে একই সঙ্গে ডেঙ্গি এবং করোনা হয়েছে, এমন বেশ কিছু ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। করোনা রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডেঙ্গি কো-মর্বিডের ভূমিকা পালন করেছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানান, করোনা-জর্জরিত ব্রাজিলে এ বার ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। দুইয়ের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গবেষকেরা।
চিকিৎসক অরুণাংশু জানান, দু’টিই আরএনএ ভাইরাস গোত্রের হলেও শ্রেণিচরিত্র আলাদা। ডেঙ্গি হল আর্বো ভাইরাস। আর করোনা হল সার্স শ্রেণিভুক্ত। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে যে কোনও সংক্রমণই মানবদেহের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। কোভিড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ডেঙ্গির ভাইরাস রক্তনালীর পর্দাকে নষ্ট করে। এর ফলে রক্তের জলীয় পদার্থ রক্তনালী থেকে বেরিয়ে শরীরের অন্যত্র চলে গেলে রক্তচাপ কমে ঘটে বিপত্তি। আর করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসনালীতে আঘাত করে। তবে শরীরের অন্য জায়গাতেও আক্রমণের ক্ষমতা কোভিডের রয়েছে।’’
আরও পড়ুন: এনআইআরএফ র্যাঙ্কিং-এ এগিয়ে কলকাতা, ঠিক পরেই যাদবপুর
আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল জানান, করোনাভাইরাস শ্বাসনালীর পথে ফুসফুসের কোষে প্রবেশ করে বংশবিস্তার ঘটাতে থাকলে প্রদাহ শুরু হয়। তাতে ফুসফুসের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধলে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম’ হয়। ডেঙ্গি দেহের সব কোষেই আক্রমণ করতে পারে। সেই আক্রমণের জেরে রক্তনালীর ছিদ্র বেড়ে ভিতরের জলীয় পদার্থ বাইরে বেরিয়ে এলে অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আবার ভাইরাস অস্থি মজ্জায় আঘাত হানলে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে ‘হেমারেজিক শকের’ শিকার হতে পারেন আক্রান্ত।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁতে চলেছে, এক দিনে আক্রান্ত ৪৪০
দুই চিকিৎসকেরই মতে, ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়ার সহাবস্থানে কী পরিণাম হয় সেই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গি-কোভিড জুটির প্রভাব সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা কম। এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের বক্তব্য, করোনা ভীতিতে অনেকে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে জ্বর হলে মানুষ ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাচ্ছেন না। এই চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করে জ্যোতির্ময় বলেন, ‘‘কোভিড-১৯ থাকলে ডেঙ্গির টেস্ট ফলস পজ়িটিভ আসছে বলে বিদেশে কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে। সিঙ্গাপুরে এক গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, করোনা ভেবে চিকিৎসা শুরু করে পরে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে বা উল্টোটা ঘটেছে, এমন নজিরও রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy