Advertisement
E-Paper

অভিষেকের নাম করে পাল্টা তালিকায় নয়া মাত্রা দ্বন্দ্বে

দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী বাছাই নিয়ে সমস্যা মনোনয়ন প্রত্যাহারের পথে কোনও ক্রমে সামাল দিয়েছিল তৃণমূল।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

রবিশঙ্কর দত্ত

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৪
Share
Save

‘চেয়ারপার্সন’ না ‘বস’!

দুই শিবিরের টানাটানির আড়ালে এই বাক্যবন্ধটিই আলোড়ন ফেলে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষে। এবং তা ঘিরেই গত কয়েক দিন ধরে চলা টানাপড়েনে ইতি টানতে চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খোলসা করে বলতে হয়েছে, অন্য কেউ নয়, দল চালাবেন তিনিই! কন্টাই (কাঁথি) সমবায় ব্যাঙ্কের বোর্ড গঠনকে উপলক্ষ করে এ কথা বললেও তৃণমূল নেত্রীর এই বার্তাই গত ২৪ ঘণ্টায় শাসক দলের অন্দরে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে! এবং তাতেই অভিমুখ বদলাতে শুরু করেছে অভ্যন্তরীণ বিন্যাসের।

ব্যাপ্তির কারণেই পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুকের দু’টি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। এ বার সেই নির্বাচনের গোড়া থেকেই রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় ছিল শাসক তৃণমূল। শুধু তা-ই নয়, প্রাথমিক পর্ব থেকে নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও সাংগঠনিক স্তরে তদারকিতে জড়িয়েছিলেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যের কারণে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী জেলার দলীয় বিধায়ক ও নেতাদের সঙ্গে একাধিক বার বৈঠক করেন এবং রাজ্য স্তরের দুই নেতাকে আলাদা করে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বও দেন। ভোটে জিতলেও বোর্ড গঠনের আগে সেই অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরেই দলের অন্দরের মতপার্থক্য ‘চেয়ারপার্সন’ আর ‘বস’-এর টানাপোড়েনে এসে দাঁড়ায়। হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে স্বয়ং মমতাকে।

দলীয় সূত্রে খবর, প্রার্থী বাছাই নিয়ে সমস্যা মনোনয়ন প্রত্যাহারের পথে কোনও ক্রমে সামাল দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েও সেই তৃণমূলের বিরোধ থামেনি। পরিচালন সমিতিতে কারা থাকবেন, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হতেই দলের তরফে তালিকা নির্দিষ্ট করে দেন রাজ্য সভাপতি বক্সী। কিন্তু সেই তালিকার পাল্টা আর একটি তালিকাও সামনে আনতে শুরু করে জেলা দলের একাংশ। দলীয় সূত্রে খবর, প্রকাশ্যেই তারা দাবি করে যে, এই পাল্টা তালিকায় সমর্থন রয়েছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের! এই নিয়ে আলোচনা শুরুর পরেও পাল্টা তালিকা ‘বস’-এর অনুমোদিত বলে জেলা নেতৃত্বের ওই অংশ সরে দাঁড়াতে অনড় থাকেন। সামাল দিতে দলের যে নেতারা আলোচনা চালিয়েছেন, তাঁদের বিস্মিত করেই দলের দেওয়া তালিকার বিপরীতে সামনে আসে ‘বস’-এর তালিকা!

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলায় সমবায় জিতেও দলীয় দ্বন্দ্বে এমনই চাপের মধ্যে পড়ে যান তৃণমূল নেতৃত্ব। গোটা ঘটনার বিবরণ জানানো হয় তৃণমূল নেত্রীকেও। দলীয় সূত্রে খবর, তাতেই ক্ষুব্ধ মমতা সকলকে বৈঠকে ডাকার নির্দেশ দেন রাজ্য সভাপতি বক্সীকে। নিজের ভবানীপুরের দফতরে বুধবারের ওই বৈঠকে হাতজোড় করে দুই শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের নাম করে চলা এই বিবাদ এড়াতে অনুরোধ করেন তিনি। কিন্তু পাল্টা তালিকার নেতারা গোড়ায় অনড় থাকায় রাজ্য সভাপতি যোগাযোগ করেন তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে। বক্সীর স্মার্ট ফোন না-থাকায় দফতর থেকে জেলারই এক বিধায়কের ফোনে যোগাযোগ করে পাল্টা তালিকা প্রত্যাহারে কড়া নির্দেশ দেন মমতা। বিধায়ক ও নেতাদের নাম ধরে তৃণমূল নেত্রী জানিয়ে দেন, এই নির্দেশ না- মানলে তাঁরা ‘অন্য কিছু’ ভাবতে পারেন।

সেই মতোই বৃহস্পতিবার চেয়ারপার্সন মমতার দেওয়া তালিকাই থেকে গিয়েছে পরিচালন সমিতি নির্বাচনে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই রিপোর্ট বক্সীর মাধ্যমে পৌঁছেছে তৃণমূল নেত্রীর কাছে। তবে তার পরেও ইতি পড়ছে না দ্বন্দ্ব-পর্বে। নিজের লোকসভা কেন্দ্রে ‘সেবাশ্রয়’ শিবিরের ‘সাফল্যে’র কথা বলতে গিয়ে অভিষেক লিখেছেন, পরিষেবা যাঁরা পাচ্ছেন এবং যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁরা একসঙ্গে মিলে দেখিয়ে দিচ্ছেন— ‘প্রশাসন পরিচালনার অর্থ শুধু মুখের কথা নয়, বরং, মানুষের জীবন পাল্টে দেওয়ার মতো কাজ’! এই মন্তব্যের ইঙ্গিত নিয়ে ফের দানা বেঁধেছে জল্পনা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Contai

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}