পহেলগাম সন্ত্রাসের পরে উপত্যকা এখন প্রায় পর্যটক-শূন্য। আগামী কয়েক মাসে যাঁদের কাশ্মীর ভ্রমণে আসার কথা ছিল, তাঁদের বেশির ভাগই হোটেলের বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরে পর্যটকদের ফেরানোর জন্য জোরদার চেষ্টা চালাচ্ছে কাশ্মীর সরকার। চেষ্টা করছে ‘সব কিছু ঠিকঠাক আছে’ এমন একটা ভাবমূর্তি তুলে ধরার। এর মধ্যেই বলিউডের দুই অভিনেতা, অতুল কুলকার্নি ও সুনীল শেট্টি বার্তা দিলেন, ‘কাশ্মীরে আসুন। না হলে সন্ত্রাসবাদ জিতে যাবে।’
কাশ্মীরে সারা বছর যত পর্যটক আসেন, তাঁদের মধ্যে অর্ধেকই আসেন এপ্রিল থেকে অগস্টের মধ্যে। গ্রীষ্মকালই এখানে সব থেকে জমজমাট সময়। আর এ বার মনে হচ্ছে, শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল পর্যটন মরসুম। যেই পহেলগামের অদূরে জঙ্গিহানা হয়েছিল, সেখানে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত হাজার পর্যটক আসেন। আর এখন সেখানকার রাস্তাঘাট জনশূন্য। যে সব পর্যটক এখনও কাশ্মীরে রয়েছেন, তাঁরা কোনো ক্রমে বেড়ানো শেষ করছেন। গত মঙ্গলবার সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে নতুন প্রায় কোনও পর্যটক এখানে আসেননি। ফলে যে কয়েক জন এখনও কাশ্মীরের বিভিন্ন পর্যটনস্থলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন, তাঁদের ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেই সরকার দেখানোর চেষ্টা করছে যে, কাশ্মীরে এখনও নির্বিঘ্নে বেড়ানো চলে। যে সমস্ত ব্লগার ও সাংবাদিক এখন কাশ্মীরে রয়েছেন, তাঁদেরও সরকারের তরফে অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা যেন ভূস্বর্গের ইতিবাচক দিকটাই দেখান।
সরকার চেষ্টা চালালেও বাস্তব ছবিটা কিন্তু অন্য। হোটেল বুকিং বাতিল করে দিচ্ছেন পর্যটকেরা। অনেক হোটেল আবার বাতিল বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেয় না। ফলে আর্থিক চাপ গিয়ে পড়ছে পর্যটন সংস্থা ও ট্র্যাভেল এজেন্টদের উপরে। উড়ান সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, সাধারণত বছরের এই সময়ে প্রতি সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ হাজার পর্যটক শ্রীনগরে আসেন। সেই সংখ্যা এখন প্রায় শূন্যতে ঠেকেছে।
এ রকমই একটা ‘জনশূন্য’ উড়ানে গত কাল কাশ্মীরে এসেছেন বলিউডের অভিনেতা অতুল কুলকার্নি। শ্রীনগর ও পহেলগামে বেড়ানোর ছবি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি বলেছেন, “একটা ফাঁকা বিমানে চেপে এখানে এলাম। কাশ্মীর এখন প্রায় পর্যটকশূন্য। সন্ত্রাসবাদীরা কিন্তু এটাই চাইছিল। তাই আমি সবাইকে বলতে চাই, কাশ্মীরে বেড়াতে আসুন। না হলে কিন্তু সন্ত্রাসবাদীরাই জিতে যাবে।” আগামী কয়েক মাসে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যটক যে তাঁদের কাশ্মীর আসা বাতিল করেছেন সে কথা মেনে নিয়েই অতুল লিখেছেন, ‘এ দেশের নাগরিকদের এখানকার মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’। সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্টগুলির সঙ্গে যে সব ছবি অতুল দিয়েছেন, তার মধ্যে যেমন ফাঁকা রাস্তাঘাটের ছবি রয়েছে, তেমনই রয়েছে কাশ্মীরের অপরূপ নিসর্গ চিত্র এবং এখানকার সাধারণ মানুষের হাতে ভারতীয় জাতীয় পতাকার ছবি। দিন দুয়েক আগে বলিউডি তারকা সুনীল শেট্টিও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “সামনের বেড়ানোটা কাশ্মীরেই হবে। আপনারাও চলুন।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)