Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Madhyamik

Madhyamik 2021: দু’লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী কি স্কুলছুটের দলে

পর্ষদের কর্তাদের বক্তব্য, প্রতি বারেই কিছু পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশন করিয়েও ফর্ম পূরণ করে না। কিন্তু এ বার দু’লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া ফর্ম পূরণ করেনি।

মার্কশিট হাতে পেয়েই আগে তা জীবাণুমুক্ত করছে এক ছাত্রী। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে।

মার্কশিট হাতে পেয়েই আগে তা জীবাণুমুক্ত করছে এক ছাত্রী। মঙ্গলবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২১ ০৬:০২
Share: Save:

কোথায় গেল ওরা?

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার এ বছরের মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করে জানান, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন বা নাম নথিভুক্ত করিয়েছিল অন্তত ১১ লক্ষ ১২ হাজার পড়ুয়া। সেই সঙ্গে ছিল সিসি এবং কম্পার্টমেন্টাল পাওয়া আরও অন্তত দু’লক্ষ পড়ুয়া। সেই অনুযায়ী এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হওয়ার কথা ছিল ১৩ লক্ষের বেশি। কিন্তু দেখা গিয়েছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ফর্ম পূরণ করেছে ১০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৪৯ জন।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, বাকি দুই লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী কোথায় গেল? স্বাভাবিক অবস্থায় নবম থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠার সময় কিছু ছাঁটাই হয়। তার পরে ঝাড়াইবাছাই হয় টেস্টেও। এ বার সে-সব কিছুই হয়নি। পর্ষদের কর্তাদের বক্তব্য, প্রতি বারেই কিছু পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশন করিয়েও ফর্ম পূরণ করে না। কিন্তু এ বার দু’লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া ফর্ম পূরণ করেনি।

ইউনেস্কো-র সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, করোনাকালে সারা দেশে প্রায় ১৫ লক্ষ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত ২৮ কোটি পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। অতিমারি পর্বে স্কুলছুট যে বাড়বে, সেই বিষয়ে আলোচনা চলছিলই। পর্ষদের এই হিসেব সেই ধারণাকে আরও স্পষ্ট করে দিল বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞজনেরা।

প্রতীচী ইন্ডিয়া ট্রাস্টের গবেষক সাবির আহমেদ মনে করেন, আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন গোষ্ঠী করোনাকালে আরও পিছিয়ে গিয়েছে এবং যাচ্ছে। একটা বড় ফারাক তৈরি হয়ে গিয়েছে শিক্ষার ক্ষেত্রেও। এক দিকে অতিমারিতে পরিবারের আয় কমে গিয়েছে। ফলে আর্থিক অনটনের মুখে পড়ছেন বহু মানুষ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে স্কুলের সঙ্গে সংযোগ ছিন্ন হয়ে যাওয়া। অনলাইনে ক্লাসের যে-ব্যবস্থা হয়েছে, সেটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক পড়ুয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই 'ডিজিটাল ডিভাইড'-এর পিছনে আর্থিক সঙ্গতির প্রশ্ন যেমন রয়েছে, আছে দ্রুত গতির ইন্টারনেট না-পাওয়ার বিষয়টিও।

"পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে পঠনপাঠনের যে-বিশাল ফাঁক তৈরি হল, তা মেটানো সম্ভব নয়। এর জন্য অনেক আগে থেকে পরিকল্পনার দরকার ছিল। পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর অনেক ছাত্র রোজগারের জন্য পড়াশোনা ছাড়ছে। ছাত্রীদের ক্ষেত্রে বিয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে,’’ বলেন সাবির।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডু জানান, করোনাকালে স্কুল বন্ধ। তাঁর পরিচিত, জলপাইগুড়ি জেলার একটি স্কুলের শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিতে গিয়ে দেখেন, নিয়মিত কয়েক জন পড়ুয়া অনুপস্থিত। পরে সেই পড়ুয়াদের দেখা মেলে বাজারে। সেখানে তারা আনাজ বিক্রি করছে। অভিজিৎ বলেন, "ওরা হয়তো আর কখনও স্কুলে ফিরবে না। করোনার ধাক্কায় সংসার চালানোটা ওদের কাছে এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"

নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির (এবিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ড্রপ আউট হয়েছে। অনেক বাড়ির হয়তো একমাত্র উপার্জনকারী কাজ হারিয়েছেন। বাধ্য হয়েই কাজ নিতে হয়েছে সেই বাড়ির পড়ুয়াকে। জঙ্গলমহল এলাকার বহু পরিবার, উত্তরবঙ্গের চা-বাগান এলাকার বহু শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েরা বাধ্য হয়ে পড়া ছেড়ে কাজে নেমেছে। তাদের মধ্যে আছে বহু মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও।"

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy