Advertisement
E-Paper

আবাস যোজনার যাচাই পর্বে ‘স্বচ্ছ’ কেশপুর ব্লক থেকেই বাদ গিয়েছে প্রায় ৩২ শতাংশ নাম!

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই আলোড়ন চলছে। দফায় দফায় কেন্দ্রীয় দল আসছে তথ্য যাচাইয়ে। তালিকা থেকে নাম বাদও যাচ্ছে। অনেকে নিজেই নাম কাটাচ্ছেন।

PMAY

শুধু কেশপুর ব্লক থেকেই প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নাম বাদ গিয়েছে। প্রতীকী ছবি।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫২
Share
Save

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার কেশপুরের সভা থেকে নতুন তৃণমূলের স্বচ্ছ লোকজনের মুখ সামনে এনেছেন। সে ক্ষেত্রে দরিদ্র হয়েও আবাসের বাড়ি ফেরানো স্বচ্ছতার অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে জায়গা পেয়েছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে আবাস যোজনার যাচাই-পর্বে অনুপযুক্ত হিসেবে শুধু কেশপুর ব্লক থেকেই প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নাম বাদ গিয়েছে। সংখ্যাটা তালিকাভুক্তের প্রায় ৩২ শতাংশ, যা জেলার নিরিখে কার্যত রেকর্ড।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই আলোড়ন চলছে। দফায় দফায় কেন্দ্রীয় দল আসছে তথ্য যাচাইয়ে। তালিকা থেকে নাম বাদও যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে উপভোক্তা নিজেই নাম কাটাচ্ছেন। কেশপুরের এমনই এক সাধারণ তৃণমূল সমর্থক শেখ হসিনুদ্দিন ও তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মঞ্জু দলবেরা এবং তাঁর স্বামী দলের বুথ সভাপতি অভিজিৎ দলবেরাকে শনিবার সভামঞ্চে তুলেছিলেন অভিষেক। তাঁদের ভাঙাচোরা বাড়ির ছবি দেখিয়ে জানিয়েছিলেন, সরকারি বাড়ি বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও এঁরা নেননি। আর তারপরেই অভিষেকের ঘোষণা ছিল, ‘‘এমন একটা ধারণা তৈরি করা হচ্ছে যে, বাংলার মানুষ মানেই চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত। কিন্তু এঁরাই বাংলার সংস্কৃতি-কৃষ্টি। হসিনুদ্দিনবাবুর মতো লোকই আগামী দিনে পঞ্চায়েতের (তৃণমূলের) মুখ হতে চলেছেন।’’

বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, কেশপুরে আবাস যোজনায় প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সীমাহীন দুর্নীতি হয়েছে বলেই তো যাচাইয়ে প্রচুর নাম বাদ গিয়েছে।’’ তবে নাম বাদ পড়া অনেকেরই দাবি, উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের নাম কাটা পড়েছে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির আবার যুক্তি, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ত্রুটিমুক্ত তালিকা তৈরি করাবেন। সেটা করিয়েছেন। বেশ কিছু নাম বাদ গিয়েছে সে জন্যই।’’ শনিবারের সভায় অভিষেকেরও দাবি, ‘‘রাজ্য প্রশাসন বাড়ি বাড়ি যাচাইয়ে গিয়ে তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রকে পাঠিয়ে দিয়েছে।’’

কিন্তু তার পরেও তালিকায় এত অনুপযুক্তের নাম থাকল কী করে? অজিতের জবাব, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক পর-পর, দেড় মাসের ব্যবধানে যখন পঞ্চায়েত দায়িত্ব নেয়নি, ব্লকে ব্লকে তখন কারা (ভিআরপি) সবার অজানতে সমীক্ষা করে ত্রুটিপূর্ণ তালিকা তৈরি করেছেন, সেটা মানুষ জানেন।’’

পঞ্চায়েত সমিতির এক সূত্রে খবর, কেশপুরে একেবারে শুরুতে ‘আবাস প্লাস’ তালিকায় নাম ছিল ৫৩,২৯২ জনের। গত কয়েক বছরে দফায় দফায় ঝাড়াই- বাছাই হয়েছে। চলেছে ‘অটো রিজেকশন’ প্রক্রিয়াও। তার পরে তালিকায় নাম ছিল ৩৬,৭৭৮ জনের। কিন্তু সাম্প্রতিক যাচাই পর্বের শেষে নাম রয়েছে ২৫,২৭১ জনের। অর্থাৎ বাদ গিয়েছে ১১,৫০৭ জনের নাম, যা হল ৩১.২৯ শতাংশ।

শনিবার অভিষেকের সভামঞ্চে ওঠা হসিনুদ্দিন কলাগ্রামের উঁচাহারের বাসিন্দা। আর গোলাড়ের তলকুয়াইয়ের বাসিন্দা অভিজিৎ ও মঞ্জু। মঞ্জু গোলাড় গ্রাম পঞ্চায়েতেরই তৃণমূল সদস্য। পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর, ওই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতেও আবাসে অনেকের নাম বাদ গিয়েছে। গোলাড়ে যাচাইয়ের শুরুতে নাম ছিল ২,১৯৮ জনের। শেষে নাম রয়েছে ১৫৬২ জনের। বাদ পড়েছে ৬৩৬ জনের নাম, প্রায় ২৮.৯৪ শতাংশ। কলাগ্রামে নাম ছিল ২,৮৮২ জনের। এখন নাম রয়েছে ২০১৭ জনের। বাদ দিতে হয়েছে ৮৬৫ জনের নাম অর্থাৎ ৩০.০১ শতাংশ।

আবাসের কাজ খতিয়ে দেখতে কেশপুরেও এসেছিল কেন্দ্রীয় দল। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, কেশপুরে কোনও ভুল ধরা পড়েনি। তা-ও এত নাম বাদ পড়ল যে? পঞ্চায়েত সমিতির এক তৃণমূল সদস্যের ব্যাখ্যা, ‘‘পুরনো তালিকায় কিছু নাম রয়ে গিয়েছিল। যাচাইয়ে সেগুলিই বাদ গিয়েছে।’’

PMAY Pradhan Mantri Awas Yojana Keshpur

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}