Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
বাম সঙ্গ চেয়ে দরবার আজ

জোটেই লাভ, রাহুলকে বলবেন রাজ্য নেতারা

দিল্লির দরবারে সোমবার মহাপরীক্ষা! কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর বাড়িতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রীতিমতো পরীক্ষায় বসছে অধীর চৌধুরীর টিম! প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি, প্রাক্তন সভাপতি, পরিষদীয় দলনেতা ও সাধারণ সম্পাদক ধরে ১২ জন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:২০
Share: Save:

দিল্লির দরবারে সোমবার মহাপরীক্ষা!

কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর বাড়িতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রীতিমতো পরীক্ষায় বসছে অধীর চৌধুরীর টিম! প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি, প্রাক্তন সভাপতি, পরিষদীয় দলনেতা ও সাধারণ সম্পাদক ধরে ১২ জন। সঙ্গে আমন্ত্রিত যুব, মহিলা ও ছাত্র সংগঠনের তিন সভাপতি। বিহারের সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটের মডেল মেনেই পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন নির্বাচনের আগে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের মতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে চান রাহুল। তাঁর মুখোমুখি হওয়ার আগে তাই আজ সন্ধ্যায় প্রদীপ ভট্টাচার্যের সাংসদ-বাংলোয় ঘরোয়া আসরে প্রদেশ নেতারা নিজেদের সুর বেঁধে রাখলেন। যার সার কথা একটাই— কোনও ভাবেই তৃণমূলের সঙ্গে নয়!

বস্তুত, যে প্রতিনিধিদল নিয়ে রাহুলের সঙ্গে আলোচনায় যাচ্ছেন অধীর, সেই দলে সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সওয়াল করার লোক নেই বলেই দলীয় সূত্রের খবর! কেউ কেউ আছেন, যাঁরা কোনও পক্ষের সঙ্গে গাঁটছ়়ড়ায় না গিয়ে একা লড়ার পক্ষপাতী। কিন্তু বাংলার কংগ্রেসের মধ্যে বাকিদের মতের চাপে তাঁরাও এখন ‘নরম’ হয়ে গিয়েছেন! হাইকম্যান্ড বামেদের হাত ধরতে বললে ঈষৎ আপত্তি সত্ত্বেও তাঁরা মেনে নেবেন।

একে একে আজ দিল্লি পৌঁছে প্রদীপবাবুর বাড়িতে আলোচনায় বসে প্রদেশ নেতারা স্বীকার করে নেন, তৃণমূলকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিতে গেলে জোটই প্রয়োজন। সহজ পাটিগণিতের হিসাব বলছে, রাজ্যের বেশ কিছু আসনে (বিশেষত, উত্তরবঙ্গ ও মুর্শিদাবাদে) কংগ্রেস ও বাম ভোট এক জায়গায় হলে তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলা সম্ভব। এমনকী, ক্ষমতা দখলের দৌড়ে তৃণমূলকে শক্ত চ্যালেঞ্জে ফেলাও সম্ভব। আর বিধানসভায় দলের শক্তি বৃদ্ধির ফায়দা যে আগামী লোকসভা নির্বাচনেও পাওয়া যাবে, সেই যুক্তি রাহুলকে জানাতে চান অধীরেরা। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, তৃণমূলের সর্বাত্মক বিরোধিতার প্রশ্নে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের মত এখন সর্বসম্মতই। তবে বামেদের হাত ধরলে সিপিএম কংগ্রেসকে গিলে ফেলবে কি না, সাম্প্রতিক ‘শিলিগুড়ি মডেলে’র উদাহরণ দিয়ে সেই আশঙ্কার কথাও আজকে তুলেছিলেন মানস ভুঁইয়া। তাঁকে সমর্থন করেন দীপা দাশমুন্সি ও অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। কিন্তু দিনের শেষে তাঁদেরও বক্তব্য, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে হাইকম্যান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা-ই শিরোধার্য।

অধীর আজ বলেছেন, ‘‘তৃণমূলকে যে কোনও মূল্যে ঠেকাতে হবে, এটাই বাংলার মানুষের ভাবাবেগ। আমাদের কর্মীরাও তাই বলছেন। এই মনোভাবের কথা রাহুলকে জানাব।’’ কংগ্রেসের একাংশের প্রশ্ন, অতীতে সাড়ে তিন দশক সিপিএমের সঙ্গে যুদ্ধ করে এখন তাদের সঙ্গেই কেন জোটের প্রস্তাব? অধীরের জবাব, ‘‘সিপিএম আমলে আমার মতো অত্যাচারিত কে হয়েছে? আমাকে গুলি করা হয়েছে, জেলে দেওয়া হয়েছে। পালিয়ে গিয়ে ভোটে লড়েছি! তার পরেও বলছি, তৃণমূল যা ক্ষতি করছে, তার কোনও তুলনা নেই!’’ রাহুলের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অধীরদের তৈরি করা রিপোর্টেও বলা হয়েছে, সিপিএম আধিপত্যের রাজনীতি (পলিটিক্স অব ডমিনেশন) করত। কিন্তু তৃণমূল নিকেশ করার রাজনীতির (পলিটিক্স অব এলিমিনেশন) পথে গিয়ে কংগ্রেসের অস্তিত্ব বিলোপ করে দিতে চাইছে!

রাজ্য কংগ্রেস নেতারা জানেন, জোটের প্রশ্নে হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কিন্তু দলে রাহুল জমানায় রাজ্য নেতাদের মতামত ইদানীং প্রাধান্য পাচ্ছে। সেই দিক থেকে দেখলে বাম-সঙ্গের পক্ষেই ঘুঁটি সাজিয়ে ফেলেছেন অধীরেরা। তবে উত্তরবঙ্গের মতো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে বামেদের সঙ্গে (বাম শরিকদের অধিকাংশ আসন যেখানে) কী ভাবে আসন ভাগ হবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘বিভিন্ন বিষয়ে যে সংশয় রয়েছে, তা আলোচনা করে মিটিয়ে নিতেই আজ এক প্রস্ত মহড়া বৈঠক হয়েছে!’’ জোট হলে সে ক্ষেত্রে আসন সমঝোতার প্রশ্নে কোনও ভাবেই ‘নরম অবস্থান’ না নিয়ে দর কষাকষি যে চালাতে হবে, সে বিষয়েও একমত রাজ্য নেতারা।

কংগ্রেসের একটি সূত্রের বক্তব্য, বামেদের সঙ্গে জোটের প্রচেষ্টার দু’টি দিক। একটি তাত্ত্বিক দিক— শাসক দলকে পরাস্ত করতে জোটের প্রয়োজন রয়েছে কি না। আর দ্বিতীয়ত— জোট হলে সিপিএম ও বাম শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা কী ভাবে হবে? কোন স্তর থেকে আলোচনা শুরু হবে? তা ছাড়া, জোটের প্রশ্নে সর্বদাই দু’পক্ষকে এগিয়ে আসতে হয়। সে ক্ষেত্রে দু’দলের কান্ডারিকেই এ বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে। বঙ্গ সিপিএমের তরফে সূর্যকান্ত মিশ্র, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরা প্রকাশ্যেই কংগ্রেসকে জোট-বার্তা দিয়েছেন। তার পরে পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। আজকের বৈঠকে জোট গড়ার এই সব দিকগুলি নিয়েও আলোচনা করেছেন অধীর, প্রদীপবাবু, মানসবাবু, সোমেন মিত্র, দীপা দাশমুন্সি, আব্দুল মান্নান, মহম্মদ সোহরাব, মৌসম বেনজির নূর, আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, অমিতাভ চক্রবর্তী, ওমপ্রকাশ মিশ্রেরা। তাঁদের সঙ্গেই রাহুলের বৈঠকে আমন্ত্রিত শাখা সংগঠনের তিন সভাপতি সুব্রতা দত্ত, অরিন্দম ভট্টাচার্য ও আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়।

বিরোধী শিবিরে জোট-তৎপরতাকে অবশ্য কটাক্ষ করা অব্যাহত রেখেছেন শাসক দলের নেতৃত্ব। তৃণমূলের মুখ্য জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য, ‘‘৩৪ বছরে যারা বাংলাকে ধ্বংস করল, তারা একটা অস্তিত্বহীন দলের সঙ্গে জোটের জন্য লাফাচ্ছে!’’ যা শুনে কংগ্রেসের অমিতাভবাবুর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘অস্তিত্বহীনদের নিয়ে এত মাথাব্যথা কেন?’’ বিধাননগর, রাজারহাটের কর্মী সম্মেলনে আজ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পূর্ণেন্দু বসু, সৌগত রায়েরা অবশ্য বিরোধী জোট নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে কর্মীদের আচরণ সংযত করার বার্তা দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE